ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, বাঙালির শক্তির নাম বাংলা ভাষা। আর ভাষার জন্য লড়াই করতে গিয়েই বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
তিনি বলেন, রক্তের বিনিময়ে মায়ের ভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষায় প্রতিষ্ঠা, এ ভাষার মর্যাদা রক্ষা ও বাংলা ভাষা ভিত্তিক বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নজির বিশ্বে আর নাই।
মন্ত্রী আরো বলেন, মা, মাতৃভূমি এবং মাতৃভাষার প্রতি বঙ্গবন্ধুর আপসহীন সংগ্রামের ফসল এই বাংলাদেশ।
মোস্তাফা জব্বার আজ রাজধানীর মগবাজারে বিটিসিএল আইডিয়াল স্কুল মাঠে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এবং মহান শহীদ দিবস উপলক্ষ্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধু ও ভাষা আন্দোলন’ বিষয়ক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডাক ও টেলিযোগযোগ বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, বাঙালির রক্ত, মেধা ও মনন এবং মায়ের মুখের সাথে মিশে আছে বাংলা ভাষা। বাংলাদেশ পৃথিবীর একমাত্র বাংলা ভাষা ভিত্তিক রাষ্ট্র। পৃথিবীর ৩৫ কোটি মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে । তিনি বলেন, অসমীয়া ভাষাসহ অনেক ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষায় বাংলা লিপি ব্যবহৃত হওয়ায় বাংলা ভাষার যে পরিধি তার চেয়ে বেশি বাংলা লিপির পরিধি বিস্তৃত।
একাত্তরের আগে এই ভূখন্ড পাকিস্তানী, ইংরেজ, মোগল এবং তারও আগে বাইরের শক্তি শাসন করেছে। তারা প্রত্যেকেই তাদের ভাষা চাপানোর চেষ্টা করেছে, কিন্তু পারেনি।
মন্ত্রী বলেন, উচ্চতর শিক্ষায় এবং উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষা প্রবেশাধিকারের ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। পৃথিবীতে বাঙালির পরিচয় সুদৃঢ় করছে বাংলা ভাষা। ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের ভিত্তি তৈরি করেছিলেন।
তিনি বলেন, বাংলা পৃথিবীর মধুরতম এবং বিজ্ঞান সম্মত ভাষা। পৃথিবীর অনেক ভাষা নিজেদের হরফ বাদ দিয়ে বিদেশি হরফ দিয়ে মাতৃভাষা চর্চা করতে গিয়ে নিজস্ব ভাষার আসল রূপ হারিয়েছে, নিজ ভাষাকে বিকৃত করেছে। কিন্তু বাংলা ভাষা আপন মহিমায় সমুজ্জ্বল ।
তিনি বলেন, ডিজিটাল যন্ত্রে বাংলা লেখার সীমাবদ্ধতা নাই। তবে ভাষার ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তির সুযোগ যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে যন্ত্রে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে বঙ্গবন্ধু অপটিমা মুনির টাইপ রাইটার প্রবর্তন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় যন্ত্রে বাংলা লেখার অভিযাত্রা শুরু হয়।
ছাত্র-ছাত্রীদেরকে স্মার্ট বাংলাদেশের ভবিষ্যত সৈনিক আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, উপনিবেশিক আমলের শিক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তে তাদেরকে ডিজিটাল যুগের উপযোগী শিক্ষায় শিক্ষিত করতেই হবে। উপযুক্ত শিক্ষা পেলে আমাদের নতুন প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা অসাধ্য সাধনের সক্ষমতা রাখেন।
মহান ২১শে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবসকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেব প্রতিষ্ঠায় এবং ডিজিটাল প্রযুক্তিতে বাংলাভাষার বিকাশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান তুলে ধরেন মন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ এবং টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বক্তৃতা করেন।
এর আগে মোস্তাফা জব্বারের নেতৃত্বে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ও এর অধীন অধিদপ্তর ও সংস্থা সমূহের পক্ষ থেকে বিটিসিএল আইডিয়াল স্কুল প্রাঙ্গণে নির্মিত শহিদ মিনারে পুস্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
অনুষ্ঠানে এই উপলক্ষে আয়োজিত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন মন্ত্রী।
পরে মন্ত্রী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এবং মহান শহীদ দিবস উপলক্ষ্যে রাজধানীর ধানমন্ডির সুলতানা কামাল মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সে প্রথম আলো আয়োজিত বর্ণমেলা পরিদর্শন করেন।
এসময় তিনি মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন এবং এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
তিনি নতুন প্রজন্মকে ভাষাপ্রযুক্তিসহ ডিজিটাল প্রযুক্তির দক্ষতা অর্জন করতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ সময়: ১৯:৪২:২৯ ১৬৩ বার পঠিত