শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

সরিষাবাড়ীতে অবহেলা আর অযত্নে পড়ে আছে বেশকয়েকটি বধ্যভূমি

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » সরিষাবাড়ীতে অবহেলা আর অযত্নে পড়ে আছে বেশকয়েকটি বধ্যভূমি
শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৩



সরিষাবাড়ীতে স্বাধীনতার ৫১ বছর পেরিয়ে গেলেও অযত্নে পড়ে আছে বেশকয়েকটি বধ্যভূমি

ইসমাইল হোসেন জামালপুর প্রতিনিধি : বাঙালি জাতির মহাগৌরবের অবিস্মরণীয় ইতিহাস ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ। যে যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদদের রক্ত ও লাখ লাখ নারীর সম্ভ্রম বিসর্জনে অর্জিত হয়েছে এ মহান স্বাধীনতা। আজ সেই মহান স্বাধীনতার বিজয়ের ৫১ বছর পেরিয়ে গেলেও, আজও অবহেলা আর অযত্নে পড়ে আছে জামালপুরে সরিষাবাড়ী উপজেলায় বেশকয়েকটি বধ্যভূমি।

এসব বধ্যভূমি যদিও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের নানা স্মৃতিবিজড়িত ইতিহাস ধারণ ও বহন করে আজও কালজয়ী সাক্ষী হয়ে নিশ্চল হয়ে আছে। তবুও নেই কোন এর স্বীকৃতি ও সংস্কার। তাই অনাদৃত এসব বধ্যভূমি স্বীকৃতি দিয়ে সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন সরিষাবাড়ী উপজেলার সকল মুক্তিযোদ্ধারা সহ সর্বস্তরের মানুষ।

বধ্যভূমির অনুসন্ধানে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সরিষাবাড়ী উপজেলায় প্রায় ১০/১২টি বধ্যভূমি রয়েছে। যার সংস্কার ও সংরক্ষণের অভাবে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে নয়,সাধারণ মানুষের কবর হিসেবেই পরিলক্ষিত হচ্ছে না। দেখা গেছে, উপজেলার পোস্ট অফিস সংলগ্ন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চত্বর,শহীদ নগর, সাঞ্চারপাড়, কান্দারপাড়া ও পারপাড়া গ্রামে অবস্থিত এসব বধ্যভূমির স্মৃতিচিহ্নটুকু খুঁজে পাওয়াই আজ দুষ্প্রাপ্য। এছাড়াও যে সকল বধ্যভূমিতে শহীদদের কবরের সামান্য স্মৃতি চিহ্নটুকু বহন করছে সেগুলোও ঢেকে গেছে ঘাস আর লতাপাতায়।

উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সূত্রে জানা যায়, ১৯৭১ সালে সরিষাবাড়ী উপজেলার আরামনগর আলিয়া মাদ্রাসা, হাসপাতালের উত্তর পশ্চিমে, রেলওয়ে ব্রিজ,পারপাড়া গ্রামে, জগনাথগঞ্জ ঘাট, মূলবাড়ী ব্রিজ, চান্দাদীঘি, মুনারপাড়া রেলওয়ে ব্রিজ, কুইচ্চামারা ব্রিজ,জোজিয়া চর ও শহীদ নগর সহ বিভিন্ন অঞ্চলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হন মুক্তিযোদ্ধারা এবং প্রতিটি যুদ্ধেই তাদেরকে পরাজিত করে তারা বিজয়ী হন বলে জানান।

সারাদেশে এমন হাজারো স্থানে দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ করে অগণিত স্বাধীনতাকামী মানুষ দিয়ে গেছেন প্রাণ। যাদের খবর এখনো অগোছরে ও অনাদরে। আজ এ সকল প্রাণের অবদান মহান স্বাধীনতার ৫১ বছর পেরিয়ে গেলেও নেয়া হচ্ছে না কোন খোঁজখবর, করা হচ্ছে না সংস্কার ও সংরক্ষণ। তাই আজও সেই নির্মম হত্যাযজ্ঞের স্মৃতিটুকু বুকে নিয়ে অপ্রাপ্তির বেদনায় নিরবে কাঁদেন বধ্যভূমিতে ঘুমিয়ে থাকা শহীদদের স্বজনেরা।

তারা হতাশায় আক্ষেপ করে বলেন, স্থানীয়ভাবে ইউনিয়ন তথা উপজেলা পরিষদ কিংবা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আজও কখনো কোন সংস্কার কিংবা সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। উপজেলা পর্যাযে কত উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করা হয় কিন্তু এসব বধ্যভূমি কবর ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্নগুলো সংস্কার কিংবা সংরক্ষণ করা হয়না।

বধ্যভূমিতে ঘুমিয়ে থাকা শহীদদের স্বজনদের কাছ থেকে আরও জানা যায়, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী রাজাকার ও আলবদরেরা গ্রামের অসহায় নিরীহ মানুষদের মুক্তিবাহিনীর গুপ্তচর সন্দেহে ধরে নিয়ে যায় এবং অমানবিক নির্যাতন করে নৃশংসভাবে গুলি করে হত্যা করে এবং সেখানেই তাদের মাটিচাপা দিয়ে রাখা হয়। যদি এ সকল প্রাণের অবদান আজও সংরক্ষণ করে না রাখা হয়। তাহলে বর্তমান প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা এসব জানতেও পারবে না এবং বলতেও পারবে না তাদের আগামী প্রজন্মের কাছে।

তাই স্বাধীনতার সত্য ইতিহাস কে উজ্জীবিত করে রাখতে এসব বধ্যভূমি সংস্কার ও সংরক্ষণ করা অতীব জরুরী বলে মনে করছেন উপজেলা সকল বীর মুক্তিযোদ্ধারা সহ শহীদদের স্বজনেরা।

এ ব্যাপারে স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ ও সৈয়দুজ্জামান বলেন, আগামী প্রজন্মের জন্য অতিদ্রুত বধ্যভূমিগুলোকে সংস্কার ও সংরক্ষণ করা আবশ্যক। পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে তাদের স্মৃতিগুলো ধরে রাখতে হবে। জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে এদেশ স্বাধীন করেছি। আজ বধ্যভূমিগুলো অবহেলা অযত্নে পড়ে আছে এবিষয়টি খুবই দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক।

এ বিষয়ে সরিষাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার উপমা ফারিসার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের সকল স্মৃতি চিহ্নগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। পর্যায়ক্রমে এগুলো সংস্কার ও সংরক্ষণ করা হবে।

বধ্যভূমি সংস্কার ও সংরক্ষণের বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য জামালপুর-৪ সরিষাবাড়ী আসনের এমপি ডাঃ মুরাদ হাসান বলেন,আমি ইতিপূর্বেও একাধিকবার এই স্মৃতিস্তম্ভগুলো সংস্কার করেছি এবং সংরক্ষণের জন্য প্রশাসন ও দলীয় নেতৃবৃন্দদের নির্দেশনা প্রদান করেছি। বর্তমানে সরিষাবাড়ী উপজেলায় যেসব বধ্যভূমি সংস্কারের প্রয়োজন আছে আমি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলে অতিদ্রুত সংস্কারের আওতায় নিয়ে আসব। কারণ আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আমি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। আমি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন করি।

উল্লেখ্য যে ১৯৭১ সালে ২৪শে এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সরিষাবাড়ীতে প্রথম প্রবেশ করে এবং দীর্ঘ ৭ মাস ১৮ দিন বিভিন্ন স্থানে বীর মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করে ১২ই ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত করে সরিষাবাড়ী।

বাংলাদেশ সময়: ১৮:৩১:৪২   ২১৫ বার পঠিত