কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই গড়ে উঠেছে একের পর এক ইটভাটা, যেখানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে শিশুসহ শত-শত মানুষ। এতে হুমকিতে লোকালয় ও কৃষি। কুষ্টিয়া পরিবেশ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় ২৯টি ইট ভাটা রয়েছে, এর মধ্যে ২৮টি-ই অবৈধ। আর এসব অবৈধ ইটভাটা নষ্ট করছে ২০টি বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ।
এ উপজেলায় নামমাত্র দু-একটি কয়লার ভাটা থাকলেও বাকিসব চলে গাছ পুড়িয়ে, কাটা হয় ফসলি মাটি। কোনো কোনো উদ্যোক্তা কয়লার ভাটা বন্ধ রেখে লাগামহীন চালাচ্ছেন গাছ পোড়ানো ভাটা। ইটের ভাটাতেই বসানো হয়েছে স’মিল কল।
উপজেলার স্বরূপপুর-বাজুডাঙ্গা এলাকায় সরেজমিন ৩টি ইটভাটায় কাঠ পুড়তে দেখা যায়। মজুত করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ কাটা গাছ। এসব ইটভাটা গড়ে তোলা হয়েছে ফসলের মাঠেই।
উপজেলার নুরী ব্রিকসের স্বত্বাধিকারী বজলুর রহমান ওরফে কটা বলেন, ‘আমার কোনো কাগজপত্র নেই। এভাবেই চালিয়ে যাচ্ছি, ব্যবসা চালাতে কোনো সমস্যা হয় না।’
শাদীপুর ফসলের মাঠও এখন ইটভাটার দখলে। এ এলাকায় ইটভাটা পাঁচটি। সব ভাটাতেই স’মিল বসিয়ে গাছ কেটে জ্বালানি তৈরি করা হয়।
আল সালেহ লাইফলাইন ব্রিকসের স্বত্বাধিকারী মামুন জানান, তার দুটি ভাটার একটি কয়লায় চলে, অন্যটি খড়িতে। তার ভাটায় কয়লার মজুত না থাকলেও আছে কাটা গাছের বিশাল মজুত।
বিশ্বাস ব্রিকসের পরিচালক আনোয়ারুল জানান, মালিকদের ঐক্য নেই, যে যার মতো ব্যবসা করছে। ইতিবাচকভাবে পরিবর্তনের বিষয়ে কোনো অভিভাবক নেই যে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় এক মৌসুমে ইট পোড়ানোয় এক লাখ টন কাঠের প্রয়োজন, যার বাজারমূল্য প্রায় ৪০ কোটি টাকা। এখানে বছরে প্রায় ২৫ কোটি পিস ইট উৎপন্ন হয়।
কুষ্টিয়া পরিবেশ অধিদফতরের উপপরিচালক মোহাম্মদ আতাউর রহমান জানিয়েছেন, এ উপজেলায় ২৯টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ২৮টি-ই অবৈধ।
দৌলতপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি দায়িত্বে আসার আগ থেকেই এসব ইটভাটা চলছে। তখন কীভাবে হয়েছে বলতে পারব না। সমস্যা সমাধানে ঊর্ধ্বতনদের নজরদারি প্রয়োজন।’
দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তৌহিদুল হাসান তুহিন বলেন, ইটভাটার কালো ধোঁয়া এজমাসহ ফুসফুসের নানা জটিলতা তৈরি করে। দৌলতপুরে এ ধরনের রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য।
বাংলাদেশ সময়: ১১:০৭:৫৩ ২৫১ বার পঠিত