ইসমাইল জামালপুর প্রতিনিধি: আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উদযাপন উপলক্ষে প্রিয়জনকে কিছু উপঢৌকন না দিয়ে একটি অসহায় দরিদ্র পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিতে পাশে দাঁড়ালেন জামালপুরের সরিষাবাড়ী আর্জেন্টিনা মেসি ভক্ত সেই সাংবাদিক মাসুদ।
মঙ্গলবার ১৪ই ফেব্রুয়ারি সকাল ১১টায় উপজেলার ভাটারা ইউনিয়নের ফুলবাড়িয়া গ্রামের দিনমজুর মনসুর রহমানের বাড়ীতে গিয়ে তার ৫ মাস বয়সী কন্যা মুসলিমা অর্থের অভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন শুনে তিনি এ আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন।
মুসলিমার পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালে ১৫ অক্টোবর সরিষাবাড়ী সরকারপাশা ওয়েল ফেয়ার ট্রাষ্ট হাসপাতালে সিজারের মাধ্যমে মুসলিমার জন্ম হয়। জন্মের পর থেকেই মুসলিমার মাথা অস্বাভাবিকভাবে মাথা বড় হতে থাকে। পরে মুসলিমার পরিবার মুসলিমাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলে শিশু ওয়ার্ডের চিকিৎসক যেসব পরীক্ষা- নিরীক্ষা দেন, তা অর্থের অভাবে করাতে পারেন না। পরে বিনা চিকিৎসায় শিশু মুসলিমাকে ফিরিয়ে বাড়ী নিয়ে আসেন।
এদিকে শিশুটির মাথা ক্রমশই বড় হতে থাকলে দরিদ্র বাবা-মা দুশ্চিন্তায় আরো ভেঙে পড়েন। পরে আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে কিছু সাহায্য সহযোগিতা তুলে জামালপুর প্রাইভেট শাহজালাল হাসপাতালে চিকিৎসকের পরামর্শে মাথার সিটিস্ক্যান করান। পরে চিকিৎসক পরামর্শ দেন যে শিশুটির মাথা অপারেশন করে মাথা থেকে পানি বের করলে স্বাভাবিক হতে পারে।
এ আশায় বুক বাধলেও অর্থের অভাবে শিশুটির উন্নত চিকিৎসা করাতে পারছে না তার বাবা-মা। তাই জন্মের মাত্র পাঁচ মাসের ব্যবধানে শিশুটি ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
চিকিৎসকরা বলেছেন,শিশুটি কনজিনিটাল হাইডোকেফালাস রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তাকে এ রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা করাতে হবে। এতে প্রয়োজন হতে পারে প্রায় ৫/৬ লাখ টাকা। যা শিশুটির বাবা-মা কখনো কোনদিন দেখনি সংগ্রহ করতে পারবেন না।
অসুস্থ শিশুটির বাবা মনসুর রহমান জানান, আমি দিনমজুর কাজ করি। আমার সংসারে সাতজন সদস্য। তাদের খরচাই আমি যোগাতে হিমশিম খাই। তার মধ্যে মুসলিমা জন্মের পর হতেই অসুস্থ। তার চিকিৎসা করতে আমার সহায় সম্বল যা ছিল সব শেষ করেছি। এখন আমার শরীরটা ছাড়া কিছুই নেই। এদিকে মেয়েটির মাথা দিনদিন আরও বড় হয়ে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এখন আমি কি করবো জানিনা।
এছাড়াও মুসলিমার মা বিনা বেগম বলেন, আপনারা সমাজে যারা ধনী ব্যক্তি আছেন। তারা আমার মেয়ে মুসলিমার জীবন বাঁচাতে একটু এগিয়ে আসুন। একটু সাহায্য সহযোগিতা করুন।
এদিকে সাংবাদিক মাসুদের মাধ্যমে জামালপুর পুলিশ সুপার নাসির উদ্দিন বিষয়টি জানতে পেরে অসুস্থ মুসলিমার জন্য তৎক্ষণাৎ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন এবং সাংবাদিক মাসুদের মাধ্যমে মুসলিমার পরিবারের কাছে ৫ হাজার টাকা পাঠান। পরে সাংবাদিক মাসুদ নিজ হতে আরও পাঁচ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দিয়ে মোট ১০ হাজার টাকা মুসলিমার চিকিৎসার জন্য বাবা মনসুরের হাতে তুলে দেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন,সরিষাবাড়ী উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি দৈনিক সংবাদ ও পল্লীটিভির সরিষাবাড়ী প্রতিনিধি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ, সরিষাবাড়ী রিপোর্টার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক কালবেলা সরিষাবাড়ী প্রতিনিধি ইসমাইল হোসেন, করতোয়া ও ভোরের ডাকের প্রতিনিধি তৌকির আহমেদ হাসু, ফালগুনী ও সৃষ্টি টিভির প্রতিনিধি সাইদ মাহমুদ এবং জামালপুর পল্লী কন্ঠের প্রতিনিধি সোহেল রানা প্রমুখ।
মানবিক সহায়তাকালে মেসি ভক্ত সাংবাদিক মাসুদ জানান ,ভালোবাসা কোন নির্দিষ্ট দিনের সংজ্ঞা হতে পারে না। ভালোবাসা অসীম নিরন্তর। আমরা মানবিক ভালবাসায় একে অপরের পাশে থাকবো প্রতিটি মুহূর্ত। এই দৃঢ়তা আমাদের অনুভূতিতে লালন করা উচিত। যারা ভালোবাসাকে নিয়ে নোংরামি বাদরামি করে তারা ভালোবাসার মানেই বোঝেনা। আজ বিশ্ব ভালবাসা দিবসে আমি অসুস্থ শিশু মুসলিমার জন্য দেশ ,সমাজ ও রাজনৈতিক দলের বিত্তবান ব্যক্তিদের কাছে এবং উপজেলা প্রশাসন ও জেলা প্রশাসককে শিশুটির চিকিৎসা করাতে অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানাচ্ছি।
উল্লেখ্য সাংবাদিক মাসুদ ,দৈনিক জনবাণী ও দৈনিক আলোচিত জামালপুর পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার। সে এবারের কাতার বিশ্বকাপে ১০৬০ ফিট পতাকা নিয়ে বানিয়ে মেসি ভক্তদের নিয়ে বিশাল এক রেলী করে এবং আর্জেন্টিনার প্রতিটি খেলায় খিচুড়ি, বিরিয়ানি, তেহরী এবং মিল্লি ভাতের আয়োজন করে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা খরচ করেছিলেন। এছাড়াও তিনি আর্জেন্টিনা চ্যাম্পিয়ন হলে ৫টি গরু জবাই দিয়ে জামালপুরের ঐতিহ্যবাহী মিল্লি ভাত খাওয়ানোর ঘোষনা দিয়েছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:৪৭:৩৫ ২১১ বার পঠিত