সোমবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

সরকারি চাকরির নামে অভিনব জালিয়াতি, গ্রেফতার ৭

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » সরকারি চাকরির নামে অভিনব জালিয়াতি, গ্রেফতার ৭
সোমবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৩



সরকারি চাকরির নামে অভিনব জালিয়াতি, গ্রেফতার ৭

ভিন্ন ভিন্ন জেলার বাসিন্দা হলেও এক জায়গায় তারা অভিন্ন, সবাই সচিব! কেউ অতিরিক্ত, কেউ যুগ্ম, কেউ আবার সহকারী। তবে এসব পদ তাদের নিজেদের তৈরি করা। তারা আসলে প্রতারক। সম্প্রতি সরকারি চাকরির ফাঁদ পাতা চক্রের ৭ সদস্যকে গ্রেফতারের পর তাদের অভিনব জালিয়াতি ধরা পড়েছে।

গ্রেফতারের পর গোয়েন্দাদের সামনে শুরু হয় দুই সচিবের তুমুল বাকযুদ্ধ, যা মূলত টাকার ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে। একজনের দাবি ১০ লাখ টাকা দিয়েছেন, আরেকজন বলছেন ৫ লাখ নেয়া হয়েছে। তৃতীয় সচিব চুপচাপ পর্যবেক্ষণ করেন। তাদের এই দ্বন্দ্বের সূত্রপাত সরকারি একটি নিয়োগ পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে। তবে এই তিন জনই ভুয়া সচিব।

জানা গেছে, গত বছরের ৬ এপ্রিল তৃতীয় শ্রেণির ৪৪টি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে গণপূর্ত অধিদফতর। এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে চাকরির ফাঁদ পাতেন ভুয়া সচিব পরিচয় দেয়া আলমগীর, হুমায়ুন আর রেজাউল।

সারা দেশ থেকে দালালদের মাধ্যমে জোগাড় করেন তিন শতাধিক আবেদনপত্র। চাকরির নিশ্চয়তা দিয়ে পদ অনুযায়ী ৫ থেকে ১২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় প্রার্থীদের কাছ থেকে। গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতারের পর তাদের সহজ স্বীকারোক্তি একজনকেও তারা চাকরি দিতে পারেননি।

বিভিন্ন সরকারি দফতরে যাতায়াত আছে চক্রটির। চাকরি প্রত্যাশীদের বিশ্বাস অর্জনের জন্য কখনও কখনও নিয়ে যেতেন সচিবালয়সহ অন্যান্য অফিসে। নিজেদের সচিব পরিচয় দিয়ে লোক দেখানো সাক্ষাৎকারেরও ব্যবস্থা করতেন।

গ্রেফতার হওয়া রেজাউল বলেন, ‘প্রথমে হুমায়ুন সিভিগুলো সংগ্রহ করে আমার কাছে দেয়। পরে আলমগীর ভাই সংশ্লিষ্ট দফতরে নিয়ে যান। এরপর হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে সিভিগুলো সাহাদাত হোসেন নামে একজনের কাছে পাঠিয়ে দেই। আলমগীর ভাই গৃহায়ন ও গণপূর্ত ভবনে পরীক্ষা নিতেন। পরীক্ষা নেয়ার পর আলমগীর ভাই ফোন দিলে উপরে উঠে প্রিন্ট করা কাগজটা নিয়ে আসতাম। কিন্তু কখনোই আমরা কাউকে চাকরি দিতে পারিনি।’

চক্রের আরেক সদস্য হুমায়ুন বলেন, ‘চাকরি দেয়ার জন্য আমি লোক নিয়ে আসতাম। আর সচিব আলমগীর সাহেব চাকরি দেন বলে জানি। কিন্তু আলমগীর সাহেব পরে কী করেন, সেটা আমি জানি না। শুধু বাহিরের লোক না, আমার নিজের আত্মীয়-স্বজনকেও চাকরির জন্য এনেছিলাম।’

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘সম্ভাব্য প্রার্থীদের কাছ থেকে তারা সিভি সংগ্রহ করতেন। সেইসঙ্গে ভুক্তভোগীদের আসল সার্টিফিকেট, মার্কশিট, ব্যাংক ড্রাফট, নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ও নগদ টাকা নেন। কৌশলে প্রশ্নপত্র বানিয়ে বিভিন্ন সময় তাদের কাছ থেকে পরীক্ষা নিয়ে সবাইকেই পাস করিয়ে দেয়া হয়। এরপর ঢাকা শহরে বিভিন্ন অফিসে তাদের নিয়ে ৫ থেকে ১০ মিনিট বসিয়ে সাধারণ ইন্টারভিউ নেয়া হয়।’

উপপুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান আরও বলেন, ‘বারকোড থাকা ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে হাতিয়ে নেয়া অর্থ দিয়ে তারা প্রচুর সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। একজন প্রতারককে রাজবাড়ী থেকে গ্রেফতার করেছি, যিনি এই প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত টাকা দিয়ে ২ মাসের মধ্যে একটি দোতলা বাড়ি বানাচ্ছেন। সেইসঙ্গে ইলেকট্রনিক সামগ্রীর বড় একটা শো রুম দিয়েছেন। এতে বোঝা যায়, তারা অনেক মানুষকে ঠকিয়েছে। প্রতারকদের কাছ থেকে শত শত সিভি, কয়েকডজন নিয়োগপত্র, কয়েকশ’ স্ট্যাম্প, কয়েকশ’ আসল সার্টিফিকেটসহ নানা ডকুমেন্ট উদ্ধার করেছি।’

টাকার বিনিময়ে চাকরি প্রত্যাশীদেরও এখানে দায় রয়েছে বলে মন্তব্য করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ১১:২৩:১২   ১৫১ বার পঠিত   #  #  #