নিজস্ব প্রতিনিধি : ওসমানীয় সাম্রাজ্য’ নিয়ে কথা বললেন শামীম ওসমান
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর বক্তব্যের জবাব দিয়ে এমপি শামীম ওসমান বলেন, অনেকেই বলেন আমরা নাকি নারায়ণগঞ্জে ওসমানীয় সাম্রাজ্য কায়েম করেছি। এ কথা সত্য যে আমরা সাম্রাজ্য কায়েম করেছি। আল্লাহর হুকুমে দাদা, বাবা ও ভাই ছিলেন এমপি। আমরা করেছি মানুষের মনের ভেতরে জায়গা করে নিতে। আমার বাবা কোন অলি আউলিয়া ছিলেন না। আমার বাবা কোন খেলাফত পাননি। তিনি ছিলেন একজন সাধারণ মানুষ। দেশের সবচেয়ে ধনী পরিবারের সন্তান ছিলেন। খান সাহেব ওসমান আলীর ছেলে ছিলেন আমার বাবা। আমার পিতা এমপি ছিলেন দুইবার। কিন্তু আমাদের পরিবারের জন্য এক টাকাও রেখে যাননি। ৭৫ থেকে ৭৯ পর্যন্ত এক বেলা ভাত খেয়েছি আরেকবার খেতে পারি নাই। টাকার জন্য ফরম ফিলাপ করতে পারি নাই। আমার বাবা কারো জমি বা দেবত্তোর সম্পত্তি দখল করে নাই।
বুধবার ১৫ মার্চ বিকেলে বক্তাবলীতে একটি স্কুলের অনুষ্ঠানে শামীম ওসমান এসব কথা বলেন।
এর আগে ৬ মার্চ আইভী বলেন, সারাদেশের ৬৩ জেলা চলে একভাবে, আর নারায়ণগঞ্জে চলে ওসমানীয় রাজত্ব। এই রাজত্বের মধ্যে প্রশাসন এখানে কিছুই না। তাদের কোন কর্মকান্ড নেই। তাদের যেভাবে প্রেসক্রিপশন দেয়া হয় সেভাবেই তাদের কাজগুলো হয়। আমি বুঝতে পারি না, যারা আসেন এই শহরে প্রশাসনের দায়িত্ব পালন করতে তারা কার হুকুম পালন করেন সরকারের? নাকি ওসমানীয় গডফাদারদের? শহরে হকার, যানজট দিনের পর দিন বাড়ছে। একের পর এক সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
শামীম ওসমান বলেন, আমার ভালো মানুষ দরকার। এক জায়গায় গেলাম প্রচারণা করলাম দেখা গেল সামনে মটরসাইকেলে একজন চলছে। আমি যাওয়ার পর দোকানে গিয়ে বলে, ‘আমারে চিনস, দে এক প্যাকেট সিগারেট দে’। এতে আমার পুরো অর্জন শেষ হয়ে যায়। তাই আমার এসব মাস্তান দরকার নাই। ৪০ থেকে ৫০ হাজার খারাপ মানুষের সঙ্গে আমি একাই লড়তে পারবো। কারো দরকার নাই। কারণ আমি আল্লাহর উপর ভরসা করে রাজনীতি করি। সুতরাং আমার এসব দরকার নাই। আমি অচিরেই সবগুলো এলাকাতে যাব। তাই সকলকে বলছি সন্ত্রাস, ভূমিদস্যু, চাঁদাবাজ ও ইভটিজারদের রুখে দিতে হবে।’
তিনি বলেন, আলীরটেক ও বক্তাবলীর প্রতি আমার সব সময়ে একটি দায়বদ্ধতা কাজ করে। বিগত দিনে আমি এ দুটি এলাকাকে সবচেয়ে বেশী প্রাধান্য দিয়েছি। আগামীতে বেঁচে থাকলে বক্তাবলীকে নারায়ণগঞ্জের সুন্দর এলাকা বানাবো। এজন্য এলাকাকে ভালো মানুষ প্রয়োজন।
ওই সময়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নগর ভবনে পরিচ্ছন্নকর্মীদের বিক্ষোভ চলাকালে নেতাদেরকে মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী কর্তৃক চাকরি খাওয়ার হুমকির ঘটনায় সকলের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এমপি শামীম ওসমান।
