ডাচ-বাংলা ব্যাংকের টাকা ডাকাতির ঘটনার পরিকল্পনায় ছিলেন তিনজন। এদের মধ্যে আকাশ নামে একজনকে খুলনা থেকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ ঘটনায় আকাশসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি দুজন হলেন মিলন ও হৃদয়। এ দুজনই পেশাদার ডাকাত।
ডিবি পুলিশ বলছে, ডাচ বাংলা ব্যাংকের টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনার পরিকল্পনায় ছিলেন তিনজন। এদের মধ্যে একজন সোহেল রানা পলাতক। যিনি ডাচ-বাংলা ব্যাংকের টাকা বহনকারী মানি প্ল্যান্ট লিঙ্কে একসময় ড্রাইভার হিসেবে কাজ করতেন। সর্বশেষ এই তিনজনসহ মোট ১১ জন গ্রেপ্তার ও ৭ কোটি এক লাখ ৫৬ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, আমাদের একাধিক ডিবি টিম বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করছে। সোমবার রাতে রাজধানীর গুলশান কড়াইল বস্তির বউ বাজার এলাকা থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার নাম হৃদয়। তার কাছ থেকে ৪৮ লাখ ৭ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নেত্রকোনার দূর্গাপুর এলাকার থেকে আজ সকালে মিলন নামে আরেক জনকে গ্রেপ্তার করি। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ১০ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। এ নিয়ে সর্বশেষ ৫৮ লাখ ৭ হাজার টাকা উদ্ধার করা হলো।
তিনি বলেন, ডাকাতির ঘটনার সময় ডাকাতদলে ছিল ১০/১২ জন। যখন মানি প্ল্যান্ট লিঙ্কের গাড়ি থেকে ট্রাঙ্কগুলোর স্থানান্তর করে ডাকাতদের ভাড়া করা হায়েস গাড়িতে তোলা হয় তখন একজন উঠতে না পেরে দৌড়াতে থাকেন। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ও আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, এই আকাশ সেই ব্যক্তি।
হারুন বলেন, ডাচ-বাংলা ব্যাংকে টাকা ডাকাতির ঘটনায় দুজন মাস্টারমাইন্ড ছিলেন। এদের মধ্যে একজন এই আকাশ, আরেকজন সোহেল রানা।
আগে গ্রেপ্তার হওয়া ৮ জনকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হারুন বলেন, আমরা বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছি। তারা জানিয়েছে, এই ডাকাতির ঘটনায় কয়েক স্তরের বিভিন্নজনের আলাদা দায়িত্ব ছিল। কেউ ছিলেন পরিকল্পনাকারী, কেউ ছিলেন মোবাইল ও সিম সংগ্রহকারী, কেউ ছিলেন কামলা ও কামলা সংগ্রহকারী।
মূল পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে আকাশ ও সোহেল রানাই প্রধান। ডাকাতির পরিকল্পনা বিষয়টি সোহেল রানা গ্রেপ্তার মো. ইমন ওরফে মিলনের সঙ্গে শেয়ার করে। ইমন জানায় সানোয়ারকে। সানোয়ার দায়িত্ব নেয় কামলা (ডাকাত) সংগ্রহের। যাদের নামে একাধিক মামলা আছে ও বিভিন্ন ডাকাতির ঘটনায় জড়িত ছিলেন তাদের মধ্যে একজন
(আগে গ্রেপ্তার) এনামুল হক বাদশা। যার নামে রয়েছে ২৭টি ডাকাতির মামলা। নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জ থেকে এরকম ৯ জনকে হায়ার করে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। দায়িত্ব হচ্ছে ওয়ান টাইম ব্যবহারের জন্য ওখান থেকে মোবাইল ও সিম কিনে নিয়ে আসবে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় হুন্ডির ৬০/৭০ লাখ টাকার ডাকাতির কথা বলে কামলাদের ঢাকায় আনা হয়েছিল দাবি করে ডিবি প্রধান বলেন, ডাকাতির ঘটনার একদিন আগে তাদের ঢাকায় আনা হয়। সানোয়ার ৮টি নতুন সিম এবং মোবাইল সেট যোগাড় করে এবং তার নিজ জেলা সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা থেকে মোট ৯ জন সদস্য সংগ্রহ করে পরে তারা প্রত্যেকেই ঘটনার ২ দিন আগে ঢাকায় একত্রিত হয়। পরিকল্পনাকারীরা তাদেরকে ঢাকায় এনে নতুন কাপড় ও জুতা কিনে দেয়।
ডাকাতির দিন আকাশ টাকা লুটের পর মাইক্রোবাসে উঠতে না পারলেও সেখান থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
ডাকাতির পর আকাশ মাইক্রোবাসে উঠতে না পারায় তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। তারা ধারণা করে যে, আকাশ ধরা পড়ে গেছে। ধরা পড়ার ভয়ে তারা তাদের কাছে থাকা অপারেশনাল মোবাইল ফোনগুলো ৩০০ ফিটে ফেলে দেয়। তাই তারা ট্রাঙ্ক ভেঙ্গে টাকা লুট করতে তাড়াহুড়া করে। পরে তারা ৩০০ ফিটের একটি নির্জন জায়গায় গিয়ে ব্যাগ এবং বস্তায় করে যার যার মতো টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়।
গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ডাকাতির ঘটনায় অংশগ্রহণকারীদের দেশের বিভিন্ন জেলা সুনামগঞ্জ, সিলেট, নেত্রকোনা, গোপালগঞ্জ ও বরিশাল থেকে সংগ্রহ করা হয়। ডাকাতির পর তারা টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করে যার যার মতো বিভিন্ন এলাকায় পালিয়ে যায় এবং বেশ কিছু টাকা বিভিন্ন খাতে খরচ করে। যার ফলে ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত, গ্রেপ্তার ও লুটের টাকা উদ্ধার করতে কিছুটা বিলম্ব হয়।
হারুন বলেন, ডাকাতির পরিকল্পনায় ছিলেন দুজন। আর বাস্তবায়নে কাজ করেছে ৪/৫ জন। এদের মধ্যে আকাশ ও সোহেল রানাই পরিকল্পনা করে ডাকাতির মূল ছক সাজায়। সোহেল রানা পূর্বে মানি প্ল্যান্ট লিঙ্ক লিমিটেডের ড্রাইভার হিসেবে চাকরি করেছেন। ড্রাইভার থাকার কারণে তিনি মানি প্ল্যান্টের খুঁটিনাটি বিষয়াদি সম্পর্কে অবগত ছিলেন। কোনো প্রকার বাধাহীনভাবেই তারা মাইক্রোবাসটির নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয়েছিলেন। ছিনতাইকৃত টাকার একটি বড় অংশ সোহেল রানা নিয়ে পালিয়ে যায়। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
আমরা মোট ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। তাদের সবাইকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা গেলে এই ডাকাতির ঘটনায় আরো কেউ জড়িত কিনা বা মানি প্ল্যান্ট লিঙ্কের কেউ জড়িত ছিল না। এই ডাকাতির ঘটনায় আরো একজন মাস্টারমাইন্ড রয়েছে। যাকে আমরা খুঁজছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:০৪:৩১ ১৬৬ বার পঠিত