পরিবেশ ও চিকিৎসা সেবা নিয়ে নানা তর্কে বিতর্কিত নারায়ণগঞ্জের ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট খানপুর সরকারি হাসপাতালটি এবার নতুন আতঙ্কে রূপ নিয়েছে। দিনে দালাল দৌরাত্ন চলে আসলেও বর্তমানে রাতের আঁধার বাড়লেই শুরু হয় সংঘবদ্ধ চোরদের লাগামহীন তান্ডব।
ফলে রাত হলে চোরের উপস্থিতি হয় খোদ ডাকাতের মতই ! শুধু টাকা কিংবা মোবাইল ফোনই নয়, নবজাতক চুরির উদ্দেশ্যে ভেঙ্গে ফেলে হাসপাতালের জানালাও!
এমন আতঙ্ক নিয়ে পরিপূর্ন চিকিৎসা সেবা গ্রহনের পূর্বেই হাসপাতাল ছেড়ে আসছে প্রসূতি সহ বিভিন্ন রোগে রোগাক্রান্ত অসহায় মানুষেরা। বিশেষ করে নবজাতক নিয়ে শঙ্কায় থাকতে হয় প্রসূতি মায়েদের।
সব জেনেও না জানার মত করে চুপসে রয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এমনকি রোগিরা এসব অভিযোগ মুখ থেকে বার করলে এসব দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাছ থেকে হতে হয় নানা বঞ্চনার শিকার। এমন অভিযোগ হাসপাতালটিতে সেবা নিতে আসা ভুক্তভূগি রোগিদেরই।
সদ্য নবজাতক প্রসব করা রোকেয়া বেগম নামে এক প্রসূতি নারী এই প্রতিবেদককে জানান, ‘সাত মাসে সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ারপর সন্তানের শারীরিক অবস্থা কিছুটা অবনতির দিকে গড়ালে গত ৪দিন আগে নিয়ে আসি খানপুর হাসপাতালে। চিকিৎসকের পরামর্শে দোতলায় শিশু বিভাগে ভর্তি হই। সারা দিন যেমনই হোক, রাতে ঘুমিয়ে থাকাবস্থায় পায়ের কাছে থাকা জানালায় টোকার শব্দ শুনতে পাই। তখন পাশের সিটে থাকা এক রোগি ও তার স্বজনেরা বললেন’, “আপা জানালা খুলবেন না ওরা চোর।”
তিনি বলেন, ‘সকালে উঠে দেখলাম ওই রোগিরই মোবাইল চুরি হলো। এরপর দু’রাতে জানালায় চোরের উপস্থিতি হলো ডাকাতের মত! চোরে রা জানালায় বাহির থেকে টোকাটুকি করছে। একপর্যায়ে জানালার গ্লাসই ভেঙ্গে ফেলল! আমরা চিৎকার করলে চোরেরা কিছুক্ষন সময়ের জন্য নিরব থাকলেও পূনরায় একই ঘটনা ঘটলো। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং নার্সদের জানালাম; তারা বললো “ওসব আমাদের বলে কাজ নেই, ভালো না লাগে তো রাস্তায় গিয়ে আন্দোলন করুন !” ‘নির্বিকার হয়ে আমার স্বামীকে ফোন করে জানালাম। সে হতভম্ব হয়ে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের স্মরনাপন্ন হলেন। তবে, হাসপাতাল নারায়ণগঞ্জ সদর থাকা এলাকায় হওয়ায় সেখান থেকে সদর থানায় যোগাযোগ করা হলো। আশ্চর্য্যরে বিষয় হলো পুলিশ হাসপাতালের গেইট তথা হাসপাতালেই রয়েছে। কিন্তু তা সত্বেও চোরদের এমন ডাকাতি কারবার? যাই হোক, ঘুমিয়ে থাকা কতক পুলিশ সদস্যকে জানালাম বিষয়টি তারা বিরক্ত বোধ করে কিছু একটা বললেন। অতঃপর শুরু হলো পুলিশের নানান বাহানা। একপর্যায়ে ক্ষিপ্ত হলেন আমাদের উপরেই।’
তিনি আরো বলেন, ‘হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে এমন ভায়ানক অভিজ্ঞতার সম্মূখিন হওয়ায় বাধ্য হলাম হাসপাতাল ছাড়তে। আমার মতই পূর্নাঙ্গ চিকিৎসা গ্রহণ না করে হাসপাতাল ছাড়লেন আরো কয়েক জন।’
রোগিদের কাছে এমন ভায়ানক অভিযোগের প্রেক্ষিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ২২:৩৭:১১ ৪৫০ বার পঠিত