রবিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২২

ঝিকরগাছায় মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী সেজে ভাতা উত্তোলন এলাকায় বাসির ক্ষোভ

প্রথম পাতা » খুলনা » ঝিকরগাছায় মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী সেজে ভাতা উত্তোলন এলাকায় বাসির ক্ষোভ
রবিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২২



ঝিকরগাছায়  মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী সেজে ভাতা উত্তোলন এলাকায় বাসির ক্ষোভ

সুজন মাহমুদ যশোর প্রতিনিধি : যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা ইউনিয়নের কুলিয়া গ্রামের মৃত মোরশেদ আলীর স্ত্রী আমেনা বেগমের বিরুদ্ধে তার স্বামীর নাম জালিয়াতি করে অন্য মুক্তিযোদ্ধার ভাতা আত্মসাৎ করছে। আর আমেনা বেগমের সন্তান কথিত ডাঃ বিল্লাল হোসেন সেই সার্টিফিকেট ব্যবহার করে হয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের ঝিকরগাছা উপজেলা কমিটির সভাপতি। আদৌও তিনি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং তার মাতাও মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী কি না এটা নিয়ে চলছে জালিয়াতি। অথচ তারা মশিয়ার রহমান নামের আরেকজন মুক্তিযোদ্ধার নাম ব্যবহার করে ২০১৩ সালের জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করে চলেছে বলে এলাকায় অভিযোগ উঠেছে ।
তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায়, উপজেলার পানিসারা ইউনিয়নের কুলিয়া গ্রামের মোরশেদ আলীর স্ত্রী আমেনা বেগম। মোরশেদ আলীর পিতার নামও তারা চাঁদ মন্ডল। আর এই তারা চাঁদ মন্ডলকে পুজি করে নিয়ে পুঁজি করে আমেনা বেগম তার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি কার্ড) এ স্বামীর নাম মোরশেদ মুছে ফেলে সেখানে মৃত মশিয়ার রহমান সংযুক্ত করে মশিয়র রহমানের ওয়ারেশ সেজে ব্যাংক থেকে প্রতিমাসে মুক্তিযোদ্ধাদের নামে বরাদ্দ সরকারি ভাতা উত্তোলন করছে আমেনা বেগম। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা মৃত মশিয়ার রহমানের ভারতীয় তালিকায় নং ৪৭৭৫৩, বেসামরিক গেজেট নং ১৬৪৫। মৃত মোরশেদ আলী ও তার স্ত্রী আমেনা বেগমের বড় ছেলে বিল্লাল হোসেন নিজের আইডি কার্ডে পিতার নাম মোরশেদ মুছে দিয়ে মৃত মশিয়ার রহমান বানিয়ে নিয়ে তিনি এখন মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের ঝিকরগাছা উপজেলা কমিটির সভাপতি।

আমেনা বেগম, যার এনআইডি নং ১৯৬২৪১১২৩৭১৮৬৮৭০২ তে সার্চ করে দেখা যায় সরকারি তথ্য ভান্ডারে তার স্বামীর নাম উল্লেখ রয়েছে মোরশেদ আলী। অথচ তিনি ব্যাংকে একাউন্ট করার সময় যে এনআইডির ফটোকপি জমা দিয়েছেন তাতে তার স্বামীর নামে উল্লেখ রয়েছে মৃত মশিয়ার রহমান। অনুরূপ ভাবে বিল্লাল হেসেন, যার এনআইডি নং ১৯৮২৪১১২৩৭১৯২০৮৬৩ এ সার্চ করে দেখা যায় সরকারি তথ্য ভান্ডারে তার পিতার নাম আছে মোরশেদ আলী। কিন্তু তার মায়ের একাউন্ট করার সময় নমিনি করতে একই এনআইডির ফটোকপি দিয়েছেন তাতে তার পিতার নাম মৃত মশিয়ার রহমান।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কুলিয়া গ্রামের প্রবীণ ব্যাক্তি জানান, আমরা জানি বিল্লালের বাপের নাম মোরশেদ। তাকে আমরা পোড়া মোরশেদ বলে ডাকতাম। তার নাম মশিয়র এটা আমরা কখনও শুনিনি। সে বেচে থাকতেও কোনোদিন আমাদেরকে বলেনি সে মুক্তিযোদ্ধা ছিল। মোরশেদ মারা যাওয়ার অনেক পরে তার ছেলে বিল্লালের কাছে শুনি যে তার বাপ মুক্তিযোদ্ধা ছিলো। কিন্তু বিষয়টি সংবেদনশীল হওয়ায় কেউ কোনো মন্তব্য করিনি। এদিকে সাংবাদিকরা এই বিষয়টি প্রকাশ করতে চলেছে শুনে ধুরন্ধর বিল্লাল হোসেন বিভিন্ন জায়গায় দৌড়ঝাঁপ। তার এবং তার মায়ের এনআইডি কার্ডে পিতা ও স্বামীর নাম পরিবর্তন করার জন্য। ইতিমধ্যে তিনি ঝিকরগাছার একজন সাংবাদিকের মাধ্যমে দেড় লক্ষ টাকার চুক্তিও করেছেন এনআইডি সংশোধনের জন্য বলে শোনা যাচ্ছে। তবে তারা যদি এমন জালিয়াতি করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা ও সরকারি অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে আমেনা বেগমের গ্রামের বাড়ি কুলিয়া গেলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, তার স্বামীর নাম মশিয়ার আর লোকে ডাকতো মোরশেদ বলে। মশিয়ার নামে কোনো ডকুমেন্টস তিনি দেখাতে পারেননি। এসময় তিনি আরও বললেন, এ বিষয়ে সব আমার ছেলে বিল্লাল জানে।
মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের ঝিকরগাছা উপজেলা কমিটির সভাপতি ডাঃ বিল্লাল হোসেন সাথে যোগাযোগ করতে তার গ্রামের বাড়ি, শিওরদাহ বাজারের ফার্মিসীতে গিয়ে দেখা না পেয়ে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
গ্রামের প্রাইমারী স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক আতিয়ার রহমান বলেন, কোনো কাগজেই মশিয়ার নেই। তার সব কাগজে মোরশেদ লেখা আছে। তবে নাম সংশোধনের প্রক্রিয়া চলছে। কয়েকদিনের মধ্যে মোরশেদ মশিয়ার হয়ে যাবে।
মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের খুলনা বিভাগীয় সম্পাদক শাওন রেজা খোকা বলেন, কাগজপত্র অনুযায়ী বিল্লাল হোসেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান নন সেটাতো বাস্তবে দেখছি। আমরা তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করবো।
ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহবুবুল হক বলেন, আমি বিষয়টি দেখলাম। অভিযোগ আকারে পেলে তাদের ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং তদন্ত কমিটির মুখোমুখি হয়ে প্রমাণ করতে হবে যে তারা আসলেই মুক্তিযোদ্ধা মশিয়র রহমানের ওয়ারেশ। প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১:০৮:৪৫   ২৩৫ বার পঠিত