সুজন মাহমুদ যশোর প্রতিনিধি : নীতিমালা অনুযায়ী অতিরিক্ত ক্লাসের ক্ষেত্রে একটি বিষয়ে মাসে কমপক্ষে ১২টি ক্লাস নিতে হবে, প্রতি ক্লাসে সর্বোচ্চ ৪০ জন শিক্ষার্থী অংশ নিতে পারবে।
ঝিকরগাছা বদরুদ্দীন মুসলিম (বিএম) হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুস সামাদ জানান, কোচিং শেষ হলে ঐ মেয়ে ৩ বান্ধবী মিলে বাহিরে গেছে। ওখানে নাকি সেই বন্ধুর সাথে টিকটক করা নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়েছে। তার সম্পর্ক আছে তামিমের সাথে শোনা গেছে। যে এ্যারেস্ট হয়েছে। সে নাকি একটা থাপ্পড় মেরেছে। তখন স্কুলে এসে ব্যাগ নিয়ে বলছে আমার শরীর খারাপ প্রাইভেট পড়বো না। যেটা আমরা ফুটেজে দেখেছি। ব্যাগ নিয়ে সোজা বাড়ি গিয়ে আত্মহত্যা করেছে। এই হল মূল কাহিনী, এর বাহিরে আর কোনো কাহিনী পাওয়া যায়নি। ঘটনার বিষয় নিয়ে আমরা মানববন্ধন করতে চেয়েছিলাম।
কিন্তু আমাদের ওসি সাহেব বলল, যেহেতু আসামী ধরা পড়ে গেছে অতএব এখন মানববন্ধন করার দরকার নেই। এখন আমাদের কাছে প্রশাসন যত তথ্য চাচ্ছে আমরা সেটা দিচ্ছি। অকালে চলে যাবে এমন একটা মেয়ে এটা হবে না। আমরা এটার বিচার চাই। তখন সংবাদকর্মীরা স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত থাকলেও সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করে স্কুলে কোচিং করানোর বিষয়ে তিনি বলেন, কোচিংয়ের নীতিমালা তুমি মনে হয় জানো না। এই কোচিং সেই কোচিং না। এই কোচিংটা হচ্ছে যারা বিভিন্ন বাসা বাড়ি ভাড়া নিয়ে কোচিং করায় না এটা এদের কোচিং। আমাদের স্কুল কেন্দ্রিক কোচিং করানোর জন্য সরকারি নীতিমালা আছে। সেই নীতিমালার আলোকেই আমরা কোচিং করায়। বন্ধের দিনও কোচিং করানো যাবে। কোচিংটা হলো শিক্ষার্থীদের একটা ঘাটতি পূরণের জন্য। যেমন যশোরের সব প্রতিষ্ঠানই কোচিং করে পুলিশ লাইন, কালেক্টরেট স্কুল, শাহিন স্কুল, আমাদের এমএল স্কুল, গালর্স স্কুল করে, আমরা করি, সম্মিলনী করে, টাওরা করে, পারবাজার করে।
এখন শিক্ষার্থীদের এগিয়ে নিয়ে যেতে আমাদের কোচিং করাতে হয়। স্কুলের শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার পরেও পরের দিন মঙ্গলবারও স্কুলে কোচিং করানোর বিষয়ে তিনি বলেন, আমার আসতে দেরি হয়েছে বলে স্কুলে কোচিং হয়েছে। তবে সহকারী প্রধান শিক্ষক ছিলো। তার দায়িত্ব ছিলো আমাকে জানিয়ে বন্ধ করে দেওয়া। কিন্তু সে বন্ধ দেয়নি। ভূল তো হয়ই। তবে আমারা আজকে (বুধবার) কোচিং বন্ধ করে দিয়েছি। আগামী সপ্তাহ থেকে আবারও কোচিং চলবে বলে আশা ব্যক্ত করেছেন স্কুলের এই প্রধান শিক্ষক। তবে এমএল স্কুলের বিষয় খোজ খবর নিয়ে জানা গেছে তারা কোচিং বাদে স্বাভাবিক রুটিনে ক্লাস হচ্ছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কামরুজ্জামান মোঃ জাহাঙ্গীর হুসাইন মিয়া বলেন, স্কুলের শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার বিষয়ে আমি আগে জানতাম না। স্থানীয় একজন সাংবাদিক আমাকে ফোন দিয়ে জানান বিষয়টি। পরবর্তীতে আমি জেলা শিক্ষা অফিসার কে অবহিত করি। বুধবারের পত্রিকাতে দেখি যে ইভটিজিংয়ের শিকার হয়েছে এবং এই বিষয়ে মঙ্গলবার বিক্ষোভ হয়েছে। স্কুলে কোচিং করানোর বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, বর্তমানে সরকারি ভাবে স্কুল বন্ধ। তারা যে স্কুলে কোচিং করাচ্ছে সেটার বিষয়ে আমাদের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে করতে হয়। কিন্তু তারা সেটা করিনি। তারা তাদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান নিজস্ব সুবিধার জন্য করে থাকে। তবে ওখানে যে কোচিং চলছে সেটা আমার জানা ছিলো না। যখন এমন ঘটনা ঘটার বিষয়ে জানজানি হলে তখন আমি জানতে পারলাম ওখানে কোচিং হচ্ছে। প্রতিষ্ঠান প্রধান একটা নীতিমালার আলোকে কোচিং করাতে পারে। তাতে কোনো সমস্যা নেই। এখন সে নীতিমালার আলোকে করলো, না নীতিমালার বাহিরে করলো সেটার বিষয়ে আমাদের নলেজ দিতে হয়। স্কুল সবেমাত্র বন্ধ হয়েছে তো, এখন বন্ধের পরপরই কোনো বন্ধ না দিয়ে উনি কন্টেনিউ করছে এই বিষয়টা আমার জানা নেই। এটার বিষয়ে টোটালী জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর জানানো হয়েছে।
থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সুমন ভক্ত জানান, ঘটনার বিষয়ে প্রথমে অপমৃত্যুর মামলা হয়। অপমৃত্যু মামলার বিষয়ের উপর তথ্য উদঘাটন করতে গিয়ে আমাদের সামনে আসল ঘটনা আসে। উক্ত ঘটনার বিষয়ে অনির মা কনিকা রায় বাদী হয়ে বুধবার একটি মামলা দায়ের করেন। আর সেই মামলার উপর ভিত্তি করে মামলার সাথে সংযুক্ত থাকা একজনকে আটক করা হয়েছে এবং অপর আসামীদেরকে আটকের চেষ্টা অব্যহত রয়েছে। আশা করছি আমরা অতিদ্রুত অন্যান্য আসামীদেরকে ধরতে সক্ষম হবো।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:১৫:৪১ ১৬৫ বার পঠিত