প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাই-টেক পার্কে বিনিয়োগের জন্য উজবেকিস্তানের প্রতি আহবান জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
বাংলাদেশ-উজবেকিস্তানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং পর্যটন খাত সম্প্রসারণে পুনরায় সরাসরি ফ্লাইট পরিবেষা চালু করারও আহবান জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে উজবেকিস্তানের উপ-পররাষ্ট্র মন্ত্রী বাখরম এ্যালোয়েভের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সাক্ষাৎ করতে আসলে তিনি এই আহবান জানান।
টিপু মুনশি বলেন, উভয় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং পর্যটন খাতের বিকাশের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাই-টেক পার্ক নির্মাণ করেছেন এবং বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণীয় প্রণোদনা প্যাকেজ ও সুবিধা ঘোষণা করেছেন। তিনি উজবেক বিনিয়োগকারীদের এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিনিয়োগ করার আহবান জানান।
বাণিজ্যমন্ত্রী উজবেকিস্তানের উপ-পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে বলেন, বাংলাদেশ-উজবেকিস্তান সরাসরি ফ্লাইট চালু এবং ভিসা সহজীকরণ হলে দুই দেশের ব্যবসায়ীরা সফর করে বিনিয়োগের ক্ষেত্র বের করতে পারবেন। সরকারি পর্যায়ের পাশাপাশি ব্যবসায়ী পর্যায়ে যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে হবে। দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সামগ্রিক সুবিধার জন্য সম্ভাব্য ক্ষেত্রগুলিকে খুঁজে বের করে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করার উপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
এসময় উপ-পররাষ্ট্র মন্ত্রী বাখরম এ্যালোয়েভ সরাসরি ফ্লাইট চালুর ব্যাপারে তাঁর সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেবে বলে জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থনৈতিক কূটনীতির উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছেন উল্লেখ করে টিপু মুনশি জানান, আগামী আগস্ট মাসে বাংলাদেশ উজবেকিস্তানে অনুষ্ঠিতব্য ‘ইন্টার গভার্নমেন্টাল কমিশন’ বৈঠকে যোগদান করবে। দুই দেশের মধ্যে পণ্য ও বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ বাড়াতে এই সফরে বাণিজ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদল থাকবে বলেও জানানো হয়।
টিপু মুনশি বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করার পরপরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে উজবেকিস্তান সফরের মাধ্যমে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভিত্তি রচনা করেন। তারপর থেকেই বাংলাদেশ-উজবেকিস্তান অত্যন্ত দৃঢ় ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। কালের পরিক্রমায় এ সম্পর্ক নতুন মাত্রা পেয়েছে।
২০১৯ ও ২০২২ সালে বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁর তাসখান্দ সফরে আথিতিয়তার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, উজবেকিস্তান বিশ্বের মাত্র দুটি ভূমিবেষ্টিত দেশের মধ্যে একটি। এটি প্রাচীন সিল্ক রুটের উপর অবস্থিত। দেশটি বাণিজ্য, অর্থনীতি, বিজ্ঞান, সংস্কৃতি এবং শিল্পের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া এবং প্রধান উন্নত দেশসহ ১৫২টিরও বেশি দেশে বাংলাদেশ এখন ওষুধ রপ্তানি করছে। ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য এবং জেনেরিক ওষুধ আমদানি ছাড়াও তৈরি পোশাক, পাট, পাটজাত পণ্য, হিমায়িত খাদ, সিরামিক পণ্য, আইসিটি পণ্য, হস্তশিল্প, চামড়া কৃষি, টাটকা ফল, শাকসবজি এবং কৃষি-যন্ত্র দক্ষতা উন্নয়ন এবং প্রযুক্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা প্রতিষ্ঠার বিশাল সুযোগ রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বৈঠকে উজবেকিস্তানের উপ-পররাষ্ট্র মন্ত্রী তাদের দেশে বাংলাদেশী পণ্য প্রদর্শন করার আহবান জানান। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ সকল সূচকে সাফল্য অর্জন করেছে। ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য বিশ্বে সুনাম ধরে রেখেছে। তিনি বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদেরকে উজবেকিস্তানে বিনিয়োগের আহবান জানিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক আরো বন্ধত্বপূর্ণ এবং দৃঢ় অবস্থানে নেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
উল্লেখ্য, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ ২৬.৩৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যৈর পণ্য রপ্তানির বিপরীতে উজবেকিস্তান থেকে ৮.৮০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে।
বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছাড়াও উজবেকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ২২:৩০:৫৭ ১২৯ বার পঠিত