মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এমপি বলেছেন, রাজাকারের আদর্শ ধারণ করে যে মানুষগুলো, ওদের নতুন প্রজন্ম রাজাকারের নতুন ভার্সন। ওদের থেকে সতর্ক থাকতে হবে।
আজ বুধবার দুপুরে পিরোজপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের শহীদ আব্দুর রাজ্জাক-সাঈফ মিজান স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসন আয়োজিত শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশে বসে কারা চিৎকার করে ফেসবুক-ইউটিউবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে বিকৃত করে? কারা বলে মুক্তিযোদ্ধারা ধর্ষক ছিল, ডাকাতি করেছে? ওই প্রজন্ম দেশে-দেশের বাইরে কিন্তু ৭১-এর পরাজিত শক্তি নতুন অধ্যায়ের সৃষ্টি করতে চাচ্ছে।
ওরা মানসিকভাবে রাজাকার, ধর্ষক, খুনি ও সাম্প্রদায়িক। এই গোষ্ঠীর থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। ’
তিনি আরো বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বুদ্ধিজীবী হত্যাকারীদের মন্ত্রী বানিয়ে পুরস্কৃত করেছেন। অন্যদিকে এসব চিহ্নিত রাজাকার ও খুনিদের বিচারের মুখোমুখি করে আদালতের রায় কার্যকর করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ’
‘রাজনীতিতে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে সমালোচনা হতে পারে’ উল্লেখ করে রেজাউল করিম বলেন, ‘আমি মন্ত্রী, আমার সমালোচনা হতে পারে। দলগতভাবে আওয়ামী লীগের সমালোচনা হতে পারে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রতিষ্ঠিত করা, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানিত করা, শহীদদের সম্মানিত করা, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা, শহীদদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা এই জায়গায় যদি আসি তাহলে কিন্তু শেখ হাসিনার বিকল্প নেই। এটা ৫১ বছরের বাংলাদেশে প্রমাণিত। ’
উপস্থিত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তোমরা জানলে তোমাদের মধ্যে দেশপ্রেম সৃষ্টি হবে এবং তোমরা ভবিষ্যতে এ দেশ পরিচালনার জন্য নিজেদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে তৈরি করতে পারবে। ’
মন্ত্রী আরো বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে সকল অপরাধীর বিচারের ব্যবস্থা করেছেন যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের এ দেশের স্বাধীনতাকামী মানুষদের হত্যা করেছে, বর্বর দখলদার বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছে। তিনি শুধু বিচারের রায় কার্যকর করেই ক্ষান্ত হননি, বীরাঙ্গনাদের, যুদ্ধশিশুদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার পথ সুগম করে দিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছে, তাদের সম্মানিত করার, তাদের পরিবার-পরিজনদের সমাজে সচ্ছল করে চলার ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই। ’
সন্তান হারানো মা-বাবার যে বেদনা সেটি একমাত্র শেখ হাসিনাই অনুভব করেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বিভাজিত হলে আমাদের সব অর্জন মলিন হয়ে যেতে পারে। যুদ্ধাপরাধী ও বঙ্গবন্ধুর খুনিরা একই সুতোয় গাঁথা। তাদের দাম্ভিকতা চূর্ণ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ’
তিনি বলেন, ‘আইয়ুব খানের দোসর মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী খান-এ সবুর, শাহ আজিজদের কবর ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রয়েছে। সেখানে স্মৃতিসৌধ করা হয়েছে আর জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের দেওয়া হয়েছে মাটিচাপা। ’
পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ আলোচনাসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান পিপিএম সেবা, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সালমা রহমান হ্যাপী, সিভিল সার্জন ডা. হাসনাত ইউসুফ জ্যাকি, বীর মুক্তিযোদ্ধা গৌতম নারায়ন রায় চৌধুরী।
এ ছাড়া অন্যদের মধ্যে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি অনিরুজ্জামান অনিক, ইমাম সমিতির সভাপতি ফারুক আবদুল্লাহ, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোপাল বসুসহ উপস্থিত ছিলেন আরো অনেকে।
সভা শেষে মন্ত্রী সার্কিট হাউস প্রাঙ্গণে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের কম্বল শীতার্তদের মাঝে বিতরণ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:৩১:২৬ ২৪৬ বার পঠিত