মঙ্গলবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২২

জাতি বিডিআর বিদ্রোহের পুনরাবৃত্তি দেখতে চায় না: প্রধানমন্ত্রী

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » জাতি বিডিআর বিদ্রোহের পুনরাবৃত্তি দেখতে চায় না: প্রধানমন্ত্রী
মঙ্গলবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২২



জাতি বিডিআর বিদ্রোহের পুনরাবৃত্তি দেখতে চায় না: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহে হত্যাযজ্ঞকে দুর্ভাগ্যজনক মন্তব্য করে বলেছেন, জাতি এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখতে চায় না।

মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) সকালে বিজিবি সদর দফতরে বীর-উত্তম আনোয়ার হোসেন প্যারেড গ্রাউন্ডে বিজিবি দিবসের কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান শেষে এ কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কর্মীদের শৃঙ্খলা ও চেইন অব কমান্ড মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সরকার গঠনের মাত্র ৫২ দিনের মাথায় ২০০৯ সালে একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটে (তৎকালীন বিডিআর)। পুরো জাতি এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখতে চায় না।’

প্রধানমন্ত্রী ওই ঘটনায় শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

সরকারপ্রধান বলেন, ‘একটা কথা মাথায় রাখবেন–কখনো শৃঙ্খলার ব্যাঘাত ঘটাবেন না। অর্পিত দায়িত্ব মেনে চলবেন, চেইন অব কমান্ড মেনে চলবেন।’

শৃঙ্খলা বজায় রাখার পাশাপাশি কর্তব্যনিষ্ঠ হওয়ার জন্য তিনি বিজিবি সদস্যদের উদ্দেশে ১৯৭৪ সালের ৫ ডিসেম্বর তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলস-এর সদস্যদের উদ্দেশে দেয়া জাতির পিতার ভাষণের চুম্বকাংশ উদ্ধৃত করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেছিলেন, ‘ইমানের সঙ্গে কাজ কর; সৎপথে থেকো, দেশকে ভালোবাস।’

তিনি বলেন, ‘এই দেশ আমাদের, দেশ যত উন্নত হবে আপনাদের পরিবারই ভালো থাকবে, সুস্থ থাকবে। উন্নত জীবন পাবে, শিক্ষা-দীক্ষা, চিকিৎসা ও কর্মসংস্থানসহ সব ধরনের সুযোগ পাবে। সে কথা সবসময় মনে রাখতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘বর্ডার গার্ড আইন ২০১০ পাসের পর এই বাহিনীকে আমরা আধুনিক ও যুগোপযোগী করে গঠন করেছি। আমার বিশ্বাস আধুনিক সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে তার লক্ষ্য অর্জনে।’

একটি পেশাগত ও সুশৃঙ্খল বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, যেকোনো পেশাদার বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি সুশৃঙ্খল ও দক্ষ বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। বিজিবি সদস্যদের উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য সাতকানিয়ার ‘বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজ’-এর পাশাপাশি চুয়াডাঙ্গায় আরও একটি প্রশিক্ষণ সেন্টার স্থাপনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

জাতির পিতা যেভাবে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন আজ আওয়ামী লীগ সরকার সেই পদক্ষেপই নিয়েছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি গৃহহীন-ভূমিহীনদের বিনা মূল্যে ঘর এবং জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। কারণ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের দেশে একটি মানুষও ভুমিহীন-গৃহহীন থাকবে না, ইনশাল্লাহ। আমরা সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি।”

তিনি বলেন, ‘প্রতিটি মানুষের জন্য একটা ঠিকানা গড়ে দেয়ার পাশাপাশি সবার হাতে আজ মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট সার্ভিস, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ, ফ্রিল্যান্সিং, তরুণ প্রজন্মের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সর্বক্ষেত্রে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে এবং আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। যে দেশকে জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত অবস্থা থেকে গড়ে তুলে স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায়ে রেখে গিয়েছিলেন। আমরা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করে ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপনকালীনই উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এটা আমাদের ধরে রেখে এগিয়ে যেতে হবে। যদিও কোভিড-১৯ মহামারির কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা, তার ওপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং একে কেন্দ্র করে নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার ফলে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। আমাদের দেশে যাতে এই মন্দা না আসে, সে জন্য আমাদেরই তার ব্যবস্থা নিতে হবে। কারো কাছে হাত না পেতে নিজেদের খাদ্য উৎপাদন করে আমরা নিজেরা নিজেদের মতোই চলব, মাথা উঁচু করে চলব।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ কারণেই আমি আহ্বান করেছি এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি পড়ে না থাকে, প্রতিটি ইঞ্চিতে যে যা পারেন তা উৎপাদন করবেন।

প্রতিটি বিওপিতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের সদস্যরা কিছু না কিছু উৎপাদন করায় তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

জাতির পিতার স্বপ্নপূরণের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে ইনশাল্লাহ বাংলাদেশ হবে উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ, স্মার্ট বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ ই-ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করবে।’

প্রধানমন্ত্রী বিজয়ের এই মাসে মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর বিজিবি (তৎকালীন ইপিআর) সৈনিকদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে ইপিআর-এর বেতার কর্মীরা ওয়্যারলেসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বাধীনতার ঘোষণা সমগ্র দেশে প্রচার করেছিল। স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করায় ইপিআরের সুবেদার মেজর শওকত আলীকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নির্মমভাবে হত্যা করে। বিজিবি শহীদদের মধ্যে ২ জন বীরশ্রেষ্ঠ, ৮ জন বীর-উত্তম, ৩২ জন বীরবিক্রম এবং ৭৭ জন বীরপ্রতীক খেতাবে ভূষিত হন। এ ছাড়া এ বাহিনীর ৮১৭ জন সদস্য মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন।

