রবিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২২

যানজটের শহরে শত কিলোমিটার গতিতে ছুটবে মেট্রোরেল

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » যানজটের শহরে শত কিলোমিটার গতিতে ছুটবে মেট্রোরেল
রবিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২২



যানজটের শহরে শত কিলোমিটার গতিতে ছুটবে মেট্রোরেল

আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর এবং বিদ্যুৎচালিত মেট্রোরেল এবার বাংলাদেশের গণপরিবহনে যুক্ত হচ্ছে। শহরবাসীকে যানজট মুক্ত করতে এ রেল চলবে ১০০ কিলোমিটার গতিতে। ১০ কিলোমিটার পথ পারি দিবে মাত্র ২০ মিনিটে।

আগামী ২৮ ডিসেম্বর মেট্রোরেলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওইদিন রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে উপস্থিত থেকে মেট্রোরেলের উদ্বোধন করবেন তিনি। এরপর টিকেট কেটে প্রথম যাত্রী হিসেবে মেট্রোরেলে চড়বেন তিনি।

উদ্বোধনের পর দিন অর্থাৎ ২৯ ডিসেম্বর থেকে মেট্রোরেলে চড়তে পারবেন সাধারণ যাত্রীরা। প্রথমদিকে, দৈনিক চার ঘণ্টা করে মেট্রোরেল চলবে। প্রথমদিকে দিনের কোন চার ঘণ্টা মেট্রোরেল চলবে, সেটি এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। তবে যাত্রীর চাপ মাথায় রেখেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

১০ সেট রেল নিয়ে যাত্রা শুরু করবে মেট্রোরেল। প্রতি সেটে বগি থাকবে ৬টি। আগামী বছর ২৪ সেট রেল নিয়ে কমলাপুর পর্যন্ত পুরোদমে চলবে দেশের প্রথম উড়াল রেল।

উন্নত বিশ্বের মতো তৈরি করা হচ্ছে মেট্রোরেলের স্টেশন প্লাজা। প্রস্তুত লাল সবুজে রাঙানো মেট্রোরেলের আইকনিক স্টেশনও। জাপানের আদলে তৈরি হচ্ছে এসব স্টেশন। নান্দনিক এসব স্টেশনে থাকছে যাত্রীদের অত্যাধুনিক সেবার সকল সুবিধা। স্থায়ী পাশ ব্যবহারকারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা দেয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে কর্তৃপক্ষের।

উত্তরার-দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার এবং দিয়াবাড়ী-আগারগাঁও অংশ ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার মেট্রোরেলের পথ। মোট ১৭টি স্টেশন থাকবে মেট্রোরেলে।

এদিকে যাত্রীদের জন্য স্টেশনগুলোতে থাকছে বিপণিবিতান, সময় কাটানোর হোটেল, রেস্টেুরেন্ট, কফি সপ ও বিনোদন কেন্দ্র। অসুস্থ এবং প্রতিবন্ধীদের উঠা-নামার জন্য থাকছে লিফট, সাথে এস্কেলেটরও। মেট্রো ভ্রমণের জন্য থাকছে স্থায়ী ও অস্থায়ী দুই ধরনের র‌্যাপিড পাস।

তবে যাত্রীদের সামর্থ বিবেচনায় মেট্রোরেলের ভাড়া নির্ধারণের দাবি ওঠেছে। মেট্রোরেলের এক স্টেশন পার হতে সর্বনিম্ন ভাড়া হতে পারে ২০ টাকা। আর উত্তরা থেকে মতিঝিল যেতে যাত্রীদের ভাড়া গুনতে হবে অন্তত ১০০ টাকা। তবে ভাড়া নিয়ে এখনই মুখ খুলতে নারাজ কর্তৃপক্ষ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যাত্রীদের সামর্থ বিবেচনায় ভাড়া নির্ধারণ না করলে প্রকল্পের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হবে না।

গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল হোক বলেন, এক কিলোমিটার পরপর স্টেশন, ১০০ কিলোমিটারে কীভাবে চলবে? চলার তো সুযোগ নেই। কিছুক্ষণ পরপর নামতে হবে। একসাথে অনেক মানুষ মেট্রোরেলে উঠবে এবং নামবে। এর জন্য ফুটপাতও ডাবল করা লাগে।

ব্যয় মেটাতে ভাড়া না বাড়িয়ে বিকল্প আয়ের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। নয়তো প্রকল্পের উদ্দেশ্য লক্ষ্যচ্যুত হতে পারে বলে মনে করেন তারা।

