মঙ্গলবার, ৯ মে ২০২৩

সরিষাবাড়ীর ঐতিহ্যবাহী সোনালী ইতিহাস

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » সরিষাবাড়ীর ঐতিহ্যবাহী সোনালী ইতিহাস
মঙ্গলবার, ৯ মে ২০২৩



সরিষাবাড়ীর ঐতিহ্যবাহী সোনালী ইতিহাস

ইসমাইল হোসেন জামালপুর প্রতিনিধি : বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ২০ তম জেলা হচ্ছে জামালপুর জেলা। এ জেলাটি ১৯৭৮ সালে ২৬ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ থেকে পৃথক করে বাংলাদেশের ২০ তম জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এ জেলার ৭টি উপজেলার মধ্যে সরিষাবাড়ী একটি অন্যতম উপজেলা। এটি ৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। এটি জামালপুরের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত।

এ উপজেলার উত্তরে মাদারগঞ্জ ও জামালপুর সদর উপজেলা, দক্ষিণে টাঙ্গাইল জেলার ভূঞাপুর,পূর্বে গোপালপুর ও ধনবাড়ী উপজেলা এবং পশ্চিমে বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি ও সিরাজগঞ্জ জেলার সদর ও কাজীপুর উপজেলা অবস্থিত।

এ উপজেলার তৎকালীন ইতিহাস হতে জানা যায়, বৃটিশ শাসনামলে বর্তমান ১নং সাতপোয়া ইউনিয়নের অন্তর্গত চর সরিষাবাড়ীই ছিল আদি সরিষাবাড়ী। খরস্রোতা যমুনার কড়াল গ্রাসে আদি সরিষাবাড়ী নদীগর্ভে চলে যায় এবং পরবর্তীতে ধীরে ধীরে গড়ে উঠে আজকের আধুনিক সরিষাবাড়ী।

জানা যায়, তখন নদীর নাব্যতা থাকায় চলাচল করতো ছোট-বড় নৌকা সহ লঞ্চ, ষ্টীমার, জলজাহাজ। নদী বিধৌত এলাকা হওয়ায় সরিষাবাড়ী উপজেলার পিংনা, পোগলদিঘা, আওনা, কামরাবাদ ইউনিয়নের অধিকাংশ ভূমিতেই ব্যাপক পরিমাণে সরিষা আবাদ হতো। এছাড়াও বীর অঞ্চলে প্রচুর সরিষা হতো। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল হতে বাণিজ্য করার লক্ষ্যে ব্যবসায়ীরা সরিষা কিনতে আসত। সে সময় হতেই এই স্থানটির নাম রাখা হয় সরিষাবাড়ী। তবে কে, কবে, কোথা্য়, কোন সময়ে ও কোন তারিখে এই স্থানটির নামকরণ করেন তার সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য আজও পাওয়া যায়নি।

তবে যমুনা বিধৌত ঝিনাই, সুবর্নখালী নদী বেষ্টিত এই সরিষাবাড়ী পূর্বে কাগমারী পরগনায় অবস্থিত ছিল। সরিষাবাড়ী পাটশিল্পের জন্য ব্যাপক সমৃদ্ধশালী ছিল। জানা যায় এখানে ২২টি মত পাট কুঠি বা কোম্পানি ছিল। প্রায় ২৩,০০০ (তেইশ) হাজার শ্রমিক পাটের কুঠিগুলোতে কর্মরত ছিল। বাংলাদেশের পাট ব্যবসায়ী কেন্দ্র হিসেবে নারায়নগঞ্জের পরেই সরিষাবাড়ীর নাম ও স্থান ছিল। কিন্তু কালের প্রবর্তনে আজ ৯০ শতাংশই পাট কোম্পানিগুলো বিলুপ্তি পথে।

জানা যায়, সরিষাবাড়ী উপজেলার ২নং পোগলদিঘা ইউনিয়ন উপজেলার সর্ববৃহৎ ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নে এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম ইউরিয়া সার কারখানা যমুনা ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিঃ অবস্থিত। এটি মূলত যমুনা নদীর পানি সরবরাহের উপর ভিত্তি করেই যমুনা নদী হতে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরত্বে ১৯৯২ সালে জামালপুরের সরিষাবাড়ির তারাকান্দিতে স্থাপিত হয়। এ ফ্যাক্টরীর বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ৫,৬১,০০০ মেট্রিক টন।

এছাড়াও সরিষাবাড়ী ৩নং ডোয়াইল ইউনিয়নে প্রচুর হিন্দুদের বসবাস ছিল। ডোয়াইলে প্রচুর মুগ ডাল চাষ হতো বলে বৃহত্তর ময়মনসিংহে ডোয়াইলের মুগ ডাল সোনামুগ হিসেবে ছিল প্রসিদ্ধ।

