বিশ্ব চলচ্চিত্রের ইতিহাসে তুমুল আলোচিত সিনেমা ‘টাইটানিক’ এখনো মানুষের মাঝে জনপ্রিয়। সিনেমাটি পরিচালনা করেছিলেন হলিউডের বিখ্যাত পরিচালক জেমস ক্যামেরন। এই সিনেমায় অভিনয় করে বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হয়েছেন কেট উইন্সলেট, লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও।
‘টাইটানিক’ সিনেমা মুক্তির ২৫ বছর পরে দর্শকরা যেটা নিয়ে প্রশ্ন করছেন, তা হলো হলিউডের অন্যতম সেরা ছবি ‘টাইটানিক’ সিনেমার সমাপ্তি বা শেষ দৃশ্য মোটেও পছন্দ হয়নি দর্শকদের। জ্যাক ও রোজের সমুদ্রের মতো গভীর ভালোবাসার মধ্যে জাহাজ ডুবির নির্মমতা নেমে আসলেও, রোজকে বাঁচিয়ে রেখে জ্যাকের ঠান্ডা পানিতে ডুবে মরে যাওয়াকে মেনে নিতে পারেননি জেমস ক্যামেরনের ভক্ত এবং সাধারণ দর্শকরা।
তাই গত ২৫ বছর ধরে জেমস ক্যামেরনকে তার ভক্ত এবং সিনেমার দর্শকদের শোনাতে হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ব্যাখ্যা। সবার প্রশ্ন ছিল, কীভাবে জ্যাক এবং রোজ দুজনকেই সিনেমায় শেষ পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখা যেত? পরিচালক জেমস ক্যামেরন তার টাইটানিক সিনেমায় দেখিয়েছিলেন আটলান্টিক মহাসাগরের হিমশীতল পানিতে একটি কাঠের দরজার ওপর শুয়ে নিজের জীবন বাঁচিয়েছে রোজ।
অপরদিকে ঠান্ডা হিমশীতল পানিতে তার শরীরের অধিকাংশ অংশ ডুবে থাকায় ঠান্ডায় জমে গিয়ে প্রাণ হারায় জ্যাক। তবে দর্শকরা এই সিনেমায় ব্যাপারটি নিয়ে বিভিন্ন বিকল্প উপায় খুঁজে দেখিয়েছেন।
‘দ্য সান মিথবাস্টার’ শো’র মাধ্যমে দেখানো হয়েছে যে, দরজার নিচে রাখা নিজেদের লাইফ জ্যাকেট দিয়ে রাখলেই দরজাটি ভাসিয়ে রাখতে পারতেন জ্যাক এবং রোজ। একটা পর্যায়ে দুজনেই দরজায় উঠে তাদের প্রাণ রক্ষা করতে পারতেন।
সমালোচনা এবং আলোচনা নিয়েই যার পথচলা পরিচালক অবশেষে ২৫ বছর পর সেই দৃশ্য নিয়ে মুখ খুলেছেন।
পরিচালক জেমস ক্যামেরন গণমাধ্যমে বলেন, ‘যে তিনি ‘বৈজ্ঞানিকভাবে’ প্রমাণ করেছেন যে জ্যাক এবং রোজ দুজনেই বেঁচে থাকতে পারত না। সিনেমার গল্পের প্রয়োজনে তাদের দুজনের একজনকে মরতেই হতো। সিনেমার ওই কাঠের দরজার দৃশ্যটিকে বিশ্বাসযোগ্য করতে তিনি বৈজ্ঞানিকভাবে গবেষণা করেছেন এবং সফল হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ফরেনসিক বিশ্লেষণ এবং একজন হাইপোথার্মিয়া বিশেষজ্ঞকে সঙ্গে নিয়ে গবেষণা চালিয়েছি। আমরা কেট ও ডিক্যাপ্রিওর সমান শারীরিক কাঠামোর দুজন ডেমি স্টান্টম্যান নিয়ে তাদের সারা শরীরে সেন্সর লাগিয়ে বরফশীতল পানিতে রাখি এবং দেখার চেষ্টা করি যে তারা অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় তাদের নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে পারে কিনা।
গবেষণার ফলাফল হিসেবে যা পেয়েছি তা হলো, সম্ভব নয়। জ্যাক এবং রোজ দুজন থেকে শুধুমাত্র একজনই প্রাণে বাঁচতে পারতো। জেমস ক্যামেরনের ঐতিহাসিক এই গবেষণার ফলাফল সামনে আসছে ফেব্রুয়ারি মাসে। এটি ন্যাশনাল জিওগ্রাফি চ্যানেলে প্রতিবেদন আকারে দেখানো হবে।’
জেমস ক্যামেরনের মতে, সিনোমর গল্পের প্রয়োজনে জ্যাককে মরতেই হতো। এটা অনেকটা রোমিও এবং জুলিয়েটের প্রেম কাহিনির মতো। আর ‘টাইটানিক’ হলো প্রেম-ভালোবাসা, বিচ্ছেদ ও নৈতিকতার সিনেমা। ত্যাগ বা বিচ্ছেদের মাধ্যমেই ভালোবাসার সঠিক পরিমাপ করা যায়।
প্রসঙ্গত, সেই নস্টালজিককে নতুন করে জাগিয়ে দিতে ও সিনেমাটির ২৫ বছর পূর্তিতে আবারও ১০ ফেব্রুয়ারি ফোর-কে ভার্সনে টাইটানিক মুক্তি দেওয়া হবে সারাবিশ্বে। এমনটাই জানিয়েছে প্রযোজনা সংস্থা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:৩২:৫৬ ১৬৭ বার পঠিত