সোমবার, ২২ মে ২০২৩

পর্যাপ্ত বৃষ্টির জন্য জীববৈচিত্র্যের ভূমিকা অপরিহার্য : বনমন্ত্রী

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » পর্যাপ্ত বৃষ্টির জন্য জীববৈচিত্র্যের ভূমিকা অপরিহার্য : বনমন্ত্রী
সোমবার, ২২ মে ২০২৩



পর্যাপ্ত বৃষ্টির জন্য জীববৈচিত্র্যের ভূমিকা অপরিহার্য : বনমন্ত্রী

বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেছেন, আমরা খাদ্য বস্ত্র বাসস্থান ঔষধ প্রভৃতির জন্য সরাসরি প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। মূলত জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্রমবর্ধমান খাদ্য চাহিদা প্রকৃতি থেকে মেটাতে সক্ষম হয়। তাছাড়া পরিবারের দূষণরোধ করতে, অক্সিজেনের সরবরাহ বজায় রাখতে এবং পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের জন্য জীববৈচিত্র্যের ভূমিকা অপরিহার্য। মোটকথা যেকোনো দেশের জীববৈচিত্র্য সেই দেশের মূল সম্পদ।

সোমবার (২২ মে) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বন অধিদপ্তরের হৈমন্তী হলে ‘আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস-২০২৩’ উপলক্ষ্যে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। দিবসটি উপলক্ষ্যে এবার প্রতিপাদ্য ধরা হয়েছে ‘বাস্তবায়ন করি অঙ্গীকার, জীববৈচিত্র্য হবে পুনরুদ্ধার।’

শাহাব উদ্দিন বলেন, সরকার জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে নিবেদিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে জাতিসংঘের ‘কনভেনশন অন বায়োলজিক্যাল ডাইভার্সিটি’-তে স্বাক্ষর করেছে। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও এর উপাদানসমূহের টেকসই ব্যবহার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য আইন- ২০১৭’ প্রণয়ন করা হয়েছে। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, বন্যপ্রাণীর অবাধে বিচরণ ও প্রজননের জন্য ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ২৫টি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, ২০টি জাতীয় উদ্যান, ২টি বিশেষ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এলাকা, ২টি মেরিন প্রটেক্টেড এরিয়া, ১টি উদ্ভিদ উদ্যান, ৩টি ইকোপার্ক এবং ২টি শকুন নিরাপদ এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে।

বনমন্ত্রী বলেন, সরকার বঙ্গোপসাগরের সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডের ১ লাখ ৭৩ হাজার ৮০০ হেক্টর এলাকা এবং সেন্টমার্টিন দ্বীপ সংলগ্ন ১ হাজার ৭৪৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে মেরিন প্রটেকটেড এরিয়া হিসেবে ঘোষণা করেছে; যার ফলে এখন আইনের মাধ্যমে এই বিশাল সামুদ্রিক এলাকার জলজ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সিলেট অঞ্চলে অবস্থিত জলাভূমির বন রাতারগুল ও নওগাঁর আলতাদিঘীকে বিশেষ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়াও দেশে ২টি রামসার সাইট ও ৬টি ফ্লাইওয়ে সাইট রয়েছে।

শাহাব উদ্দিন বলেন, জীববৈচিত্র্য সংক্রান্ত গবেষণার জন্য অর্থায়ন করা হচ্ছে। দেশে প্রথমবারের মতো বিরল ও বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ প্রজাতির লাল তালিকা প্রণয়নের কার্যক্রম প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। জীববৈচিত্র্যের লীলাভূমি সুন্দরবন রক্ষায় সরকারি অর্থায়নে একাধিক প্রকল্প চলমান রয়েছে। এছাড়া, স্মার্ট প্যাট্রোলিংয়ের ফলে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য এখন অধিক সুরক্ষিত। সুন্দরবনের ৫২ শতাংশ এলাকা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করা হয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, সরকার বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত অপরাধের জন্য জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছে। সে লক্ষ্যে অবৈধভাবে বন্যপ্রাণী ক্রয়-বিক্রয়, শিকার/হত্যা, পাচারজনিত অপরাধ নিয়ন্ত্রণসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের লক্ষ্যে গণসচেতনতা সৃষ্টিতে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া বনজ সম্পদের অবৈধ আহরণ নির্মূলে মাঠপর্যায়ের প্রত্যেক বিভাগ/ইউনিট নিয়মিত টহল কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, জীববৈচিত্র্যের অন্যতম উপাদান উদ্ভিদ কিংবা প্রাণী ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্রতিবেশ ব্যবস্থার ওপর নেমে আসবে চরম বিপর্যয়। জীববৈচিত্র্য বিপন্ন হলে বিপর্যস্ত হবে মানবসভ্যতাও। তাই আমাদের নিজেদের স্বার্থেই জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে অগ্রণী হতে হবে। সুতরাং, জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধার কার্যক্রমকে আরও কার্যকরী ও গতিশীল করতে হলে সকলের অঙ্গীকারাবদ্ধ হতে হবে।

সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ২০১৭ সালে আমরা আইন করলাম। সেখানে একটা বিষয় ছিল যে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় একটা তহবিল গঠন করা হবে। কিন্তু পাঁচ বছর হয়ে গেলে, এখনও তহবিল হয়নি।

তিনি আরও বলেন, ডাবল স্ট্যান্ডার্ড নিয়ে পরিবেশ সংরক্ষণ করা যাবে। বাংলাদেশের বন যে হারে উজার হচ্ছে সেটির রেট ২.৬ শতাংশ। বন হচ্ছে জীববৈচিত্র্যের মূল বিষয়। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে কোন বনভূমির গাছ কাটা হয়। বলা হয়, এখানে ২০ হাজার গাছ থাকলে আরেক জায়গায় ২০ হাজার গাছ লাগিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু গাছ লাগানো তো পরেরর কথা। গাছের সঙ্গে যে জীববৈচিত্র্য থাকে, গাছ কাটলে তো সেটি আর লাগানো যায় না। এভাবে চলতে থাকলে একটা পর্যায়ে এমন অবস্থায় পরিণত হবে যে, পুনরুদ্ধার করার আর কিছু থাকবে না।

সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ বলেন, বায়োডাইভারসিটি নিয়ে কাজ করার জন্য মন্ত্রণালয়ের একটা আলাদা উইয়িং থাকা প্রয়োজন। যারা দক্ষ, উদ্যোমী ও কাজ করতে আগ্রহী তাদেরকে নিয়ে এই বিশেষ কাজটি করতে হবে। বায়োডাইভারসিটির জন্য আমরা অনেক চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু আমাদের আরও বেশি কাজ করার প্রয়োজন।

আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার, অতিরিক্ত সচিব ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবদুল হামিদ এবং বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী।

বাংলাদেশ সময়: ১৫:৪৩:৪৫   ১১৬ বার পঠিত