সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে দেশের বিভিন্ন স্থানে আজ (বুধবার, ২৮ জুন) উদযাপন করা হচ্ছে পবিত্র ঈদুল আজহা। এর মধ্যে রয়েছে চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, শেরপুর, বরিশাল, মৌলভীবাজার, পিরোজপুর, জামালপুর ও বরগুনাসহ বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন এলাকা।
এসব এলাকার মানুষ সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদুল ফিতরও উযাপন করে থাকেন।
চাঁদপুরঃ
চাঁদপুরের অর্ধশত গ্রামে উদযাপন হচ্ছে ঈদুল আজহা। সকাল সাড়ে ৮টায় জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা দরবার শরীফ ও ফরিদগঞ্জ উপজেলার টোরা মুন্সিরহাট জামে মসজিদে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
এছাড়া জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা, সমেশপুর, অলিপুর, বলাখাল, মনিহার, জাকনী, প্রতাপপুর, বাসারা; ফরিদগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীপুর, কামতা, গল্লাক, ভুলাচোঁ, সোনাচোঁ, উভারামপুর, উটতলি, মুন্সিরহাট, কাইতাড়া, মূলপাড়া, বদরপুর, আইটপাড়া, সুরঙ্গচাইল, বালিথুবা, পাইকপাড়া, নূরপুর, সাচনমেঘ, শোল্লা, হাঁসা ও গোবিন্দপুরে ঈদ উদযাপন করা হচ্ছে।
এছাড়া জেলার মতলব উত্তর ও দক্ষিণ উপজেলার সাড়ে পাঁচানী, দেওয়ানকান্দি পাঁচানী, সাতানী, লতুরদী, মোহাম্মদপুর, মোহনপুর, এখলাশপুর, দশানী, নায়েরগাঁও ও বেলতলী এবং শাহরাস্তি উপজেলার কয়েকটি গ্রামে ঈদুল আজহা উদ্যাপন করা হয়। ১৯৩২ সাল থেকে চাঁদপুরে এ রীতি চালু রয়েছে।
মৌলভীবাজারঃ
মৌলভীবাজারের বিভিন্ন জায়গায়ও ঈদুল আজহা উদযাপন করা হচ্ছে। সকালে সার্কিট হাউস এলাকায় পবিত্র ঈদুল আজহার একটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৭টায় অনুষ্ঠিত এ ঈদ জামাতে ইমামতি করেন আব্দুল মাওফিক চৌধুরী। ঈদের নামাজে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মুসল্লিরা অংশ নেন।
এ শতাধিক মুসল্লির মধ্যে নারী ও পুরুষ অংশ নেন। নামাজ শেষে মুসল্লিরা বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনা করে মোনাজাত করেন। স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে এখানে এ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
ঝালকাঠিঃ
ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলার ঢররশংকর গ্রামে ৪০টি পরিবার ঈদ উদযাপন করেন। সকাল ৮টায় স্থানীয় মসজিদে ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেন তারা। নামাজ শেষে একে অপরের সাথে কোলাকুলি করেন। নামাজে নারীদের জন্য পর্দা দিয়ে আলাদা কাতারের ব্যবস্থা রাখায় তারাও ঈদ জামাতে অংশ নেন। পরে পশু কোরবানি দেন তারা।
স্থানীয় দারুস সুন্নাহ জামে মসজিদের ঈমাম মো: নুরুল ইসলাম জানান, একই দিবসে সারা বিশ্বের মুসলমানদের সাথে রোজা, ঈদ ও কোরবানি পালনের লক্ষ্যেই ২০১৩ সাল থেকে এ প্রচলন শুরু করেছেন তারা।
সাতক্ষীরাঃ
সাতক্ষীরায় ২০ গ্রামের মানুষ আজ ঈদুল আযহা উদযাপন করছেন। সকাল সাড়ে ৮টায় সদর উপজেলার ভাড়ুখালীতে আহলে সুন্নাত আল জামায়াত জামে মসজিদে ঈদুল আজহার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন মাওলানা মাহবুবুর রহমান। নামাজ শেষে ধর্মপ্রাণ মুসুল্লিরা পরস্পর কোলাকুলি করেন।
এছাড়া সদর উপজেলার বাওখোলা পূর্বপাড়া জামে মসজিদেও ঈদ উল আজহার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। নামাজ শেষে মুসুল্লিরা আল্লার নৈকট্য লাভের আশায় সেখানেই পশু কোরবানি করেন। ঈদের নামাজে সাতক্ষীরার ইসলামকাটি, চাঁদপুর গোয়ালচত্বর, ঘোনা, ভাড়ুখালি, ভাদড়া ও মিরগিডাঙ্গাসহ প্রায় ২০ গ্রামের মানুষ অংশ নেন।
মুসল্লিরা জানান, গত এক যুগ ধরে তারা সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করে আসছেন। সেই ধারাবাহিকতায় আজ বুধবার তারা সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে ঈদুল আযহা উদযাপন করছেন। আগামীতে ইসলামি শরিয়ত মোতাবেক একই দিনে সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে ঈদ উদযাপনের আহবান জানান।
মাদারীপুরঃ
