সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে জমিতে সেচ সুবিধা নিশ্চিত হওয়ায় নওগাঁর বরেন্দ্র এলাকার কৃষিতে এসেছে আমূল পরিবর্তন। বিদ্যুৎ-সংকট, লো-ভোল্টেজ ও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধিতে বিপাকে পড়া চাষিদের আশা জাগিয়েছে এ প্রকল্প।
চলতি মৌসুমে জেলায় সৌরবিদ্যুতের সেচ প্রকল্পের অধীনে সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমিতে দেয়া হচ্ছে সেচ সুবিধা। কৃষিসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারে জাতীয় গ্রিডে চাপ কমছে আর সাশ্রয় হচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ।
সরেজমিনে নওগাঁর বরেন্দ্র এলাকায় দেখা যায়, ধান, ভুট্টাসহ নানা ফসলের বাড়ন্ত ক্ষেত। যতদূর চোখ যায় ফসলের সবুজ সমারোহ। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে রোপণ করা ধানের গোছালিগুলো যতই ডানা মেলছে ততই পোক্ত হচ্ছে চাষির স্বপ্ন। এ স্বপ্নের বড় বাধা বিদ্যুৎ-সংকট, লো ভোল্টেজ ও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি।
আত্রাইয়ের শুঁটকি গাছায় ফসলের মাঠে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকা সৌর প্ল্যান্ট। ছবি: সময় সংবাদ
তবে এ বাধার বাইরে নওগাঁর আত্রাইয়ের শুঁটকি গাছা মাঠের দুই হাজার বিঘা জমির চাষিরা। কেননা, এসব মাঠে সূর্যের আলো থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ব্যবহারে জমিতে দেয়া হচ্ছে সেচ। বিস্তীর্ণ মাঠের এ সবুজায়ন নিশ্চিত হয়েছে নিরবচ্ছিন্ন সৌরবিদ্যুতের সেচ ব্যবস্থায়। সৌর বিদ্যুৎ প্যানেলে উৎপন্ন হচ্ছে ১৫ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ। ফলে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের শঙ্কামুক্ত এ ব্যবস্থায় স্বল্প খরচে ফসল ঘরে তোলায় বেশ খুশি এখানকার চাষিরা।
কৃষকদের মধ্যে জাফির, জায়েদসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নাম মাত্র খরচে এখন নিরবচ্ছিন্ন জমিতে সেচ পাচ্ছেন তারা। এমনকি নেই বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার শঙ্কাও।
চলতি মৌসুমে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নদী থেকে এলএলপি পাম্পের সাহায্যে জমিতে সেচ দিতে স্থাপন করে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প। সূর্যের আলো ছড়ানোর পর থেকেই এ ব্যবস্থায় পাইপের মাধ্যমে নদী থেকে জমিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পৌঁছে যাচ্ছে পানি। নামমাত্র মূল্যে সেই পানি ব্যবহারে ভরে উঠেছে কৃষকের ফসলের মাঠ।
নদীর ধার ঘেঁষে এসব প্ল্যান্টে ৪৪টি করে সৌর প্যানেল রয়েছে। ছবি: সময় সংবাদ
সৌরবিদ্যুৎ প্যানেলে ব্যাটারি যুক্ত করার মাধ্যমে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ধরে রাখা গেলে এর সুফল আরও প্রসারিত হবে বলে জানান নলকূপ অপারেটর মো. শাহজাহান আলী।
সূর্যের আলো ব্যবহারের মাধ্যমে একদিকে জাতীয় গ্রিডের ওপর চাপ কমছে অন্যদিকে বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হওয়ায় আগামীতে এ প্রকল্প আরও বাড়ানোর কথা ভাবছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।
নওগাঁ বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আগামীতে আরও বেশকিছু এলাকায় এ প্রকল্প চালু করা হবে।
সৌরবিদ্যুতের একটি প্লান্টে ৪৪টি করে রয়েছে প্যানেল। আর এসব প্যানেলে উৎপাদন হচ্ছে ১৫ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ। সেভেন হর্স মটরের মাধ্যমে এ বিদ্যুৎ ব্যবহারে পাইপের মাধ্যমে তোলা হয় পানি।
বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও সেচ প্রকল্পের অধীনে ১৫৪টি সৌরবিদ্যুতের প্যানেলের মাধ্যমে জেলায় চলতি মৌসুমে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩:০৩:০৭ ১৫১ বার পঠিত