সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণে আদালতের বাধ্যবাধকতা আছে। আদালতকে না জানিয়ে এই কোটা বাতিল করা হলে তাতে আদালত অবমাননা হবে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হক। তিনি বলেছেন, ‘৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণে আদালতের আদেশ অগ্রাহ্য করে ভিন্ন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই। এটা করা হলে তা হবে আদালত অবমাননার শামিল।’
বুধবার সচিবালয়ে তথ্য অধিদপ্তরের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
বর্তমানে সরকারি চাকরিতে সংরক্ষিত কোটা ৫৬ শতাংশ। এর মধ্যে বিসিএসে নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৩০ শতাংশ, জেলা ও নারী কোটায় ১০ শতাংশ করে, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় পাঁচ শতাংশ চাকরি সংরক্ষণ করা আছে। এ ৫৫ শতাংশ কোটায় পূরণযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সেক্ষেত্রে এক শতাংশ পদে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়োগের বিধান রয়েছে।
এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটার সুবিধা তাদের সন্তান এবং নাতিপুতিও পেয়ে আসছে। কিন্তু ৯০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে একাত্তরের রণাঙ্গণের যোদ্ধাদের সন্তানদের এই সুবিধার আওতায় আনার পর নানা সময় মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন হয়েছে। এর শুরুটা করে জামায়াত-শিবির অনুসারীরা।
তবে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে কোনো বিশেষ কোটার নাম না তুলে সব মিলিয়ে কোটা ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবিতে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে আন্দোলন শুরু হয়।
আর গত ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন। সে সময় আন্দোলনকারীরা একে স্বাগত জানায়। তবে প্রধানমন্ত্রীর কোটা বাতিলের ঘোষণা কেবল ১১ এপ্রিল নয়, গত ২ মে গণভবনে সংবাদ সম্মেলন এবং সবশেষ গত ২৭ জুন জাতীয় সংসদে তিনি আবারও বলেন, কোটা থাকবে না। তবে কোটা বাতিলের এই সিদ্ধান্ত যে প্রধানমন্ত্রীর পছন্দের নয়, সেটিও তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন নানাভাবে। তার মতে, এতে ক্ষতির মুখে পড়বে জেলা পর্যায়ের ছেলে-মেয়েরা।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর প্রজ্ঞাপন জারি হতে কিছুটা বিলম্ব হওয়ায় আবার অস্থিরতা দেখায় শিক্ষার্থীরা।
এর মধ্যে গত ২৭ জুন কোটা আন্দোলনের নেতা রাশেদ খাঁনের এক ভিডিও বার্তায় ‘আপত্তিকর’বক্তব্য আসার পর পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়। আক্রমণ হয় কোটা আন্দোলনের বেশ কয়েকজন নেতার ওপর। এর মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রকে হাতুড়িপেটাও করা হয়েছে।
এরপর কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন এবং কোটা বাতিল বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার আলোকে সিদ্ধান্ত নিতে গত ২ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে গঠন করা হয় সাত সদস্যের কমিটি। গত রবিবার কমিটির প্রথম বৈঠকে কর্মকৌশল নির্ধারণ হয়েছে। এতে বিদেশে কোটা সংক্রান্ত তথ্য উপাত্ত ও প্রতিবেদন সংগ্রহ করে আবার বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত হয়।
সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা পুনর্মূল্যায়ন চেয়ে চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি একটি রিট করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র ও দুই সাংবাদিক। পরে গত ৫ মার্চ তাদের আবেদন খারিজ করে হাইকোর্ট। রিটটি খারিজের ফলে সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা আগের মতোই থাকছে।
উচ্চ আদালতের রায়ের বরাত দিয়ে মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধা কোটা থেকে পূরণ করার সুযোগ থাকলেও ৩০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা আছে। তাই এ আদেশ অগ্রাহ্য করে বা পাশ কাটিয়ে বা উপেক্ষা করে ভিন্নতর কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটা করা হলে তা আদালত অবমাননার শামিল হবে বলে আমি মনে করি। কোট সংস্কার নিয়ে গঠিত কমিটি এ ব্যাপারে সচেতনতার সঙে্গে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে আমরা আশা করছি।’ এ বিষয়ে আদালতের রায়ের কপি কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
মোজাম্মেল হক বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে যারা উদ্বিগ্ন, তাদের আশ্বস্ত করতে চাই, এ সরকার যেহেতু আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। তাই আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি মুক্তিযোদ্ধা কোটায় হস্তক্ষেপ করা হবে না এবং মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা পরিবার বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী জনগণের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ আছে বলে মনে করি না।’
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘যদি এ আদেশ পরিবর্তন করতে চায়, তাহলে আদালতে আসতে হবে। কারণ, এর বিষয়ে রিভিউ পিটিশন দায়ের করার সুযোগ আছে।’ মুক্তিযোদ্ধা কোটা ছাড়া অনান্য কোটার ক্ষেত্রে কোনো বাধাবাধ্যকতা নেই বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪:৩১:৫৪ ৬৩২ বার পঠিত