মাদারীপুরে ঈদুল আজহা উদযাপন করেছেন ২৫ গ্রামের ৩০ হাজার মানুষ। সদর উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের তাল্লুক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সকাল সোয়া ৯টায় ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন চরকালিকাপুর ফরাজী বাড়ি জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুল ইদ্রিস।
এছাড়া চরকালিকাপুর, মহিষেরচর, পূর্ব পাঁচখোলা, জাজিরা, কাতলা বাহেরচর, তাল্লুক, চরগোবিন্দপুর, পখিরা, খোয়াজপুর, দৌলতপুর, কালিকাপুর, হোসনাবাদ, রঘুরামপুর, আংগুলকাটা, হাজামবাড়ি, বাহেরচর, কেরানীরবাট, রমজানপুর, কয়ারিয়া, রামারপুল, সাহেবরামপুর, আন্ডারচর, খাসেরহাটসহ ২৫টি গ্রামের মানুষ উদযাপন করেন।
জানা যায়, সুরেশ্বর দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা হযরত জান শরীফ শাহ্ সুরেশ্বরীর (রহ.) অনুসারীরা প্রায় ১৫০ বছর আগ থেকে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে রোজা রাখেন এবং ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা পালন করে আসছেন।
বরিশালঃ
বরিশালের বিভিন্ন জায়গায় আজ ঈদুল আজহার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল সাড়ে ৮টায় নগরীর ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব হরিনাফুলিয়া চৌধুরীবাড়ি শাহ-মমতাজিয়া জামে মসজিদ ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের তাজকাঠী হাড়িবাড়ি শাহসুফি জাহাগীরিয়া জামে মসজিদে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
চট্টগ্রামের চন্দনাইশ এলাহবাদ জাহাগীরিয়া শাহসুফি দরবার শরীফের অনুসারীরা এখানে প্রায় শতাধিক বছর ধরে এভাবে ঈদ উদযাপন করে আসছেন তারা। এছাড়া বরিশালের বাবুগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় আগাম ঈদ পালন করেন ওই দরবার শরিফের অনুসারীরা। পৃথিবীর কোনো প্রান্তে চাঁদ দেখা গেলে তার সঙ্গে মিলিয়ে রোজা, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহাসহ যাবতীয় ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করেন তারা।
তাজকাঠী হাড়িবাড়ি শাহসুফি জাহাগীরিয়া জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মিঠু জানান, নগরীর সাতটি মসজিদ, বাবুগঞ্জের রাকুদিয়া, নলছিটির দপদপিয়া, পটুয়াখালীর বাউফল, বগা ও রাঙ্গাবালী এবং বরগুনার ডাবুয়াসহ বরিশাল বিভাগের ৭৩টি মসজিদে বুধবার ঈদুল আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ঈদ জামাত শেষে তারা মহান সৃষ্টিকর্তার নামে পশু কোরবানিসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা পালন করেন। বরিশাল বিভাগের অন্তত ২০ হাজার পরিবারের এক লাখ মানুষ আজ ঈদ উদযাপন করছেন।
পটুয়াখালীঃ
পটুয়াখালীর ২৫ গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলমান আজ পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপন করছেন। সকাল ৯টায় সদর উপজেলার বদরপুর দরবার শরিফে ঈদুল আযহার প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। নামাজ পরিচালনা করেন দরবার শরিফের খাদেম মাওলানা আব্দুল গনি।
জেলার ২৫ গ্রামের মধ্যে রয়েছে গলাচিপার সেনের হাওলা, পশুরী বুনিয়া, নিজ হাওলা, কানকুনি পারা, মৌডুবি, বাউফলের মদনপুরা, রাজনগর, বগা, ধাউরাভাঙ্গা, সুরদি, চন্দ্রপাড়া, দ্বিপাশা, শাপলা খালী, কনকদিয়া, আমিরাবাদ, কলাপাড়ার নিশানবাড়িয়া, ইটবাড়িয়া, শহরের নাঈয়া পট্টি, টিয়াখালী, তেগাছিয়া ও দক্ষিণ দেবপুর। স্থানীয়ভাবে এ ২৫ গ্রামবাসী চট্টগ্রামের এলাহাবাদ সুফিয়া ও বদরপুর দরবার শরিফ এবং চানটুপির অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
ঈদুল আযহা উপলক্ষে এসব এলাকায় বিরাজ করছে মুসলমানদের ঘরে ঘরে আনন্দ ও উৎসবমুখর পরিবেশ।
সদর উপজেলার বদরপুর দরবার শরিফের খাদেম মোহাম্মদ নাজমুস শাহাদৎ জানান, সৌদি আরবের সাথে সংগতি রেখে ১৯২৮ সাল থেকে এখানকার গ্রামবাসীরা একদিন আগে থেকে ঈদ পালন করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় একদিন আগে আজ তারা ঈদুল আযহা উদযাপন করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:২৫:২৯ ১৮৫ বার পঠিত