শুক্রবার, ২৪ মার্চ ২০২৩

সরিষাবাড়ীতে হাটবাজার ইজারায় অনিয়ম কোটি টাকার উপরে রাজস্ব হারালো সরকার

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » সরিষাবাড়ীতে হাটবাজার ইজারায় অনিয়ম কোটি টাকার উপরে রাজস্ব হারালো সরকার
শুক্রবার, ২৪ মার্চ ২০২৩



সরিষাবাড়ীতে হাটবাজার ইজারায় অনিয়ম কোটি টাকার উপরে রাজস্ব হারালো সরকার

ইসমাইল হোসেন জামালপুর প্রতিনিধি : জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে উপজেলার ১০টি হাট-বাজারের ইজারা প্রতিবছর যথাযথ নিয়মে বিক্রি করা হলেও এবারের দরপত্র বিক্রিতে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিশেষ করে উপজেলার‍‍‌‍‌ পিংনা ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী গোপালগঞ্জ হাটের দরপত্র বিক্রিতে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে বলে প্রশ্ন তুলেছেন সচেতন মহল।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে পিংনা গোপালগঞ্জ হাটের দরপত্র বিক্রি হয়েছিল প্রায় ১ কোটি ৯১ লক্ষ ৫২০ টাকায়। এবার সেই একই দরপত্র বিক্রি হয়েছে মাত্র ৮৮ লক্ষ ৬০ হাজার টাকায়। এতে সরকার ভ্যাট ও ট্যাক্সসহ প্রায়ই দেড় কোটি টাকার উপরে রাজস্ব হারিয়েছে। দরপত্রে এমন ধস নামার কারণ হিসেবে জানা গেছে ,স্থানীয় সাংসদ সদস্য ডাঃ মুরাদ হাসান এমপির প্রতিনিধি ও পৌর ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাখাওয়াত আলম মুকুলের প্রভাবশালী নেতৃত্বে স্থানীয় অন্যান্য ইজারাদাররা হাট বাজারের দরপত্র কেনার ইচ্ছে থাকলেও অনেকেই কিনতে পারেনি। আবার অনেকেই দরপত্র কিনার পরেও দরপত্রের বাক্সে দরপত্র ফেলতে পারেনি। তাই এসব ইজারাপ্রত্যাশী ভুক্তভোগীরা দরপত্রে অংশে নিতে পারেননি বলে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

জানা যায়, জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ১লা মার্চ উপজেলার ১০টি হাট-বাজারের ইজারার জন্য জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ১৫ই মার্চ ছিল দরপত্র বিক্রি ও দরপত্র বাক্সে জমা দেওয়ার শেষ দিন। দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ১৫ই মার্চ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এবং সরিষাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে রাখা দরপত্র বাক্সে যাতে আর কেউ দরপত্র জমা দিতে না পারে সেজন্য ওইদিন উভয় স্থানে স্থানীয় প্রভাবশালী পৌর কাউন্সিলর সাখাওয়াতুল আলম মুকুল সহ তার লোকজন দিনভর পাহারা দেয় মেইনগেট সহ ভবনের সকল তলায়।

আর এভাবেই সাখাওয়াতুল আলম মুকুল তার আকাঙ্খিত মেসার্স জান্নাত এন্টারপ্রাইজ নামে হাটবাজারে সবচেয়ে বড় ইজারার দরপত্রটি পেয়ে যান। এছাড়াও, গোপালগঞ্জ হাটের দরপত্রসহ তার আয়ত্বের আরো দুটি প্রতিষ্ঠানের নামে ইজারার দরপত্রের চেয়ে কম রেটে দরপত্র বাক্সে জমা দেওয়া হয়। বাকি নয়টি হাটবাজার ইজারা ছোট হওয়ায় সেগুলোতেও স্থানীয় কাঙ্খিত ইজারাদাররা তাদের দরপত্র জমা দিতে পারেননি।

সূত্র জানান, উপজেলা প্রশাসনের যোগসাজসে ১লা মার্চ থেকে ১৪ই মার্চ পর্যন্ত ১০টি হাটের জন্য ৩ লাখ ১৭ হাজার ২০০ টাকায় ৬৫টি ফরম বিক্রি করা হলেও দরপত্র বাক্সে জমা পড়ে মাত্র ৩৫টি দরপত্র। তাদের মধ্যে ইউএনও উপমা ফারিসা ও কাউন্সিলর সাখাওয়াতুল আলম মুকুলের পছন্দের ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ ফরম জমা দিতে পারেননি। পরবর্তীতে সাখাওয়াতুল আলম মুকুল গোপালগঞ্জ হাটসহ অন্যান্য হাটগুলো উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগসাজস করে নিজের মধ্যে ইজারা প্রদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন করিয়ে নেন। এতে করে গোপালগঞ্জের একটি হাট থেকেই সরকার ১ কোটি ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা সরকারের রাজস্ব আদায় কমে গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাট-বাজার ইজারার দরপত্র ফরম কিনতে গিয়ে ফিরে যাওয়া কয়েকজন জানান, ফরম কিনতে গিয়েছিলাম। উপজেলা চত্ত্বর থেকে সাখাওয়াতুল আলম মুকুলের সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা বলে আমাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। ওই কাউন্সিলরের প্রায় শতাধিক ক্যাডার ওইসময় সেখানে অবস্থান করছিল। যার ফলে আমরা দরপত্র ফরমই কিনতে পারিনি।

এ বিষয়ে উপজেলার ডোয়াইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন রতন বলেন, চাপারকোনা হাট-বাজারের দরপত্র ফরম কিনতে গিয়েছিলাম। কিনতে পারিনি। কাউন্সিলর মুকুলের সঙ্গে কথা বলার জন্য আমাকে সেখান থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

অভিযোগ প্রসঙ্গে স্থানীয় কাউন্সিলর সাখাওয়াতুল আলম মুকুল বলেন, আমি নিয়ম মাফিক হাট-ইজারা নিয়েছি। গত বারের চেয়ে এবারের মূল্য কম হাওয়ায় তিনি বলেন, যারা দরপত্র শিডিউল কিনেছিল তাদেরকে এবং প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ৮৮ লাখ ৬০ হাজার টাকায় গোপালগঞ্জ হাটটি আমি নিয়েছি। সব ম্যানেজ করা আছে। লিখেও কোন লাভ হবে না বলে জানান তিনি।

হাটবাজার ইজারার অনিয়ম প্রসঙ্গে সরিষাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মতর্তা উপমা ফারিসাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও কল রিসিভ করেননি তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪:২৭:১৫   ২৪৪ বার পঠিত