সরিষাবাড়ী ৪নং আওনা ইউনিয়নে পুরাতন জগন্নাথগঞ্জ ঘাট এলাকায় ছিল রেলফেরি ষ্টেশন। বৃটিশ শাসনামলে ১৮৯৯ সালে জামালপুর থেকে তারাকান্দি হয়ে জগন্নাথগঞ্জ ঘাট পর্যন্ত রেললাইন তৈরি করা হয়। ঈশ্বরদী-সিরাজগঞ্জ লাইন তৈরি হলে রেলওয়ের নিজস্ব রেলফেরি দ্বারা যমুনা নদী পার হয়ে মালামাল ও যাত্রীরা সিরাজগঞ্জ ঘাট রেলওয়ে স্টেশন হয়ে উত্তরাঞ্চল ও কলকাতা পর্যন্ত চলাচল করতো। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সেতু তৈরি হওয়ার পর এবং যমুনা নদীর নাব্যতা হারানোর ফলে এ রেলফেরি ঘাটটি ধীরে ধীরে বিলুপ্ত যায়।

এছাড়াও সরিষাবাড়ীর ৫নং পিংনা ইউনিয়নে ছিল বৃটিশ শাসনামলে ফৌজদারী আদালত। পিংনা মহাকুমা শহরে প্রথম ১৮৮৩ সালে টেলিগ্রাম চালু এবং ১৯৭২ সালে সাব পোস্ট অফিস স্থাপিত হয়। সরিষাবাড়ীর পিংনায় এরও আগে টেলিগ্রাম ও পোস্ট অফিস স্থাপিত হয়। যে পোস্ট অফিসে মহাকবি কায়কোবাদ, পোস্টমাস্টার হিসেবে থাকাকালীন অবস্থায় তার বিখ্যাত আযান কবিতা রচনা করেন। পিংনাতে এখনও কুম্ভকার সম্প্রদায়ের হাতে তৈরি হয় মাটির হাড়ি-পাতিল। মৃৎশিল্পের জন্য পিংনা ইউনিয়ন এখনো বিখ্যাত। ১৮৯৬ সালে পিংনা উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। পিংনার অদূরে রসপাল গ্রামে ৫ গম্বুজ বিশিষ্ট কারুকার্যময় মসজিদ নির্মাণ করা হয়। এ মসজিদকে কেন্দ্র করেই এখানে ইসলামের প্রচার ও প্রসার লাভ করে। ধারণা করা হয় রসপাল মসজিদ জামালপুর জেলার প্রথম ইট নির্মিত ইমারত। এ মসজিদের পূর্ব পার্শ্বে সপ্তাহে দু’দিন হাট ও প্রাত্যহিক বাজার বসে। এটি পিংনার ঐতিহ্যবাহী গোপালগঞ্জ হাট নামেই পরিচিত।

সরিষাবাড়ী উপজেলার ৮নং মহাদান ইউনিয়নের খাগুড়িয়া গ্রামের নামানুসারে ঐতিহ্যবাহী খাগুরিয়া কালী মন্দিরের নামকরণ করা হয়। সুদূর ভারত হতে এখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন উপাসনার জন্য আসে এবং তিনদিনব্যাপী মেলা বসে। এই মন্দিরের নামকরণ করা হয়েছে শ্রী শ্রী খাগড়িয়া কালী মাতা মন্দির।এছাড়া বছরে আরো ৪টি মাঝারী হিন্দুধর্মীয় অনুষ্ঠান এখানে অনুষ্ঠিত হয়। রাজনৈতিক বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় ১৩৩৫ বাংলা সনে প্রতিষ্ঠিত শ্রী শ্রী
রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম বিভিন্নভাবে বিভিন্ন সময় স্থানান্তরিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরিষাবাড়ী পৌর সভার ৪নং ওয়ার্ডে অবস্থিত। বাংলাদেশের ২৩টি
প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এটি একটি মানব সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান।

সরিষাবাড়ী সদরে দুটি বাজার দুই দিকে অবস্থিত।একটি শিমলা বাজার ও অপরটি রামনগর বাজার। পাকিস্তান আমলের শেষের দিকে মরহুম রিয়াজ উদ্দিন তালুকদার রামনগরের নাম পরিবর্তন করে
আরামনগর বাজার নামকরণ করেন। এছাড়াও ১৮৯৯ সালে সরিষাবাড়ী উপজেলার জগন্নাথগঞ্জ পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়। এসময় এই লাইনের স্টেশন হিসেবে সরিষাবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন তৈরি করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৫:১০:৫৫   ২৪৫ বার পঠিত