সেভিয়াকে ৬-১ গোলে বিধ্বস্ত করে লা লিগা টেবিলের তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে এ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ। এই ম্যাচের মাধ্যমে এ্যাথলেটিকোর কোচ হিসেবে সর্বোচ্চ ম্যাচে দায়িত্ব পালনের নতুন মাইলফলক স্পর্শ করেছেন দিয়েগো সিমিওনে।
ঘরের মাঠ এস্তাদিও মেট্রোপলিটানোতে মেমফিস ডিপের জোড়া গোলে ২৬ মিনিটেই স্বাগতিকরা ২-০ গোলে এগিয়ে যায়। বিরতির পর আরো দুই গোল করেছেন আঁতোয়ান গ্রীজম্যান ও ইয়ানিক কারাসকো। ম্যাচের শেষভাগে আলভারো মোরাতা আরো দুই গোল যোগ করেছেন। বড় এই জয়ে এ বছর এ্যাথলেটিকোর উন্নতির আরো একটি প্রমান মিললো।
২০১১ সালে দায়িত্ব গ্রহনের পর কালকের ম্যাচটি ছিল এ্যাথলেটিকোর কোচ হিসেবে সিমিওনের ৬১৩তম ম্যাচ। এর মাধ্যমে আর্জেন্টাইন এই কোচ প্রয়াত লুইস আরাগোনেসকে পিছনে ফেলে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন। সিমিওনের অধীনে এ্যাথলেটিকো লা লিগার দুটি ও কোপা ডেল রে’র একটি শিরোপা জয় করেছে। ঘরোয়া আসরে দুই জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার সাথে সমান তালে লড়াই করার মানসিকতা সিমিওনেই তৈরী করেছেন। একইসাথে দুটি ইউরোপা লিগেও এ্যাথলেটিকো এখন নিয়মিত ভাবে শক্তিশালী দল হিসেবেই আবির্ভূত হচ্ছে।
এবার অবশ্য খুব একটা এগুতে পারেনি এ্যাথলেটিকো, ইউরোপে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিতে হয়। লা লিগায় শুরুতে শিরোপা দৌঁড়ে টিকে থাকতে পারেনি। কিন্তু বিশ^কাপের পর পুরো দল ঘুড়ে দাঁড়ায়। নভেম্বরের পর থেকে রিয়াল সোসিয়েদাদের থেকে পিছিয়ে থাকা ছিল সিমিওনের দল। কিন্তু শুক্রবার কাডিজের সাথে সোসিয়েদাদ গোলশুন্য ড্র করার পর প্রথমবারের মত এ্যাথলেটিকো উপরে উঠে তৃতীয় স্থান দখল করে।
কাল ম্যাচ শেষে সিমিওনে বলেছেন, ‘আমি খেলোয়াড়দের দুটি কথা বলেছি, আবেগ এবং হৃদয় দিয়ে খেলো। তাদের মধ্যে আগে থেকেই প্রতিভা আছে। আমি এ্যাথলেটিকোকে অনেক পছন্দ করি। কঠিন মুহূর্তে এই ক্লাবটির ঘুড়ে দাঁড়ানোর ইতিহাস রয়েছে, আমি সেটা দেখেছি।’
সিমিওনের জন্য কিছু করতে পেরে দারুন আনন্দিত গ্রীজম্যান বলেছেন, ‘এটা তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন ছিল। সত্যিকার অর্থেই আমি চেয়েছিলাম ম্যাচটি সিমিওনের জন্য স্মরণীয় করে রাখতে। কারন এটা তার প্রাপ্য। বিশ^কাপের পর থেকে আমরা দুর্দান্ত খেলছি, আশা করছি এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারবো।’
এদিকে বড় এই পরাজয়ে টেবিলের ১৬তম স্থানে নেমে গেছে জর্জ সাম্পাওলির সেভিয়া। রেলিগেশন জোন থেকে তারা মাত্র এক পয়েন্ট দুরে রয়েছে।
