আজ জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস। অনুসন্ধান কার্যক্রমে ধীর গতি এবং আবিষ্কৃত মজুদ কমার কারণে গ্যাস আমদানির দিকে ঝুঁকেছে সরকার। ইতোমধ্যে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি শুরু হয়েছে। আগামী বছর থেকে কয়লাও আমদানি হবে। এমন প্রেক্ষাপটে জ্বালানি ব্যবহারে জনগণকে সচেতন করতে ২০১০ সাল থেকে সরকারিভাবে জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস পালন করা হচ্ছে। এ উপলক্ষে জ্বালানি বিভাগ আজ রাজধানীতে একটি সেমিনারের আয়োজন করেছে।
১৯৭৫ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শেল অয়েল কোম্পানির কাছ থেকে ৪৫ লাখ পাউন্ড স্টার্লিং (তখনকার ১৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা) পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্র রাষ্ট্রীয় মালিকানায় কিনে নেন। ক্ষেত্রগুলো হচ্ছে- তিতাস, বাখরাবাদ, রশিদপুর, হবিগঞ্জ ও কৈলাসটিলা। এই গ্যাসক্ষেত্রগুলো দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার বড় ভরসা হয়ে ওঠে। তবে ধীরে ধীরে দেশের গ্যাস খাতে বিদেশি কোম্পানিগুলোর আধিপত্য বেড়েছে। দেশে মোট গ্যাস উৎপাদনের মধ্যে এখন আন্তর্জাতিক তেল গ্যাস কোম্পানির (আইওসি) ৫৯ ভাগ এবং দেশীয় কোম্পানিগুলো ৪১ ভাগ গ্যাস উৎপাদন করছে। দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৩৭০ কোটি ঘনফুটের স্থলে প্রতিদিনের সরবরাহ করা হচ্ছে ২৭০ কোটি ঘনফুট। এ ঘাটতি মেটাতে গ্যাস আমদানি করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে দেশের স্থলভাগে গ্যাসের যে মজুদ আছে তা ২০২১ সালের পর থেকে কমতে শুরু করবে। এছাড়া দেশে গ্যাসের অনুসন্ধান কার্যক্রমও জোরালো না। সমুদ্রেও গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম আশাব্যঞ্জক নয়। ২০১৪ সালে ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ মিটলেও বাংলাদেশ এখনো সমুদ্র সম্পদের বিষয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি।
দেশের মজুদ কয়লার উত্তোলন নিয়েও কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি সরকার। জামালগঞ্জের কয়লা খনি থেকে গ্যাস উত্তোলন সম্ভাবনার একটি জরিপের ফলও নেতিবাচক হয়েছে। সবমিলিয়ে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা অনেকটাই হুমকির মুখে। সরকার ধীরে ধীরে কয়লা ও গ্যাস আমদানির দিকে ঝুঁকছে। এলএনজি আমদানি শুরু হয়েছে। যদিও এখনো পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়নি। আগামী বছরের শুরু থেকে দৈনিক ১০০ কোটি ঘনফুট এলএনজি জাতীয় গ্রিডে দেওয়া হবে। সরকারের পরিকল্পনা ধীরে ধীরে এলএনজির সরবরাহ বাড়ানো হবে। ২০২৫ সালের মধ্যে দিনে ৪০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস এলএনজি থেকে মিলবে। আগামী বছর থেকে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনে আসছে। ২০২১ সালের মধ্যে প্রায় পাঁচ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কয়লা থেকে আসবে। যা ২০৪১-এর মধ্যে ২০ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যাবে। এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা পুরোটাই আমদানি করা হবে। সব মিলিয়ে বলা যায় দেশের জ্বালানি খাত ধীরে ধীরে আমদানি নির্ভর হয়ে পড়বে।
সম্প্রতি বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ডেনমার্কের র্যাম্বল নামের একটি কোম্পানি গ্যাসখাতের একটি খসড়া মাস্টার প্লান তৈরি করছে। এতে বলা হয়েছে- নতুন গ্যাসক্ষেত্র পাওয়া না গেলে ২০২১ সালের পর থেকে দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন কমতে থাকবে। সমুদ্রে গ্যাস উত্তোলন সফল না হলে পুরোপুরি আমদানি করেই দেশে গ্যাসের চাহিদা মেটাতে হবে। ফলে জ্বালানির মূল্য অনেক বেড়ে যাবে। মাস্টার প্লানে আমদানির ক্ষেত্রে এলএনজির পাশাপাশি মিয়ানমার থেকে গ্যাস আমদানি এবং তুর্কমেনিস্তান থেকে আফগানিস্তান-পাকিস্তান-ভারত পর্যন্ত আসা ট্যাপি প্রকল্পের অন্তর্ভুক্তির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. ম. তামিম বলেন, দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে রয়েছে। স্থলভাগে নতুন গ্যাসক্ষেত্র মিলছে না। কয়লা নিয়েও কোনো উদ্যোগ নেই। সমুদ্রই এখন দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার বড় ভরসা হলেও সেখানে অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু হয়নি। সরকার মূলত তাকিয়ে আছে আমদানির দিকে। বিশ্ববাজারে পেট্রোলিয়াম পণ্যের দাম বাড়ছে। তাই আমদানি নির্ভরতা অর্থনীতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
জ্বালানি বিভাগের তথ্য মতে, দেশে আবিষ্কৃত ২৬টি গ্যাসক্ষেত্রে গ্যাসের মজুত ২৭ দশমিক ১২ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) এর মধ্যে ১৪ টিসিএফ গ্যাস ব্যবহৃত হয়েছে। বাকি মজুত আগামী আট থেকে ১০ বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২:৩২:৫৩ ৩৬৩ বার পঠিত