তিনি বলেছেন, সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নকর্মীরাও মানুষ। তারা তাদের দাবী নিয়ে গেল সিটি করপোরেশনের নগর ভবনে। সেখানে পুলিশ দিয়ে তাদের সরিয়ে দেওয়া হলো। আমাদের একজন যার জন্য আমরা নৌকা মার্কায় ভোট চেয়েছিলাম। আপনারা সকলে ভোট দিয়ে পাশ করিয়েছেন। এখন তিনি আপনাদের চাকরি খাওয়ার হুমকি দেয়। আমি এজন্য সাংবাদিকদের মাধ্যমে সকলের কাছে ক্ষমা চাই। হাতজোড় করে ক্ষমা চাই। আমি এ বিষয়ে বেশী কিছু বলতে চাইনি কিন্তু যেহেতু সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেছে সেহেতু উত্তর দিয়েছি।
এর আগে মঙ্গলবার ১৪ মার্চ দুপুর ৩টায় নগর ভবনে তিন শতাধিক পরিচ্ছন্নকর্মী ঝাড়ু নিয়ে প্রতিবাদ স্বরুপ আবর্জনা ফেলে প্রতিবাদ জানিয়ে নগর ভবন ঘেরাও করেন।
মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় নগর ভবন থেকে বিদেশী দাতা সংস্থার একটি প্রতিনিধি দল গাড়িযোগে প্রস্থানের সময়ে সামনে ময়লা আবর্জনা ফেলে দেওয়া হয়। পরিচ্ছনকর্মীরা ওই দাতা সংস্থার গাড়ি আটকে দেওয়ার চেষ্টা করলে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি আনিচুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশ এসে গাড়ি যেতে সহায়তা করে। ওই সময়ে হৈ চৈ শুনে অফিস কক্ষ থেকে নিচে নেমে আসেন আইভী।
এসময় নগর ভবনে ময়লা রেখে প্রতিবাদ করায় উত্তেজিত হয়ে যান তিনি। আইভী বলেন, আমার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে চাও করো, মেয়রকে ঘেরাও করে রাখতে চাও করো। এই নগর ভবনে ময়লা ফেলার দুঃসাহস দেখালে কেন? আর খাইতে ভাত পাওনা, আন্দোলন করো, এত দামি মোবাইল পাইলা কই? বাংলাদেশ সরকার কোনও সিটি করপোরেশনের তোমাদের চাকরি পারমানেন্ট করেনি। তাহলে নগর ভবনে তোমরা ময়লা ফেলার দুঃসাহস কেন দেখালে? এটা কোন ধরনের আচরণ? গত তিন মাস আগে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের সচিব ও পরিচ্ছন্নকর্মীদের বেতন বাড়ানো হয়েছে। তবে ফান্ডে টাকা না থাকায় তিন মাস ধরে কাউকেই বর্ধিত বেতন দেওয়া যাচ্ছে না। আর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনসহ কোনো সিটি করপোরেশনেই পরিচ্ছন্নকর্মীরা চাকরিতে স্থায়ী না। সরকার কাউকেই স্থায়ী করে নাই, তোমাদের আমি রাখলেও রাখতে পারি, নাও রাখতে পারি।
আইভী আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি শিমুল দাস, সাধারণ সম্পাদক কিশোর লালসহ সেখানে উপস্থিত মামুন চন্দ্র দাসকে চাকরি থেকে বহিষ্কারের হুমকি দেন।
বাংলাদেশ সময়: ২২:২৩:৩৯ ২০১ বার পঠিত