খাদ্যে পুষ্টির পেছনে রাষ্ট্রের বছরে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয় বলে জানিয়েছেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইসমাইল হোসেন। এই পুষ্টি ও খাদ্যের নিরাপত্তা ঠিকঠাক জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে রাষ্ট্রের এই অর্থ বাঁচবে বলে মনে করেন তিনি।
খাদ্য সচিব বলেন, ‘সরকারের প্রায় ১৮টা মন্ত্রণালয়-বিভাগ পুষ্টি নিয়ে কাজ করে। বছরে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয় রাষ্ট্রের খাদ্যের পুষ্টির পেছনে। আমরা যদি খাদ্য নিরাপদ করতে পারতাম এবং পুষ্টি ও খাদ্যের নিরাপদতা নিয়ে মানুষকে ঠিকঠাক জ্ঞান দিতে পারতাম তাহলে রাষ্ট্রের এই ৩৫ হাজার কোটি টাকা লাগতো না। সুতরাং আমাদের সমস্যাটা কোথায় সেটা আমাদের চিহ্নিত করতে হবে এবং সমাধান করতে হবে, সবকিছু সাদা চোখে দেখলে হবে না।’
বুধবার রাজধানীর শাহবাগে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের প্রধান কার্যালয়ে গবেষণা বিষয়ক সূচনা কর্মশালা ও পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
‘নিরাপদ খাদ্য সারা দেশের জন্য একটা বার্নিং ইস্যু’ বলে উল্লেখ করে সচিব বলেন, ‘আমাদের দেশের জন্য তো বটেই, আমরা দীর্ঘদিন ধরে জনগণের খাদ্য নিরাপত্তার কথা বলে এসেছি। আমরা সবসময় জনগণের স্টমাক ফুলফিল করার জন্য বলে এসেছি। দেশে বড় বড় যে সাকসেস আছে তার মধ্যে আমাদেরও কিছু সাকসেস আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্বাধীনতার পর এক কোটি মেট্রিক টন খাদ্য শস্য যখন উৎপাদন করতাম সেখান থেকে ৩০০ শতাংশ বৃদ্ধি করে ফেলেছি, ৬ কোটি মেট্রিক টন খাবার উৎপন্ন করছি। যখন মানুষ ৭ কোটি ছিল তখন খাবারে কিছু কিছু ক্রাইছিস ছিল। প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছায় এবং বিজ্ঞানিদের গবেষণায় ও কৃষকদের প্রচেষ্টায় আমরা আজ এই পর্যায়ে এসেছি।’
সচিব বলেন, ‘এই বছর অধিক খাদ্যপণ্য উৎপাদন করলাম, কিন্তু আগামী বছর ক্লপস (ব্যর্থ) করলাম, তাহলে কিন্তু রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পরবে। আমাদের যদি কোনো কারণে ৫০ শতাংশ খাদ্য শস্য ক্লপস করে তাহলে পৃথিবীর কোনো দেশ থেকে আমরা খাবার পাব না। কারণ আমরা রাইচ ডিপেন্ডেন্ট দেশ।’
জাপান সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জাইকা শুরু থেকেই আমাদের সহযোগিতা করছে এবং সামনে আরও বড় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। জাইকার সহযোগিতার পাশাপাশি আশার আলো দেখাচ্ছে ডব্লিউএফপি, এফএওসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, আমাদের সাহায্য করবে বলে জানিয়েছেন।’
‘পথ অনেক লম্বা- এই বলে তো ঘরে বসে থাকলে চলবে না। আমাদের ধীরে ধীরে এগুতে হবে। এই প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেই প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ২০১৩ সালে নিরাপদ খাদ্য আইন হয়েছে’ বলেন সচিব মো. ইসমাইল হোসেন।
তিনি বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠানটি (নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ) ২০১৫ সালে গঠিত হয়েছে। বাংলাদেশে কোনো প্রতিষ্ঠান দাঁড়াতে সময় লাগে। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানটি এত অল্প সময়েও এমন একটি জায়গায় পৌঁছাতে পেরেছে। এখনও কিছু কিছু ইস্যু আছে যেগুলো সমাধান করতে অনেক সময় লাগবে। তবে সময় লাগলেও তো আমাদের থেমে থাকলে চলবে না। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।’
অনুষ্ঠানে নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক গবেষণায় ৭ জনকে মোট ৭৪ লাখ টাকা ও অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিভাগের সদস্য মনজুর মোরশেদ আহমেদ। সভাপতিত্ব করেন নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাইয়ুম সরকার।
বক্তব্য রাখেন মৎস গবেষণা ইনস্টিটিউটের সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার আরিফুল ইসলাম, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার ড. মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইন প্রধান ও ড. গোলাম ফেরদৌস চৌধুরী প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:৫১:৩৫ ১০৩ বার পঠিত