প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ যখন উন্নয়নের মডেলে পরিণত হয়ে উন্নত দেশ হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখনই দেশে-বিদেশে আবার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। দেশের জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে যে কোন ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে।
সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণ সম্পর্কে আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে আজ সরকারি দলের সদস্যরা এ কথা বলেন। তারা বলেন, রাষ্ট্রপতির ভাষণে দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও গণতন্ত্রের চর্চার একটি চিত্র উঠে এসেছে। অপূর্ব সুন্দর এই ভাষণের জন্য তারা রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানান।
গত ৫ জানুয়ারি সংবিধান অনুযায়ি বছরের প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিনে সংসদে রাষ্ট্রপতি এ ভাষণ দেন। রীতি অনুযায়ি এ ভাষণ সম্পর্কে চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী ধন্যবাদ প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এ প্রস্তাবটি সমর্থন করেন সরকারি দলের সদস্য শহীদুজ্জামান সরকার।
ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনার তৃতীয় দিনে আজ অংশ নেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, মৎস ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। সরকারি দলের হাবিবে মিল্লাত, নারায়ন চন্দ্র চন্দ, আবু জাহির, আবদুস সোবহান মিঞা, হাবিবুর রহমান, গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার এবং নার্গিস রহমান।
আলোচনায় অংশ নিয়ে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন এখন সারা বিশে^র মানুষ অবাক হয়ে দেখছে। পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলি ট্যানেল, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে বিএনপি-জামাত নানামুখি ষড়যন্ত্র করছে। বিএনপির সংসদ সদস্যরা সংসদ থেকে বেরিয়ে গিয়ে তারা এখন ইউটিউব’র মতো একটি মিথ্যা তথ্য যন্ত্রের আশ্রয় নিয়েছে। বিএনপি যখন দেখছে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে পারবে না, তখন তারা বিদেশীদের কাছে ধরনা দিচ্ছে।
তিনি বলেন, ভূমি ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক সংস্কার করা হয়েছে। মানুষ এখন ঘরে বসে ভূমি কর পরিশোধ ও মিউটেশনসহ অনেক কাজ করতে পারছে। ভূমি বন্দোবস্ত দেয়ার ক্ষেত্রেও ব্যাপক সংস্কার করা হয়েছে। এছাড়া ভূমি অপরাধ আইন, ভূমি ব্যবহার আইন, ভূমি দখলস্বত্ত আইন নিয়ে কাজ চলছে। শিগগিরই এগুলো সংসদে নিয়ে আসা হবে।
মৎস ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলছে। একটা সময় ছিল ভারত, মায়ানমারের দিকে তাকিয়ে থাকতে হতো। সেখান থেকে পশু না আসলে দেশে কোরবানি হবে না। দেশের প্রাণী সম্পদ উৎপাদন এমনভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে যে আমরা এখন বিদেশে মাংস রপ্তানী করছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় এখন আমরা বিশে^র প্রায় ৫০টি দেশে মাছ রপ্তানী করছি। ডিম উৎপাদনেও আমাদের স্বয়ংসম্পূর্ণতা এসেছে। দুধ উৎপাদনেও আমরা শিগগিরই স্বয়ংসম্পূর্ণ হবো।
তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণে বর্তমান সরকারের বিগত ১৪ বছরের কৃষি, শিক্ষা, বাণিজ্য, কর্মসংস্থান, অর্থনৈতিক ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন।
তিনি বলেন, ’৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর ২১ বছর জিয়াউর রহমান, এরশাদ, খালেদা জিয়ার সরকারের সময়ে বাংলাদেশের উন্নয়নতো হয়ই নি, বরং বাংলাদেশ পেছনের দিকে চলে গিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশের পথ হারিয়ে একটি দিকভ্রান্ত, পথভ্রষ্ট রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছিল। ১৯৯৬ সালের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে দেশ খাদ্যে স্বয়ংস্পূর্ণ হয়েছে, গঙ্গার পানির ন্যায্য হিৎসা পেয়েছি, পার্বত্য শান্তিচুক্তি হয়েছে এবং দেশের প্রান্তিক জনগোষ্টী মেবাইল ব্যবহারের সুযোগ পেয়েছে, ল্যাপটপ, কম্পিউটার ব্যবহারের সুযোগ পেয়েছে। এরপর ২০০১ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত অগণতান্ত্রিক, দখলদার সরকার আমাদের বাংলাদেশকে দুর্নীতিতে পাঁচ পাাঁচবার চ্যাম্পিয়ন করে খালেদা জিয়ার কুপুত্র তারেক জিয়া এদেশে হাওয়া ভবন তৈরি করে দেশকে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ আর নৈরাজ্যের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছে। সেই দুর্নীতিগ্রস্ত বাংলাদেশকে প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়ের অনুপ্রেরণায় জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে ঘোষণা করেন ২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে একটি ডিজিটাল দেশে পরিণত করবেন। তখনও অনেকে সন্দেহ পোষণ করেছিল, ঠাট্টা তামাশা করেছিল। তাদের সন্দেহকে ভুল প্রমানিত করে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে একটি প্রযুক্তি নির্ভর ডিজিটাল বাংলাদেশের কাতারে নিয়ে গিয়ে বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল ডিজিটাল রাষ্ট্রের কাতারে দাঁড় করিয়েছেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, এখন চারটি স্তম্ভের উপর ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যেখানে সাড়ে ৬ লাখ ফ্রিল্যান্সার তৈরি হচ্ছে, আইসিটি সেক্টর থেকে প্রতি বছর দেড় বিলয়ন ডলার আয় হচ্ছে, দুই হাজারের বেশি সার্ভিস ডিজিটাল হয়েছে, সারাদেশে ১৩ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ কাজে লাগিয়ে তাদের দৈনন্দিন সকল লেনদেন, ব্যবসা-বাণিজ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এমনকি বিচারিক কার্যক্রম পর্যন্ত ডিজিটাল মাধ্যমে করছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের এই অর্জনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সজিব ওয়াজেদ জয়ের অনুপ্রেরণায় ২০৪১ সাল নাগাদ একটি উন্নত, আধুনিক, সাশ্রয়ী, বুদ্ধিদীপ্ত, জ্ঞানভিত্তিক উদ্ভাবনী স্মার্ট বাংলাদেশের রূপকল্প তরুণ প্রজন্মের সামনে দিয়েছেন।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী তার মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সাফল্য তুলে ধরে বলেন, গত বছর বিমান ৪শ’ ৩৬ কোটি টাকা লাভ করেছে। গত ছয় মাসে বাংলাদেশ পর্যটর কর্পোরেশন ৬ হাজার ৪২০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা আয় করেছে এবং সমস্ত বেতনসহ অন্যান্য খরচ ছাড়া নীট লাভ হয়েছে ৭৭৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে বিএনপি’র দাবির প্রেক্ষিতে সরকারি দলের সদস্যরা বলেন, এটা আর কখনো হবে না। সংবিধান অনুযায়ি তা আর সম্ভব নয়। এছাড়া ২০০১ সাল মার্কা নির্বাচন আর দেশের মাটিতে হতে দেয়া হবেনা।
তারা বলেন, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বিএনপির জন্ম। ষড়যন্ত্র এদের মূলনীতি। তাই বার বার এরা স্বাধীনতা আর দেশ বিরোধী শক্তির সাথে হাত মিলিয়ে ষড়যন্ত্র করেছে। এবারো আবার তা করছে। এ বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:০১:৩৭ ২১১ বার পঠিত