ইসমাইল হোসেন জামালপুর প্রতিনিধি : জামালপুরে সরিষাবাড়ীতে চাপারকোনা মনিজা আবুল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীতে কোন শিক্ষার্থী না থাকায় ক্লাসরুম তালাবদ্ধ রেখেই চলছে বিদ্যালয়ে পাঠদান।
জানা যায়, এবছর ষষ্ঠ শ্রেণীতে দুইজন শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও তারা কয়েকদিন স্কুলে আসার পর আর আসেনি। এরপর হতেই বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণী তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এছাড়াও বিদ্যালয়ের সপ্তম হতে দশম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি খুবই বাঞ্ছনীয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ষষ্ঠ শ্রেণী তালাবদ্ধ, সপ্তম শ্রেণীতে ৩ জন, অষ্টম শ্রেণীতে ৩ জন, নবম শ্রেণীতে ৪ জন ও দশম শ্রেণীতে ৫ জন শিক্ষার্থীর উপস্থিতি রয়েছে। শিক্ষার্থীরা জানান প্রতিদিন তাদের ফুল ক্লাস হয় না। তিন চারটি ক্লাস হয়েই দুপুর নাগাদ স্কুল ছুটি হয়ে যায়। এছাড়াও শিক্ষকদের উপস্থিতিতে যথেষ্ট অনিয়ম রয়েছে বলে অভিভাবক ও স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৩ সনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি স্থাপিত হয় এবং ১৯৯৫ সনে ৬ জন শিক্ষক সহ প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত হয়। এরপর হতেই ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ক্রমাগত কমতে থাকে। স্থানীয়দের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান এবং শিক্ষকদের পাঠদানের অবহেলার কারণেই এই প্রতিষ্ঠানের আজ এমন বেহাল দশা হয়েছে।
এদিকে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর পাঠদানের সংখ্যা কাগজকলমে দেখানো হয়েছে ২ শতাধিক। কিন্তু বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা রয়েছে মাত্র ১৫ জন। এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নীতিমালা অনুযায়ী একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৪০জন শিক্ষার্থী থাকতে হবে। সেখানে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর সংখ্যা খুবই অপ্রতুল।
জানা গেছে,উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের যোগসাজশে ওই বিদ্যালয়ের অতিরিক্ত ভুতুড়ে শিক্ষার্থী দেখিয়ে বিদ্যালয় ও শিক্ষকদের এমপিও টিকিয়ে রাখার লক্ষ্যে এমন কূট কৌশল চলে আসছে দীর্ঘদিন যাবৎ।
এদিকে বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর দ্বিতীয় স্থান অধিকারী শিক্ষার্থী মিতু আক্তার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, গত ৯মে উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিসংখ্যান অফিসের আয়োজনে উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ প্রকল্পের ক্রয়কৃত ট্যাব হতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র উপহার হিসেবে সরকারি/এমপিওভুক্ত উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহের নবম ও দশম শ্রেণীর মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করা হয়।
বিতরণকৃত ট্যাব স্কুলের প্রধান শিক্ষক দ্বিতীয় স্থান অধিকারী শিক্ষার্থী মিতুকে না দিয়ে ষষ্ঠতম শিক্ষার্থী লিমাকে প্রদান করে। পরে এই নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
পরে এ বিষয়ে বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক আজমেরী খাতুনের কাছে জানতে চাইলে তিনি নিউজ টু নারায়ানগঞ্জ কে জানান, সে নিয়মিত স্কুলে আসেনা বিধায় তাকে ট্যাব দেওয়া হয়নি। আর বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণী তালাবদ্ধ করে রাখা হয়নি। অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি আছে কিন্তু তারা স্কুলে আসছে না।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জহুরুল ইসলাম মানিক নিউজ টু নারায়ানগঞ্জ কে জানান,ট্যাব বিতরণের বিষয়টি আমি অবগত নই। যদি এরকম অনিয়ম হয়ে থাকে আমি বিষয়টি দেখবো। পাশাপাশি বিদ্যালয়ে নানাবিধ সমস্যা হতে উত্তরণের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে এবং সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক নিউজ টু নারায়ানগঞ্জ কে জানান, আমরা তালিকা নিয়েছি বেশ কিছুদিন আগে এবং তালিকা নেওয়ার সময় আমরা প্রতিষ্ঠানকে অবহিত করি নাই কেন তালিকা নেওয়া হচ্ছে। কারণ ট্যাবটা একটা লোভনীয় বিষয়। যাতে কেউ ফাস্ট, সেকেন্ড ,থার্ড স্টুডেন্টগুলোকে ডুবলিকেট না করতে পারে। তারপরেও যদি এরকম হয়ে থাকে বিষয়টি আমি সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখবো এবং তার কাছে ব্যাখ্যা চাবো।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:০৮:৩৪ ৩৩৪ বার পঠিত