তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন কবির খোন্দকার বলেছেন, বৈশ্বিকভাবে ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সংরক্ষণে আর্কাইভের ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং স্বীকৃত।
তিনি বলেন, ‘আর্কাইভ আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, আমাদের পরিচিতি সবকিছুই সংরক্ষণ করে। আর এই আর্কাইভের স্বপ্ন দেখেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭৫ জানুয়ারি থেকে তিনি এই আর্কাইভের কার্যক্রম শুরু করেন। কিন্তু ১৫ আগস্টের বিয়োগান্তর দুর্ঘটনার পর আর্কাইভ প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম থমকে যায়। জাতির পিতার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত উদ্যোগে বর্তমান আর্কাইভটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তিনি একজন সিনেমা লাভিং পার্সোনালিটি।’
আজ রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ কার্যালয়ে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের ৪৫তম প্রতিষ্টাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সচিব এসব কথা বলেন।
সম্প্রচার সচিব বলেন, যেকোনো বিষয়ে যদি একটি পরিপূর্ণ ধারণা আমরা পেতে চাই প্রথমে এর জন্য প্রয়োজন হবে তথ্য, যেটাকে আমরা ডাটা বলি। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ আর এই ডাটাটি যদি অডিও বা ভিউজুয়াল হয় এবং এটি যদি প্রাচীন এবং দুর্লভ হয় তাহলে এর মূল্য অনেক বেশি। এ ধরনের অমূল্য তথ্যাদি সংরক্ষণের বিশেষায়িত কাজটি করে আর্কাইভ। ১৯৮৪ সালে এটির নামকরণ করা হয় বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ। মূলত আর্কাইভ হচ্ছে সংরক্ষণাগার বা স্মৃতি সংরক্ষণাগার।
মো. হুমায়ুন কবির খোন্দকার বলেন, বিনোদনের নিত্যনতুন বিষয় অনুসন্ধানী মানুষ অষ্টাদশ শতাব্দীতে চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করে। যার আবেদন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগেনি। ধারাবাহিকভাবে এসকল স্মৃতি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব থেকে পৃথিবীর প্রথম ফিল্ম আর্কাইভ ১৯৩৫ সালে ফ্রান্সে প্রতিষ্ঠিত হয়।
তিনি বলেন, চলচ্চিত্র একটি শক্তিশালী গণমাধ্যম। এর প্রতিটি ফ্রেমের মধ্যে সময়কে অর্থাৎ ইতিহাসকে ধারণ করা হয়। সেই বিবেচনায় দেশব্যাপী ফিল্ম আর্কাইভের যে প্রয়োজনীয়তা এটা অপরিহার্য। যে কোন দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি বুঝতে গেলে সিনেমা দেখেই বোঝা যায় এইখানের সমাজ ব্যবস্থা কেমন ছিল।
মো. হুমায়ুন কবির খোন্দকার বলেন, বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ বর্তমানে পরিপূর্ণরূপ পেয়েছে। এটি আরো ভালো করার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ হচ্ছে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের যে অডিও ভিজুয়াল দলিলগুলো রয়েছে, এগুলো সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করার জন্য সরকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। বাঙলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ এই ফিল্মগুলো সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করবে এবং এই আর্কাইভকে আরো গুরুত্বপূর্ণ করে গড়ে তুলবেন।
চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নে বর্তমান সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলচ্চিত্র শিল্প উন্নয়নের জন্য, এটার সমৃদ্ধির জন্য, চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন।
বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ মহাপরিচালক মো: জসীম উদ্দিনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রনালয়ের সাবেক সচিব কামরুন নাহার, অতিরিক্ত সচিব (চলচ্চিত্র) ড. মো: জাহাঙ্গীর আলম, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী।
অনুষ্টানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, প্রকল্প পরিচালক ড. মো. মোফাকখারুল ইকবাল, চলচ্চিত্র প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক স, ম, গোলাম কিবরিয়া, জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিউটের মহাপরিচালক ফায়জুল হক, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি)’র মহাপরিচালক একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক ও কবি জাফর ওয়াজেদ ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সমিতির সভাপতি পরিচালক কাজী হায়াৎ ও অভিনেত্রী দিলারা জামান। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের পরিচালক ফারহানা রহমান।
অনুষ্টানে সরকারী, আধাসরকারী, বেসরকারি বিভিন্ন সংস্হার কর্মকর্তাবৃন্দ, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নেতৃবৃন্দ, চলচ্চিত্র শিল্পি, অভিনেতা, অভিনেত্রীসহ বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের কর্মকর্তারা এসময় উপস্হিত ছিলেন।
বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভার পূর্বে একটি বর্ণাঢ্য শুভাযাত্রা বের করা হয়। তথ্য ও সম্প্রচার সচিব বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:৫৩:৩৯ ১১৮ বার পঠিত