বিজিবি সদস্যদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের ওপর দেশের সীমান্ত রক্ষার মহান দায়িত্ব অর্পিত। সীমান্ত সুরক্ষার পাশাপাশি চোরাচালান রোধ, মাদক ও নারী-শিশু পাচার রোধ, আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমনসহ সীমান্তবর্তী জনগণের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষা করা আপনাদের দায়িত্ব।

এসব দায়িত্ব অত্যন্ত আন্তরিকতা ও দক্ষতার সঙ্গে পালন করে যাওয়ায় তিনি বিজিবি সদস্যদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

জাতির পিতা তার মাত্র ৪৪ মাসের শাসনামলেই ভারতের সঙ্গে চুক্তি করে আমাদের সংবিধান সংশোধন করে সীমান্ত নির্দিষ্ট করে গেলেও ’৭৫-পরবর্তী সরকারগুলো তা বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ না নেয়ায় ছিটমহল বিনিময় হয়নি বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, ’৯৬ সালে সরকার গঠনের পর আমরা এই উদ্যোগ নিই এবং দ্বিতীয়বার যখন সরকারে আসি তখন ভারতীয় পার্লামেন্টে সর্বসম্মতিক্রমে আইন পাসের মাধ্যমে এই সীমান্ত সুনির্দিষ্ট করা হয়। অত্যন্ত আনন্দঘন পরিবেশে আমরা ছিটমহল বিনিময় করে সারা বিশ্বে একট দৃষ্টান্ত স্থাপনে সক্ষম হই, যা অন্য কোনো দেশ কখনো পারেনি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বিজিবির সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিজিবি পুনর্গঠনের আওতায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছে। ফলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ একটি দক্ষ, শক্তিশালী আধুনিক ও ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশ-ভারত পার্বত্য সীমান্তের নিরাপত্তা বৃদ্ধি, দুর্গম এলাকায় বসবাসকারী জনসাধারণের আর্থসামাজিক উন্নয়নের প্রয়োজনে ১ হাজার ৩৬ কিলোমিটার সীমান্ত সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

বর্তমান সরকার সৈনিকদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ধরনের কল্যাণমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, নতুন র‌্যাংক ব্যাজ প্রবর্তন, যোগ্যতার ভিত্তিতে বিভাগীয় অফিসার পদে পদোন্নতি, সীমান্ত ভাতা প্রদান এবং জুনিয়র কর্মকর্তা ও হাবিলদার পদবির সদস্যদের বেতন স্কেল উচ্চ ধাপে উন্নীত করা হয়েছে। এ ছাড়া ২ মাসের বাৎসরিক ছুটি ও অগ্রিম বেতন প্রদান, পারিবারিক রেশন, ৩ বছরের নিচে সন্তানদের পূর্ণ স্কেল রেশন প্রদানসহ বিজিবি সদস্যদের প্রতিবন্ধী সন্তানদের অবসরের পূর্বপর্যন্ত নগদ মূল্যে রেশন প্রদান করা হচ্ছে। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটনির্ভর ভি-স্যাট প্রযুক্তির মাধ্যমে টেলিফোন সুবিধা সম্প্রসারণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে জনবিচ্ছিন্ন বিওপিতে আইপি ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগের উদ্যোগ বাস্তবায়িত হচ্ছে।

তিনি বলেন, ২০০৯ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত ২২টি ব্যাচে সৈনিক পদে মোট ৩৪ হাজার ৩৬১ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ সময় ৩ হাজার ৩৪৪ জনকে বিভিন্ন অসামরিক পদে নিয়োগ দেয়া হয়। ২০১৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বিজিবিতে ৯২২ জন নারী সৈনিক ভর্তি করা হয়েছে।

এদিন তিনি বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ, বিশেষ করে নারী সৈনিকদের কুচকাওয়াজে মুগ্ধতা প্রকাশ করেন।

এর আগে সকালে তিনি বিজিবি সদর দফতরে পৌঁছালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান এবং বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান।

প্রধানমন্ত্রী বিজিবি মহাপরিচালকের সঙ্গে প্যারেড কমান্ডারকে নিয়ে একটি খোলা জিপে করে প্যারেড পরিদর্শন করেন।

পরে তিনি আধা সামরিক বাহিনীর জাতীয় পতাকাবাহী দলের সঙ্গে চারটি কন্টিনজেন্টের বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ প্রত্যক্ষ করেন এবং স্বাগত মঞ্চ থেকে রাষ্ট্রীয় অভিবাদন গ্রহণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত বিজিবি সদস্যদের মধ্যে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বিজিবি পদক, রাষ্ট্রপতি বিজিবি পদক, বিজিবি পদক-সেবা এবং ২০২২ সালের রাষ্ট্রপতি বিজিবি পদক-সেবা বিতরণ করেন।

পরে তিনি বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করেন। তিনি ‘বিজিবি দিবস-২০২২’-এর বিশেষ দরবার অনুষ্ঠানেও অংশগ্রহণ করেন। সূত্র বাসস।

বাংলাদেশ সময়: ১৬:৩২:৪৭   ২৯০ বার পঠিত