ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী কবিতা বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সম্পদ। তার কবিতা আধুনিক বাংলা কবিতার একশ বছরের ইতিহাসের মসৃণ পথ চলাকে আমূল বদলে দিয়েছিল।
তিনি বলেন, কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবির মর্যাদা দিয়ে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে গর্বিত করেছেন।
মন্ত্রী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় কবি নজরুল ইসস্টিউট মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক নজরুল উৎসব-২০২৩ উপলক্ষ্যে বিদ্রোহী কবিতার শতবর্ষ উদযাপন জাতীয় কমিটি আয়োজিত বিশিষ্ট জনদের মধ্যে স্বস্ব ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি সরূপ সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘একটি স্বতন্ত্র জাতিসত্তা হিসেবে বাঙালির আত্মপরিচয় সৃষ্টিতে কাজী নজরুল ইসলামের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে কাজী নজরুল ইসলামের তেজোদীপ্ত কবিতা, গান ও সাহিত্য আমাদের প্রেরণা যুগিয়েছে।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাগরণের কবি নজরুল ইসলামের দর্শন দ্বারা ভীষণভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার অবিসংবাদিত নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর তাঁর নিজস্ব উদ্যোগে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবির মর্যাদা প্রদান করা হয়। শুধু তাই নয়, তিনি কবি রচিত ‘চল্ চল্ চল্, ঊর্ধ্ব গগণে বাজে মাদল’ গানটিকে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর রণসঙ্গীত হিসেবে নির্ধারণ করেন। কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে ১৯৭২ সালের ২৫ মে কবির ৭৩তম জন্মদিন পালনের উদ্দেশ্যে ২৪ মে তাঁকে রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে সপরিবারে ঢাকায় নিয়ে এসে নাগরিকত্ব প্রদান করেন এবং তাঁর জন্য সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
এছাড়াও ১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এক বিশেষ সমাবর্তনের মাধ্যমে জাতীয় কবিকে ডি লিট উপাধি প্রদান করা হয় উল্লেখ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হল ছাত্রসংসদের সাবেক সাহিত্য ও নাট্য সম্পাদক মোস্তাফা জব্বার ।
তিনি বলেন, নিপীড়িত মানুষের বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে ধর্মমত নির্বিশেষে সকল বাঙালি মিলেমিশে সমতার ভিত্তিতে একটি নতুন সমাজ সৃষ্টির স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন সাম্যবাদের কবি কাজী নজরুল ইসলাম । সেটাই ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ‘সোনার বাংলাদেশ’-এর ভিত্তি।
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহমেদ শরীফ চেয়ার অধ্যাপক প্রফেসর আবুল কাশেম ফজলুল হক, সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার ড. রাবিয়া ভূইয়া, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যন মো. সবুর খান, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের দৌহিত্র খিল খিল কাজী, দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার সম্পাদক ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম, শত শহীদ মিনার নির্মাণ উদ্যোক্তা আবদুল সালাম চৌধুরী, সমাজ সেবক ইঞ্জিনিয়ার মো. ফজলুল হক এবং বিশিষ্ট আবৃত্তিকার রেজাউল হোসেন টিটো মুন্সিকে নজরুল সম্মাননা প্রদান করা হয়।
বিদ্রোহী কবিতার শতবর্ষ উদযাপন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক মুহাম্মদ আতাউল্লাহ খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রফেসর আবুল কাশেম ফজলুল হক, যুগান্তর পত্রিকার সম্পাদক সাইফূল আলম এবং মানিকগঞ্জ পৌরসভার মেয়র রমজান আলী বক্তৃতা করেন।
বক্তারা নজরুলের জীবনের বিভিন্ন দিক আলোকপাত করে বলেন, ‘আজ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম কিংবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কেউই আমাদের মাঝে নেই। রয়ে গেছে তাঁদের আকাঙ্খা ও স্বপ্ন। আমরা সেটাকে বাস্তবে পরিণত করার চেষ্টা করলেই তাঁদের প্রতি যথার্থ সম্মান দেখানো হবে।’
পরে এই উপলক্ষ্যে আয়োজিত আবৃত্তি ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে মন্ত্রী পুরস্কার বিতরণ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:১০:১২ ১৯৭ বার পঠিত