মেট্রোরেলের স্টেশন নির্মাণ প্রায় শেষ পর্যায়ে হলেও নতুন জটিলতা তৈরি করেছে ল্যান্ডিং স্টেশন নিয়ে। ওঠা-নামার সিঁড়ি, লিফট আর এস্কেলেটর নামানো নিয়ে নগর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঠাণ্ডা লড়াই চললেও, জটিলতা কেটেছে বলে দাবি মেট্রো কর্তৃপক্ষের। যদিও জমি অধিগ্রহণের অর্থ না পেলে জায়গা ছাড়বে না বলে জানান ভবন মালিকরা।

তথ্যমতে, মেট্রোরেলের সিঁড়ি আর লিফট কোথায় নামবে তা ঠিক না করেই বানানো হয় স্টেশন। পল্লবী, কাজীপাড়া আর শেওড়াপাড়ায় ল্যান্ডিং স্টেশনের জন্য জায়গা নির্ধারিতই ছিল না। মেট্রো কর্তৃপক্ষ ফুটপাথে সিঁড়ি নামানোর সিদ্ধান্ত নিলে নগর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিরোধ শুরু হয়।

রাজধানীর আট ফুট দৈর্ঘ্যের ফুটপাতের অর্ধেকটা বহু আগেই প্রভাবশালীদের দখলে চলে গেছে। আর এখন মেট্রোর সাত ফুট সিঁড়ি নামলে পথচলাই অসম্ভব হয়ে পড়বে। এ নিয়ে অনেক জলঘোলার পর অবশেষে জটিলতার বরফ গলতে শুরু করেছে বলে জানান প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক।

এদিকে জমি অধিগ্রহণ করে সিঁড়ি নির্মাণের কথা বলা হলেও, গেল কয়েক মাসে মাপজোক ছাড়া তেমন অগ্রগতি নেই বলে জানান জমির মালিকরা। আবার অধিগ্রহণ হলে ভবন আর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় অনেকে।

গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ শামসুল হক বলছেন, অদক্ষতার কারণেই মেট্রোরেল প্রকল্পে ব্যয় বেড়েছে।

তারপরও সব জটিলতা কাটিয়ে মেট্রোরেল চালু হলে নগরবাসীর যাতায়াতের দুর্ভোগ কমবে বলে আশা প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের।

এ মেট্রোরেল নির্মাণ ব্যয়ের মতোই রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার খরচও অনেক। রেলপথ পরিচালনায় দৈনিক ব্যয় হবে প্রায় আড়াই কোটি টাকা। বছরে হাজার কোটির কাছাকাছি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেগা প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার বিশাল ব্যয়ের বোঝা যাত্রীদের ঘাড়ে চাপালে প্রকল্পের উদ্দেশ্য সফল হবে না। তাছাড়া টিকিট বিক্রির টাকায় দৈনিক রক্ষণাবেক্ষণের খরচও উঠানো কঠিন। আর ভাড়া বেশি নিলে যাত্রীরা মুখ ফেরাতে পারে, তাতে জলে পরতে পারে হাজার কোটির বিনিয়োগ।

গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ (বুয়েট) শামসুল হক বলছেন, আমাদের খরচ কেন বিশ্ব রেকর্ড করছে, গণপরিবহনের ভাড়া কেন অন্যান্য দেশ থেকে বেশি হয়ে যাচ্ছে, যেখানে রাইডারশিপের কমতি নেই। মূলত, অনভিজ্ঞ লোকদের এসব কাজ দেওয়ার কারণেই মেট্রোরেলসহ বড় বড় প্রকল্পগুলো হোঁচট খাচ্ছে।

তবে বিশাল ব্যয় মেটাতে বিকল্প খাত থেকে আয়ের চিন্তা করছে কর্তৃপক্ষ। বাড়তি আয়ের জন্য স্টেশনে বিপণিবিতান, হোটেল, স্টেশন প্লাজা ও বিনোদন কেন্দ্রসহ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান খোলার পরিকল্পনা রয়েছে।

কর্তৃপক্ষের দাবি, ব্যয় সমন্বয় করতে পারলে ভর্তুকি ছাড়া প্রথম থেকেই নিজের পায়ে দাঁড়াতে সক্ষম হবে দেশের প্রথম উড়াল রেল প্রকল্প।

বাংলাদেশ সময়: ১২:১৬:৪৩   ১৮৪ বার পঠিত