মোস্তাফিজার রহমান রংপুর প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামের সর্বত্র কৃষকের ভুট্টা চাষে আগ্রহ বাড়ছে। ভুট্টা চাষে খরচ ও পরিশ্রম কম, ফসলের ফলন ভালো। উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য থাকায় এখানে দিনে দিনে ভুট্টা চাষে কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে।
কুড়িগ্রামে আগে চরাঞ্চলের জমিগুলোতে ভুট্টা চাষ হলেও বর্তমান সমতল এলাকার ধানের জমিগুলোতে ব্যাপকভাবে ভুট্টা চাষ শুরু হয়েছে। কৃষকেরা ভুট্টার চাষ লাভজনক দেখে তাদের ধান চাষের জমিগুলোতে ভুট্টা চাষ করছেন।
প্রায় দেড়মণ ধানের মূল্যে এক মণ ভুট্টা বিক্রি হওয়ায় ধানের চেয়ে ভুট্টাতে লাভ বেশি দেখায় কৃষক ভুট্টা চাষে মনোনিবেশ করছেন। হাড় ভাঙা পরিশ্রম করে কৃষক এখানে প্রতিমণ ধান কৃষক ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করছে।
কিন্তু অনেকটা কম পরিশ্রমে চাষকৃত ভুট্টা প্রতিমণ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায়। ভুট্টা গাছ, ভুট্টার খোসা রোদে শুকিয়ে কৃষকেরা রান্নার জ্বালানির চাহিদা মিটাতে পাচ্ছেন। কাঁচা ভুট্টার গাছ গো-খাদ্য হিসেবেও বিক্রি হওয়ায় এখানে ভুট্টার চাষ এখানে জনপ্রিয় হচ্ছে।
এবার ভুট্টার মৌসূমে কুড়িগ্রামের সর্বত্রে দেখা গেছে কৃষক তার বোরো চাষের জমিতে বোরো চাষ না করে শুরু করেছেন ভুট্টা চাষ। বোরো চাষের জমিতে বোরো ধান চাষ করতে সেচ খরচ, চাষ খরচ ও শ্রমিক খরচ বেশি হওয়ায় সামান্য খরচ ও কম পরিশ্রমে ভুট্টা চাষ করার সুযোগ থাকায় কৃষক ঝুঁকে পড়েছেন ভুট্টা চাষে।
কুড়িগ্রামের নয়টি উপজেলায় কুড়িগ্রাম কুষিসম্প্রারণ অধিদফতর খামারবাড়ীর সূত্রমতে এবার ১৫ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এরমধ্যে কুড়িগ্রাম সদরে ৮৫০ হেক্টর, ফুলবাড়ী উপজেলায় ১ হাজার ৮৭৫ হেক্টর, রাজারহাট উপজেলায় ৩১০ হেক্টর, উলিপুর উপজেলায় ৬৯০ হেক্টর, চিলামারী উপজেলায় ১ হাজার ৮২০ হেক্টর, রৌমারী উপজেলায় ৪ হাজার ৮৫৫ হেক্টর, রাজীবপুর উপজেলায় ২ হাজার ৭৫০ হেক্টর, নাগেশ্বরী উপজেলায় ১ হাজার ৪০০ হেক্টর ও ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় ১ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়।
স্থানীয় কৃষক দুলাল হোসেন জানান, ভুট্টা চাষে ধানের চেয়ে বেশি লাভ চোখে দেখার কারণে তিনি ভুট্টা চাষের ওপর মনোযোগ আরোপ করেছেন। বিঘা প্রতি ৩৫ থেকে ৪০ মণ ভুট্টা উৎপাদন হওয়ায় তিনি তার বোরো চাষি ৪ বিঘা জমিতে এবার ভুট্টা চাষ করেছেন।
স্থানীয় কৃষক আশরাফুল হক জানান, আমি আমার বোরো ধান চাষের এক বিঘা জমিতে এবার ধান চাষ না করে ভুট্টা চাষ করছি। কম পরিশ্রম ও কম খরচে আমার জমির ভুট্টার ফলন বেশ ভালোই হয়েছে। ফসল উৎপাদনের পর ওই ভুট্টা প্রতিমণ ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হবে বলে আশা করছি।
একইভাবে স্থানীয় কৃষক মোহাম্মদ আলী তার ৩ বিঘা জমিতে প্রথমবারের মতো ভুট্টা চাষ করেছেন। তার জমি গুলোতে ভুট্টার ফসলও ভালো হয়েছে। এই জমিগুলোতে তিনি বছর বছর বোরো চাষ করলেও এবার ধানের পরিবর্তে তিনি ভুট্টা করেন বলে জানা গেছে।
স্থানীয় কৃষক শরীফুল ইসলাম ও শহিদুল ইসলামের মতে, ধান চাষে চারা রোপণ, কাটা মাড়াইসহ সবদিক দিয়ে খরচ বেশি। উৎপাদিত ধানের বিক্রি মূল্য খরচ অনুযায়ী ন্যায্য না হওয়ায় তারা অর্থাৎ কুড়িগ্রামের কৃষক ভুট্টা ঝুঁকে পড়ছেন। এতে কৃষকরা লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছেন।
কুড়িগ্রাম কুষিসম্প্রারণ অধিদফতর খামারবার্ড়ী উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন ডেইলি বাংলাদেশকে জানান, কুড়িগ্রামে ভুট্টা চাষে কৃষকের আাগ্রহ বাড়ছে। কম পরিশ্রম ও কম খরচে ভুট্টা চাষ হওয়ায় ও ভুট্টা বিক্রিতে ন্যায্য মূল্য পাওয়ায় কৃষকেরা ভুট্টা চাষ শুরু করেছেন।
এখানে ভুট্টা চাষ বাপড়ছে। এবার কুড়িগ্রামে লক্ষমাত্রার মোট ১৫ হাজার ৫৫০ হেক্টর জুিমতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। যা গতবারের লক্ষমাত্রার চেয়ে ২ হাজার ৫০০ হেক্টর বেশি জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪:২৪:২২ ১৭৬ বার পঠিত