বুধবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

আফগানিস্তানে বিবিসির সাবেক সাংবাদিকদের যুক্তরাজ্যে নেয়া হতে পারে

প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক » আফগানিস্তানে বিবিসির সাবেক সাংবাদিকদের যুক্তরাজ্যে নেয়া হতে পারে
বুধবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩



আফগানিস্তানে বিবিসির সাবেক সাংবাদিকদের যুক্তরাজ্যে নেয়া হতে পারে

এক বছরের বেশি সময় ধরে আত্মগোপনে রয়েছেন এক সময় বিবিসির হয়ে কাজ করা আফগানিস্তানের ৮ সাংবাদিক। যুক্তরাজ্যের একজন বিচারক দেশটির মন্ত্রীদের ওই সাংবাদিকদের দুর্দশার বিষয়টি পুনরায় মূল্যায়ন করে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন।

মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিবিসির প্রতিবেদনে উঠে আসে এ তথ্য।

২০২১ সালে পুনরায় আফগানিস্তানের শাসনভার গ্রহণ করে তালেবান। সে সময় বিভিন্ন দেশ বিমান পাঠিয়ে নিজ নিজ নাগরিক এবং তাদের হয়ে কাজ করা আফগানদের সেখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। যুক্তরাজ্যও তাদের নাগরিক এবং কর্মীদের নিয়ে যায়। কিন্তু আফগানিস্তানের নাগরিক ওই ৮ সাংবাদিক ‘নিরাপত্তার কারণ’ দেখিয়ে যুক্তরাজ্য যেতে চাইলেও তাদের তখন নেয়া হয়নি। সেই থেকেই আত্মগোপনে রয়েছেন তারা।

জানা যায়, যুক্তরাজ্যে যাওয়ার আবেদন করলেও এক বছর পর সেই আবেদনে সাড়া দেয় দেশটির সরকার। তবে সাংবাদিকদের আবেদন বাতিল করা হয়।

ওই সাংবাদিকদের একজন সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিবিসিকে জানান, তালেবান প্রশাসন বিশ্বাস করে তারা যুক্তরাজ্যের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করতেন। এরই মধ্যে তাকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ওই ৮ সাংবাদিকের সবাই দীর্ঘদিন বিবিসির হয়ে আফগানিস্তানে কাজ করেছেন। তাদের অনেকেই সরাসরি ব্রিটিশ সরকারের হয়ে তাদের বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করেছেন।

লন্ডন হাইকোর্ট থেকে বলা হয়, ওই সাংবাদিকদের একজনের গাড়িতে বোমা পেতে রাখা হয়েছিল। আরেকজনকে জনসম্মুখেই গুলি করা হয়। গুলিতে ওই সাংবাদিকের পরিবারের একজন গুরুতর আহত হন। এ ছাড়া আরও ২ জনকে ধরে নিয়ে গিয়ে বিবিসিতে তাদের কাজের ধরণ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ ও নির্যাতন করা হয়েছে।

২০২১ সালের আগস্টের পর যুক্তরাজ্য সরকার ২১ হাজার আফগান ও তাদের পরিবারের সদস্যদের উদ্ধার করে নিয়ে গেছে।

ওই ৮ সাংবাদিকের আইনজীবী এরিন আলোক বলেন, এক বছর ধরে তাদের আবেদনের কোনো জবাব দেয়া হয়নি। যুক্তরাজ্য যখন আফগানিস্তানের কাবুল থেকে লোকজনকে সরিয়ে নিচ্ছিল তখন বিবিসির ওই ৮ সাংবাদিককে উদ্ধারের বিষয়ে কোনো আবেদন করা হয়নি। কারণ, তারা ওই সময় বিবিসিতে কর্মরত ছিলেন না।

২০২১ সালের আগস্টে উদ্ধার তালিকায় জায়গা না পাওয়ার পর ওই ৮ সাংবাদিক নিজেরা যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে তাদের উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন। এক বছর পর যখন তাদের আবেদনগুলো শেষ পর্যন্ত বিবেচনা করা হয়, তখন মন্ত্রীরা তাদের কাউকে পুনর্বাসন করতে অস্বীকার করেছিলেন। কারণ কর্মকর্তারা এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলেন যে, তাদের কাজ সরাসরি যুক্তরাজ্য সরকারের কার্যক্রমের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল না।

কিন্তু সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) একজন বিচারক বলেন, তাদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করার সময় তালেবান কীভাবে বিবিসি এবং বিবিসির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিষয়ে ভাবছে তা বিবেচনায় নেয়া হয়নি। বিচারক যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি প্রশ্ন তুলে বলেন, কর্মীদের এই ঝুঁকি কী বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। ওই ৮ সাংবাদিককে যুক্তরাজ্য আসার অনুমতি দেয়ার ক্ষেত্রে সেখানে ‘অবাস্তব কারণের চেয়েও বেশি কিছু আছে’।

এই রায়ের পর সোমবার বিচারককে ধন্যবাদ দিয়ে ওই ৮ জনের একজন বিবিসিকে বলেন, নিয়মিত আমাদের বাসা বদল করতে হচ্ছে। আমাদের সন্তানেরা ভিন্ন ভিন্ন স্কুলে পড়ছে। প্রতিদিনই তালেবান কর্তৃপক্ষ সাংবাদিক এবং মানবাধিকারকর্মীদের ওপর নজর রাখছে। তারা বিবিসিকে শত্রু হিসেবে দেখে, অনেকটা গোয়েন্দা সংস্থার মতো মনে করে।

বিবিসি জানায়, আদালতের নির্দেশের পর ব্রিটিশ মন্ত্রীরা এখন বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য ২১ দিন সময় পাবেন। সরকারের একজন মুখপাত্র জানান, তারা বিষয়টি পুনর্বিবেচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে ওই ৮ সাংবাদিককে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হবে কিনা, সে বিষয়ে তিনি কোনো ইঙ্গিত দিতে রাজি হননি।

এখন পর্যন্ত আফগানিস্তানে ৩শ’র বেশি আফগান ও তাদের পরিবার যুক্তরাজ্য যাওয়ার অনুমতি পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে

বাংলাদেশ সময়: ৮:২৫:২২   ১৫৫ বার পঠিত   #  #  #