নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান বলেছেন, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের কাজ চলমান রয়েছে। প্রকল্পটি শেষ হলে এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন সড়ক হবে। এই লিংকরোড নারায়ণগঞ্জ তথা দেশের শিক্ষা ও চিকিৎসার হাব (কেন্দ্র) হিসেবে গড়ে তোলা হবে। ইতোমধ্যে সেখানে বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্প পাস হয়েছে। ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জন্য জায়গা খোঁজা হচ্ছে। আমার ইচ্ছা এই সড়কটিকে ঘিরে এডুকেশন ও মেডিকেল হাব বানানো। কিন্তু দুঃখের বিষয় প্রকল্পের আবেদন করি আমি, অন্যরা জমির ব্যবসা করার জন্য তা অন্য এলাকায় নিয়ে যেতে চান।
রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের মার্চেন্ট ওয়ার্কারস উচ্চ বিদ্যালয়ের (এম ডাব্লিউ স্কুল) কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শামীম ওসমান শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়িত হয়েছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী এবার স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্য ঠিক করেছেন। তোমরা যারা আগামীতে এইচএসসি দেবে তারা যেন খুশি হবে যে কয়েকশ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ আইটি পার্কগুলোর একটি এই লিংক রোডের পাশেই নির্মিত হচ্ছে। শেখ রাসেল আইটি পার্ক নামের এই প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর ইতোমধ্যে স্থাপন হয়েছে এবং এর কাজ চলমান রয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে আমাদের প্রযুক্তিনির্ভর জ্ঞান বাড়াতে হবে। আমাদের দূরদর্শী প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়টি বোঝেন। আর বোঝেন বলেই তিনি এ দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে উন্নত করছেন। শুধু নারায়ণগঞ্জেই নয় পর্যায়ক্রমে সারা দেশে এমন আইটি পার্ক গড়ে তোলা হবে। এখানে অধ্যয়ন করে দেশে বসেই আমাদের সন্তানরা আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে প্রচুর রেমিট্যান্স নিয়ে আসবে।
তিনি আরও বলেন, আজকে বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে আমাদের রাজনীতিতে আসা লাগতো না। তিনি এই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে মাত্র সাড়ে তিন বছরে যে জায়গায় নিয়েছিলেন তা অবিশ্বাস্য। কী ছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশে? চারদিকে পোড়া মাটির গন্ধ, রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট সব ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। দুর্ভিক্ষের হাহাকারের মাঝে তিনি এ দেশের মানুষের মনে স্বপ্ন বুনে দিয়েছিলেন। আজকে তিনি বেঁচে থাকলে হয়ত আমরা জাপান থেকেও উন্নত রাষ্ট্রে বসবাস করতাম।
বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচারের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, আমরা এই দেশের মানুষের ভাগ্য বদলের লক্ষ্যে রাজনীতিতে এসেছিলাম। আমাকে উদ্দেশ্য করে আরডিএক্স বোমা হামলা করা হলো। এই যে আপনাদের সামনে চন্দন শীল আছেন, সেই বোমা হামলায় তার দুটি পা উড়ে গেল। চোখের সামনে কতগুলো তাজা প্রাণ ঝড়ে গেল। আমরা তো প্রতিশোধ নিইনি। শুধু আল্লাহর কাছে বিচার দিয়েছি, ক্ষমা করে দিয়েছি। আপনারা (বিএনপি) ক্ষমতায় এসে আমাদের ওপর পাশবিক নির্যাতন করেছেন। এই হাত দিয়ে ৫০ জন মানুষকে দাফন করেছি, মরদেহ নিয়ে কবরস্থানে যেতে দেওয়া হয়নি। মরদেহের মধ্যে গুলি করা হয়েছে, মরদেহ থেকে গুলি বের করে আবার তা সমাহিত করতে হয়েছে। আমরা সব ভুলে গেছি, ভুলে থাকতে দেন।
বিএনপির চলমান কর্মসূচি সম্পর্কে তিনি বলেন, গতকাল বিএনপি নারায়ণগঞ্জে পদযাত্রা করেছেন। আপনারা কর্মসূচি করবেন, কোনো বাধা নেই। জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসবেন আসেন, আমরা ক্ষমতা হস্তান্তর করে চলে যাব। রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে আপনার উসকানির স্লোগান ধরেন, ‘হরে কষ্ণ হরে রাম, শেখ হাসিনার বাবার নাম’। এটা কী ধরনের স্লোগান? মাটির তলায় লুকিয়ে থাকলেও বের করে আনতে আমাদের পাঁচ মিনিট লাগবে না। আমরা জানি কেন আপনারা এই ধরনের উসকানিমূলক স্লোগান দিয়ে মাঠ গরম করার চেষ্টা করছেন। নৌকার মনোনয়ন নিয়ে পাস করে কারা বিএনপি-জামায়াতের গা ঘেঁষে? কে কার উকিল বাপ, কে কার উকিল মা, এগুলো আমরা জানি। আমরা সব বুঝি, সাবধান হয়ে যান। বাংলাদেশে খুনের রাজনীতি কায়েম করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এমনকি ওরা ওদের দলের নেতাদের মেরে আমাদের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করবে।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চন্দন শীল, জেলা পরিষদ সদস্য মজিবুর রহমান, কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:৫৩:১৩ ২২৬ বার পঠিত