বার্সেলোনা থেকে জানুয়ারিতে এ্যাথলেটিকোতে আসার পর সিমিওনে এই প্রথমবারের মত ডিপেকে মূল একাদশে নামিয়েছিলেন। তবে কোচের আস্থার প্রতিদান দিতে সময় নেননি এই ডাচ তারকা। গ্রীজম্যানের এ্যাসিস্টে ২৩ মিনিটে সেভিয়া গোলরক্ষক ইয়াসিন বুনুর পায়ের ফাঁক দিয়ে বল জালে জড়ান ডিপে। তিন মিনিট পর ব্যবধান দ্বিগুন করেন ডিপে। বিরতির আগে পোস্টের খুব কাছ থেকে গোল করে সেভিয়ার হয়ে এক গোল পরিশোধ করেন ইউসেফ এন-নেসরি।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে দুরপাল্লার শটে গোল করে এ্যাথলেটিকোকে আরো এগিয়ে দেন গ্রীজম্যান। এ্যাথলেটিকোর হয়ে ফরাসি এই তারকার এটি ১৫০তম গোল। ৬৯ মিনিটে কারাসকোর গোলে স্বাগতিকরা ৪-১ গোলের লিড পায়। ৭৪ মিনিটে পেপে গুয়ের প্রাপ্ত পেনাল্টি থেকে ইভান রাকিটিচ গোল করতে ব্যর্থ হলে সেভিয়া শিবিরে হতাশা নেমে আসে। দুই মিনিট পর বদলী খেলোয়াড় মোরাতা এ্যাথলেটিকোর হয়ে পঞ্চম গোলটি করেন। দ্বিতীয় হলুদ কার্ডের কারনে গুয়ে ৮০ মিনিটে মাঠত্যাগে বাধ্য হলে সেভিয়ার জন্য ম্যাচটি আরো অসহনীয় হয়ে ওঠে। স্টপেজ টাইমে মোরাতা নিজের দ্বিতীয় গোল করলে বড় ব্যধানে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে স্বাগতিকরা।
লিগের শুরুতেই জোড় গুঞ্জন ছিল এটাই হতে যাচ্ছে এ্যাথলেটিকোর হয়ে সিমিওনের শেষ মৌসুম। আর সেটাই যদি হয় তবে শিরোপা না পেলেও অন্তত পারফরমেন্সের দিক থেকে মাথা উঁচু করে সিমিওনে দল ছেড়ে যাবেন। সিমিওনের সাথে এ্যাথলেটিকোর বর্তমান চুক্তির মেয়াদ ২০২৪ সালের জুনে শেষ হচ্ছে। দল যেহেতু উন্নতির পথে রয়েছে তাই অনেকেরই ধারনা সিমিওনে হয়তো চুক্তির বিষয়টি পুনরায় বিবেচনা করবেন। এ সম্পর্কে এ্যাথলেটিকো মিডফিল্ডার কোকে বলেছেন, ‘অবশ্যই আমি সিমিওনেকে ছাড়া এ্যাথলেটিকোকে কল্পনা করতে পারিনা। আমি যদি ভুল না করে থাকি তবে সে ১১ বছর ধরে এখানে আছে। যখন সে এসেছিল তখন একটি স্পষ্ট ধারনা ও পরিবর্তিত মানসিকতা নিয়ে এসেছিল। সে আমাদের সবাইকে এক করেছে। ক্লাবের মধ্যে স্থিতিশীলতা এনেছে।’
এর আগে দিনের শুরুতে আলমেরিয়াকে ২-০ গোলে পরাজিত করে টেবিলের ষষ্ঠ স্থানে উঠে এসেছে ভিয়ারিয়াল। মায়োর্কাকে ১-০ গোলে পরাজিত করে তলানির দল এলচে মৌসুমের দ্বিতীয় জয় নিশ্চিত করেছে। যদিও এখনো তারা সেফটি জোন থেকে ১২ পয়েন্ট দুরে রয়েছে। টার্কিশ স্ট্রাইকার এনেস উনালের দুই গোলে জিরোনাকে ৩-২ গোলে পরাজিত করে স্বল্প সময়ে জন্য ১৫তম স্থানে উঠে এসেছে গেতাফে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪:২৬:১৭ ১৫৬ বার পঠিত