চলতি মৌসুমে প্রতিদিন প্রায় ২৫ লক্ষাধিক টাকার লালমি ফল বাজারজাতকরণ হচ্ছে ফরিদপুরের সদরপুর থেকে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাইকাররা এখানে এসে ট্রাকে করে নিয়ে যাচ্ছেন নিজ নিজ গন্তবে।
রমজানের শুরুতেই সদরপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে কৃষকদের দেখা যায় লালমি ক্ষেতে কাজ করতে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ক্ষেত থেকে লালমি তুলে রাস্তার পাশে জড়ো করে বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে। এরই মধ্যে উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ইউসুফ মোল্লার ডাঙ্গিতে সব থেকে বেশি লালমির আমদানি হয়। যেখান থেকে ট্রাক ট্রাক লালমি দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সদরপুর উপজেলার ইউসুফ মোল্লার ডাঙ্গিতে আশের পাশের মাঠ থেকে প্রতিদিন চাষিরা তাদের এই ফল সংগ্রহ করে নিয়ে আসে। সেখানে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পাইকাররা সকাল থেকেই ক্রয় কতে থাকে লালমি। আকার ভেড়ে শ (একশ টি) বিক্রয় হয় হাজার টাকা থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত।
এক একটি ট্রাকে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা মূল্যের লালমি বহন করে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রতিদিন গড়ে একশ থেকে একশ ২৫ ট্রাক লালমি বিক্রয় হয়। যার বাজার মূল্য ২৫ লক্ষাধিকের বেশি । স্বল্প সময়ে এই চাষের মধ্যে দিয়ে স্থানীয় কৃষকরা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে। জেলায় চলতি মৌসুমে সাড়ে ৫শ হেক্টর জমিতে লালমির চাষ হয়েছে।
জেলার হাট কৃষ্ণপুর এলাকার চাষি জিয়াউর রহমান, তরিকুল মোল্লা, হাফিজ ফকিরসহ বেশ কয়েক জন চাষির সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, ‘এই ফলটি ৬০ দিনের মধ্যেই বাজারজাত করা যায়। প্রতিটি লালমি আকার ভেদে পাইকারি ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বিক্রয় করতে পারি। ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গার পাইকার ক্রেতারা এখানে এসে লালমি কিনে ট্রাকে করে নিয়ে যায়।’
ঢাকার শ্যামবাজার থেকে আসা পাইকারি ক্রেতা হায়দার হোসেন, শ্যামল সাহা জানালেন, রমজান মাস জুড়ে আমরা সদরপুরে আসি লালমি কিনতে, আমাদের মতো আরো অনেক ক্রেতা এই জায়গা থেকে লালমি ট্রাকে করে ঢাকা সহ বিভিন্ন জায়গা নিয়ে বিক্রয় করি। এতে আমরা যেমন লাভবান হচ্ছি তেমনি চাষিরাও ।
ফরিদপুরের কৃষকের ‘উদ্ভাবন’ করেছেন বাঙ্গিসদৃশ ফল ‘লালমি’। এটি দেখতে বাঙ্গির মতো, তবে বাঙ্গির মতো এর গায়ে শিররেখা নেই। গায়ের রং এবং গন্ধও আলাদা। স্বাদেও পার্থক্য আছে। বাঙ্গি রবি মৌসুমের ফল, পাকতে শুরু করে চৈত্র মাসে। আর লালমির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, শীতের দুই মাস বাদে বছরের যেকোনো সময় এটি চাষ করা যায়। রোপণের ৬০ দিনের মধ্যে লালমি পেকে যায়। তাই কৃষকেরা এমন সময় এর বীজ বপন করেন, যাতে রমজান মাসে ফলগুলো বাজারে তোলা যায়। ফরিদপুরে উৎপাদিত ১৮টি ফলের মধ্যে আর্থিক বিবেচনায় বাঙ্গি ও লালমির অবস্থান ৫ নম্বরে। এ কারণে এই ফল চাষে মানুষের আগ্রহ বেশি থাকাই স্বাভাবিক।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান তিতাস মিয়া জানান, ১৫ বছর আগে সদরপুরের কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের যাত্রাবাড়ী এলাকায় আলিম খাঁ নামের এক কৃষক প্রথম লালমি চাষ করেন। আলিম খাঁ পরীক্ষাগারে গবেষণা ও সংকরায়ণ করে লালমি উদ্ভাবন করেছিলেন—বিষয়টি মোটেও সে রকম নয়। তবে আলিম খাঁ হয়তো প্রাকৃতিকভাবে সংকরায়িত এই ফলটির ধরন প্রথম লক্ষ করেন এবং এর চাষ করেন। তাঁর সাফল্য দেখে অন্য কৃষকেরাও লালমি চাষে উৎসাহিত হন।
ফরিদপুর কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ জিয়াউল হক বলেন, ‘লালমির জন্য প্রসিদ্ধ জেলার সদরপুর উপজেলা। রমজানকে সামনে রেখে চাষীরা এই ফল চাষাবাদ করে, উৎপাদনও বেশ ভাল হয়। প্রতিদিন এই উপজেলা থেকে ১০০ থেকে ১২৫ ট্রাক ফল যায় দেশের বিভিন্ন জেলাতে।’
বাংলাদেশ সময়: ১২:৫৩:৪৯ ১৮৩ বার পঠিত