জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সর্বস্তরের ভক্ত-অনুরাগীরা।
সোমবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা জানান কবি পরিবারের সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক প্রতিনিধি ও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক দলের সদস্যরা।
নজরুলের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় দেশ গঠনের আহ্বান ছিল ফুল দিতে আসা প্রতিটি মানুষের। তবে শুধু দিবস কেন্দ্রিক শ্রদ্ধাঞ্জলি নয়, সমাজ ও রাষ্ট্রে নজরুলের চেতনা প্রতিষ্ঠায় সবাইকে কাজ করার আহ্বানও ছিল কবি পরিবারের সদস্যদের।
‘নজরুলের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে হবে’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষ উৎপাটন করে জনগণকে সাথে নিয়ে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় হবে আজকের দিনের শপথ।
সোমবার সকালে জাতীয় কবি নজরুলের ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে কাদের একথা বলেন।
ছাত্রলীগের শ্রদ্ধা
জাতীয় কবির মৃত্যুবার্ষিকীতে তার সমাধিতে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে ছাত্রলীগ। সোমবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত কবির কবরে কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা শ্রদ্ধা জানান।
এরপর ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা কবির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
‘মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই’
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন দুর্গম পথের দুঃসাহসী যাত্রী এবং গভীর নিমগ্ন এক স্রষ্টা। তার সাধনা ছিল মানুষ আর তাদের মুক্তির আকাঙ্ক্ষা। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন এক মূর্তমান বিদ্রোহের প্রতীক।
ধ্রুবতারার মতোই ছিল তার আর্বিভাব। চোখ মেলেই যে সমাজ আর রাষ্ট্র দেখলেন, তা ছিল শ্বাপদসংকুল। তার যুদ্ধটা ছিল দূর্গম ও দীর্ঘ। স্বভাবতই তাকে বিদ্রোহের পথ যেতে হয়েছে। এতে তিনি রক্তাক্ত হয়েছেন। তবে স্থির প্রত্যয়ী উচ্চারণে দ্বিধা করেননি এতটুকু।
মাত্র বাইশ বছর শিল্প সৃষ্টিতে সক্রিয় থাকতে পেরেছিলেন। এই ক্ষুদ্রসময়ে পৌনঃপুনিকভাবে তিনি মানুষের মুক্তির কথাই বলেছেন। তাই এক হাতে বাঁশের বাশরি, আর হাতে রণ-তুর্য এই যুগলবন্ধী যেন অবধারিত ছিল। দ্রোহ আর প্রেম সত্তার নিবিড় যোগ নজরুল কাব্যে স্বতন্ত্র মাত্রা যোগ করেছে।
এ বিদ্রোহী কবি জীবন এবং জগৎ সম্পর্কে ব্যাপকতর যে বোধের দিশা দিয়েছেন, তা এখনো ভালবাসায় পূর্ণ সমৃদ্ধ জীবনের সন্ধান দিতে পারে। বাংলাভাষী মানুষকে তার শরণ নিতে হবেই। তার লেখনী সাম্য আর অসাম্প্রদায়িক চেতনার মর্মবাণী উগ্র সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধের শক্তি যোগায়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেও তার কবিতা ও গান ছিল প্রেরণার উৎস।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ২৪ মে নজরুলকে নাগরিকত্ব দিয়ে কবিকে সপরিবারে এদেশে নিয়ে আসেন। ১৯৭৪ সালে তাকে সম্মানসূচক ডি-লিট উপাধি দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। মৃত্যুর কিছুদিন আগে সাম্যের কবিকে একুশে পদকেও ভূষিত করে রাষ্ট্র।
১৩৮৩ বঙ্গাব্দের ১২ ভাদ্র (১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট) ঢাকার তৎকালীন পিজি হাসপাতালে (বর্তমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
মসজিদের পাশে কবর দেওয়ার জন্য মৃত্যুর আগে কবি গানে গানে বলেছিলেন ‘মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই, যেন গোর থেকে মুয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই’। তার শেষ ইচ্ছানুযায়ীই কবিকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে সমাহিত করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৩:৫৪:৫৯ ২১১ বার পঠিত