শনিবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৩

পান চাষে সফল ছয়ঘরিয়ার চাষিরা

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » পান চাষে সফল ছয়ঘরিয়ার চাষিরা
শনিবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৩



পান চাষে সফল ছয়ঘরিয়ার চাষিরা

মোস্তাফিজুর রহমান রংপুর প্রতিনিধ : গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার একটি গ্রামের নাম ছয়ঘরিয়া। এটি কঞ্চিবাড়ি ইউনিয়নের একটি জনবহুল গ্রাম। গ্রামটির গোড়াপত্তনের সময় মাত্র ৬টি পরিবার নিয়ে এই গ্রামের পথচলার সূচনা হয়। এই ছয় পরিবারের নামানুসারে এই গ্রামের নাম হয় ‘ছয়ঘরিয়া।’ বর্তমানে এ গ্রামে ১ হাজার পরিবারের বসবাস। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে তিনশ পরিবারই পানের চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। প্রায় অর্ধশতাধিক বছর ধরে এ গ্রামে পান চাষ হয়ে আসছে। পান চাষই এ গ্রামের পরিবারগুলোর উপার্জনের প্রধান উপায়।
ছয়ঘরিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামটির চারপাশে যেদিকে চোখ যায়, কেবলই পানের বরজ। কৃষকরা পানের বরজের পরিচর্যা করছেন, বরজ থেকে পান সংগ্রহ করে বাড়ির উঠানে এনে স্তূপ করে রাখছেন। সেখানে পরিবারের সদস্যরা মিলে পান বাছাই করে আলাদা করে রাখছেন। গ্রামটিতে বর্তমানে ৩’শ ৫০ টি পানের বরজ রয়েছে।
জানা যায়, উঁচু জমিতে পানের আবাদ করতে হয়। জমি তৈরির পর চারদিকে বেড়া ও উপরে ছাউনি দিতে হবে। তারপরে পানের গাছ (পর) রোপন করতে হয়। পানগাছ উপরে বেয়ে উঠতে মাস খানেক পর শলা দিতে হবে। ৫০-৬০ দিনের মধ্যে পান বিক্রি শুরু হয়। পরিচর্যা ভালো হলে বরজটি একটানা ৮-১০ বছর রাখা যায়। খরচ যা হবার তা শুরুতে হয়। পরে আর তেমন কোনো খরচ লাগে না। সে কারণে পান চাষ বেশ লাভ জনক।
স্থানীয়রা জানান, ছয়ঘরিয়া গ্রামটিতে ভোটার সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৭’শ। পরিবার আছে প্রায় ১ হাজার। আর ছোট-বড় সবমিলে পানের বরজ আছে ৩’শ ৫০ টি। ১৯৯৮ সালের আগ পর্যন্ত এ এলাকায় দেশি পানের চাষ হতো। কিন্তু প্রতিযোগিতার বাজারে সেই পান টিকতে পারেনি। সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলো এলাকায় নদী ভাঙ্গন। আর এ দুই কারণে টানা পাঁচ বছর পান চাষ হয়নি এই এলাকায়। পরে ২০০৩ সালের দিকে তালতলি ও বিক্রমপুরি এ দুই জাতের পান দিয়ে আবারও পান চাষ শুরু। পরে সেটি বাণিজ্যিকরুপ নেয়। তালতলি পানের পর সংগ্রহ করা হয় রাজশাহী জেলার দুর্গাপুর উপজেলার মোহনপুর এলাকা থেকে। আর বিক্রমপুরি পানের পর সংগ্রহ করা হয় মুন্সিগঞ্জ এলাকা থেকে। এলাকার চাহিদা মিটিয়ে এ পান এখন রংপুর, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, বগুড়া, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে।
পান চাষী মো. লাল মিয়া (৬০) বলেন, ‘এ এলাকায় কবে থেকে এ আবাদ শুরু হয়েছে জানি না। তবে দাদার আমল থেকে দেখে আসছি। নিজেও করেছি তবে কম। এবারে মাত্র ৫ কাঠা জমিতে করেছি। মাটি, বাঁশ, কাশিয়া ও জুনসহ সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। কাজের লোকও পাওয়া যায় না। সে কারণে পান চাষ কমে দিয়েছি। মেয়ে দুটিকে বিয়ে দিয়েছি। বড় ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ছোট ছেলে স্থানীয় এক কলেজে পড়ছে। ছেলে দুটোর গতি হলেই এসব ছেড়ে দিবো ভাবছি।’
একই গ্রামের মোছা. মমিনা বেওয়ার (৫০) সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘কয়েক বছর আগে স্বামী মারা গেছে। পান বিক্রি করেই মেয়ে দুজনের বিয়ে দিয়েছি। বড় ছেলে দিনাজপুর হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মেজো ছেলে গাইবান্ধা সরকারি কলেজে অনার্স ও ছোট ছেলে এবার এসএসসি দিয়েছে। বসতবাড়িসহ মোট জমি ৪০ শতাংশ। এরমধ্যে ১৭ শতাংশে পান লাগিয়েছি। সপ্তাহে এক গাদি করে পান তোলা যায়। বিক্রি হয় ৪-৫ হাজার টাকা। তবে বর্ষাকালে আরও বেশি পান তোলা যায়। মূলত পান বিক্রির অর্থ দিয়েই সব চলছে।’
আরেক পান চাষী আমজাদ হোসেন বলেন, পানের বরজ থেকে সারা বছরই পান সংগ্রহ করা যায়। তবে শীতকালে তুলনামূলক কম পান উৎপাদন হয়। কারণ শীতকালে পান পাতা বাড়ে কম। এসময় উৎপাদন কম হলেও বাজারে পানের দাম থাকে বেশি।’
পান চাষীদের অভিযোগ, কৃষি বিভাগের কাউকে তারা চেনেন না। প্রয়োজনে ফোন করলেও তাদের দেখা মেলে না। পানের বরজে সবচাইতে বেশি প্রয়োজনীয় সারটি হচ্ছে দেশি টিএসপি। সেই টিএসপি সারও পাওয়া যায়না। পান চাষ টিকে রাখতে হলে টিএসপি সারের দাম কমানোসহ পর্যাপ্ত সরবরাহের ব্যবস্থা করার দাবি পান চাষীদের।
স্থানীয় উজান তেওড়া টিইউএম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নুরুন্নবী সরকার বলেন, পান চাষ করেই ছয়ঘরিয়া গ্রামের মানুষরা স্বাবলম্বী হয়েছে। এই পান স্থানীয় বাজারের চাহিদা পূরণ করে জেলার বাহিরেও যায়। পান চাষের আবাদ ধরে রাখলেই পিছনে আর ফিরে তাকাতে হবে না ছয়ঘরিয়া বাসীকে।’
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. রাশিদুল কবির বলেন, ‘দিন দিন এ উপজেলার পান চাষ বাড়ছে। অন্যান্য ফসল আবাদের তুলনায় পান চাষ লাভজনক। তাই কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আমরা কৃষকদের উৎসাহিত করে থাকি। পানের ফলন ভালো করার জন্য আমাদের মাঠ কর্মীরা সার্বক্ষণিক কৃষকদের সহযোগিতাও করে থাকেন।’

বাংলাদেশ সময়: ১৪:৫৭:১৪   ২০৯ বার পঠিত