বৃহস্পতিবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

বাংলাদেশ এখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দোরগোড়ায়

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » বাংলাদেশ এখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দোরগোড়ায়
বৃহস্পতিবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৩



বাংলাদেশ এখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দোরগোড়ায়

বিগত চৌদ্দ বছরে সর্বক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনার ফলে বাংলাদেশ এখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে।
আজ সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণ সম্পর্কে আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ সদস্যরা বলেন, ‘গত চৌদ্দ বছর ধরে বর্তমান সরকারের অবকাঠামো ও সামাজিক নিরাপত্তায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনার ফলে বাংলাদেশ এখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে’।
গত ৫ জানুয়ারি সংবিধান অনুযায়ি বছরের প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিনে সংসদে রাষ্ট্রপতি এ ভাষণ দেন। রীতি অনুযায়ি এ ভাষণ সম্পর্কে চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী ধন্যবাদ প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এ প্রস্তাবটি সমর্থন করেন সরকারি দলের সদস্য শহীদুজ্জামান সরকার।
ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনার ১৮তম দিনে আজ অংশ নেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, সরকারি দলের সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ, নূর মোহাম্মদ, বীরেন শিকদার, আলহাজ্ব মো. দবিরুল ইসলাম, মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, মো. আছলাম হোসেন সওদাগর, মো. হাবিব হাসান, খান আহমেদ শুভ এবং শবনম জাহান।
তারা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়ন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানী, যোগাযোগ, আর্থ-সামাজিক, শিক্ষা, যুব ও ক্রীড়া, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি)সহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড তুলে ধরেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সরকারের শেষ সময়ে কৃষি উৎপাদন ২ কোটি ৬৭ লাখ ৫৮ হাজার মেট্রিক টন রেখে গিয়েছিল। বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর এটা কমে ২ কোটি ৫৪ লাখ মেট্রিক টনে উপনীত হয়। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ১৮ লাখ ২৭ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতার গোডাউন রেখে এসেছিলেন। বিএনপি-জামাত ক্ষমতায় আসার পর একটি গোডাউনও নির্মাণ করেনি। বরং ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ধারণ ক্ষমতা ২১ লাখ ৯৭ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হয়। জুন এবং নভেম্বরে আরও ৮টি সাইলো নিমাণ হবে। তখন ধারণ ক্ষমতা দাঁড়াবে ২৬ হাজার ৩২২ মেট্রিক টন।
তিনি বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বিএনপির সময় সর্বোচ্চ মজুদ ছিল ৬ লাখ ৮৪ হাজার ৭১৯ মেট্রিক টন। আর বর্তমানে সর্ববৃহৎ মজুদ ১৯ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন। উৎপাদনের কথা যদি ধরি, তাদের সময় সর্বোচ্চ উৎপাদন ছিল ২ লাখ ৬৪ হাজার মেট্রিক টন। আর এখন আমাদের কৃষিতে উৎপাদন ৪ কোটি ৫৮ লাখ ৯৬ হাজার মেট্রিক টন। উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। তাদের সময় দেশে মঙ্গা ছিল। তখন ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় মোটা চাল বিক্রি হতো, তখন একজন মহিলা কৃষক মজুরি পেতো ৪ থেকে ৪৫ টাকা, আর একজন পুরুষ মজুরি পেতো ৬০ থেকে ৭০ টাকা। তখন ১ কেজি চাল কিনলে তার তেল এবং লবণ কিনার টাকা থাকতো না। আর এখন মোটা চাল যদি ৫০ টাকা ধরলেও এখন একজন শ্রমিক মজুরি পায় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। ওই সময়ের তুলনায় এখন একেকজন শ্রমিক ৮ গুণ বেশি ইনকাম করে।
মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ থেকে মঙ্গা বিতারিত করে মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন। তিনি এখন চান মানুষ পুষ্টিকর ও নিরাপদ খাদ্য গ্রহণ করুক। এজন্য তিনি ২০১৩ সালে নিরাপদ খাদ্য আইন পাস করেছেন।
তিনি বলেন, বিএনপি এখনো অপপ্রচার চালাচ্ছে যে, ২০২৩ সালে দেশ দুর্ভিক্ষের কবলে পড়বে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকা পর্যন্ত দেশ এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ১৪ বছরে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সারাদেশের অবকাঠামো খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। পদ্মাসেতু, চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ট্যানেল, মেট্রোরেল, বিদ্যুৎসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে, মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়ন হয়েছে, মানুষের আয় বেড়েছে, আমরা খাদ্যে সয়ংসম্পন্ন হয়েছি, বিদ্যুৎ উৎপাদন চাহিদার তুলনায় উৎপাদন সক্ষমতা অনেক বেড়েছে। দেশের স্বাস্থ্য সেবার মান বেড়েছে, শিক্ষার মান বেড়েছে।
তিনি বলেন, সকল ক্ষেত্রে উন্নয়ন অব্যাহত রেখে বাংলাদেশকে চরম দারিদ্রতা থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিনত করেছেন। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি লাভ করেছে। বিএনপি-জামাতের দুঃসময়ে এই দেশ ছিল চরম দরিদ্রপূর্ণ একটি দেশ, হতাশার দেশ, এই বাংলাদেশ ছিল ব্যর্থ ও পর পর ৫ বার বিশ্বের এক নম্বর দুর্নীতি পরায়ন দেশ। আজ সেই ব্যর্থতা ও হতাশা থেকে উঠে এসে বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এখন দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় প্রায় ৩ হাজার মার্কিন ডলার।
হানিফ বলেন, ‘উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে ২০৩১ সালের মধ্যে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত হবো, এটা বিশ্ব অর্থনীতিবিদদের মন্তব্য। উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সালের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সেই সোনার বাংলা উন্নত, আত্মমর্যাদাসম্পন্ন বাংলাদেশ গড়তে সক্ষম হবো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। এই উন্নয়ন অগ্রগতি থামিয়ে দিতে বিএনপি-জামাতের নেতৃত্বে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি এক প্ল্যাটফর্মে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বার বার আঘাত করেছে। তারা বার বার উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে চেয়েছে। তারা আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে গণহত্যা চালিয়েছে।
২০০১ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে বিএনপি-জামাত আওয়ামী লীগের ২৬ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যার দায়ে নির্বাসিত বিএনপি নেতা তারেক রহমানকে লন্ডন থেকে ফিরিয়ে এনে তার বিরুদ্ধে রায় রকার্যকর করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
সরকারি দলের সদস্য এম আব্দুল লতিফ বলেন, গত চৌদ্দ বছরে বিদ্যুৎ, জ্বালানি, খাদ্য উৎপাদন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সড়ক, রেলপথ, নদী ও বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা হয়েছে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে ঢাকা-১৮ আসনের মোহাম্মদ হাবিব হাসান বলেন, সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাবে।
সরকারের সাফল্যের বিস্তারিত তুলে ধরে দেশকে শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির দিকে পরিচালিত করার জন্য সময়োপযোগী ভাষণ দেয়ার জন্য সংসদ সদস্যরা রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানান।
এর আগে তারা স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের জন্য গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

বাংলাদেশ সময়: ২৩:২৬:১৮   ১৬৪ বার পঠিত