বৈশ্বিক মন্দার চাপ সত্ত্বেও দেশের অর্থনীতি এগিয়ে চলেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার ২০২৬ সালের পর উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হতে পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী আজ সন্ধ্যায় তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে ক্ষমতাসীন আওয়াামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের বৈঠকে বলেন, ‘সারা বিশে^ ডলার সংকট রয়েছে এবং আমাদের ওপরও এর প্রভাব রয়েছে। কিন্তু তারপরও আমি বলব আমাদের দেশের অর্থনীতি গতিশীল রয়েছে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, কিছু চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি উন্নয়নশীল জাতি গঠনের প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের
পর কিছু সুবিধা হবে।
এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে একটি উপ-কমিটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে পরিণত হওয়ার পর সুযোগ ও চ্যালেঞ্জগুলো যাচাই-বাছাই করে কাজ করছে।
তিনি আরো বলেন, ‘সব বিষয় (উন্নয়নশীল দেশ সংক্রান্ত) আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার সমাজের সকল বিষয়কে সমন্বয় করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এবং সে কারণেই আজকের বাংলাদেশ সারা বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল।
বিএনপির শাসনামলের দুর্নীতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার বিভিন্ন দেশে বিএনপি নেতাদের পাচার করা টাকা ফেরত আনার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, ‘বিএনপির আরও অনেক নেতার টাকা (বিদেশি ব্যাংকে) জমে আছে। আমরা ধীরে ধীরে এগুলো ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি।’
খালেদা জিয়ার পরিবারের দুর্নীতির সমালোচনা করে তিনি বলেন, বিএনপি শাসনামলে সড়ক খাতে দুর্নীতির কারণে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়।
শেখ হাসিনা বলেন, মানি লন্ডারিং মামলায় বিদেশি ও এফবিআই এজেন্ট সাক্ষ্য দেওয়ার আগেই খালেদা জিয়ার দুই ছেলে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসে।
সরকার তাদের (তারেক এবং কোকো) বিদেশে পাচার করা অর্থ থেকে ৪০ কোটি টাকা আনতে সক্ষম হয়েছে। তিনি বলেন, ‘কিন্তু, সমস্যা হল যে সকল দেশে তারা জমা করেছে সেখান থেকে টাকা ফেরত আনা একটি কঠিন বিষয়। দেশগুলো টাকা ছাড়তে চায় না।’
তাঁর সরকারের সাফল্যের প্রতি আলোকপাত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সাল থেকে তাঁর সরকারের আমলে প্রতিটি খাতে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা অন্তত দাবি করতে পারি এই সাড়ে ১৪ বছরে বাংলাদেশ অনেক বদলে গেছে। আপনারা অবশ্যই এটি উপলব্ধি করতে পারছেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার সাফল্যের সাথে দারিদ্র্যের হার ২০০৬ সালের ৪১ শতাংশ থেকে এখন ১৮.৬ শতাংশে নামিয়ে এনেছে এবং চরম দারিদ্র্যের হার ২৫.১ শতাংশ থেকে ৫.৭ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘সরকার যেমন ফসল, মাছ, মাংস ও শাকসবজিসহ খাদ্যের উৎপাদন বাড়াতে সক্ষম হয়েছে, পাশাপাশি ৬ লাখ ভূমিহীন পরিবারকে বিনামূল্যে আধা-পাকা ঘর সরবরাহ করেছে এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করে প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছে দিয়েছে।’
তিনি বলেন, আমরা সাড়ে ১৪ বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে ধান ও অন্যান্য ফসলের কোনো অভাব নেই।
কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকার ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে বেকারত্বের হার মাত্র ৩ শতাংশে নেমে এসেছে।
তিনি বলেন, বেকারত্বের হার আরও কমিয়ে আনতে যুবকদের বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ ও প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে উদ্যোক্তা তৈরিতে সরকার তার পদক্ষেপ অব্যাহত রেখেছে।
তিনি বলেন, আমরা শুধু বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নই নয়, এর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্যও ব্যাপক কাজ করেছি এবং বাস্তবায়ন করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের জনগণ বুঝতে পেরেছে আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলেই কেবল তারা সেবা পেতে পারে এবং ক্ষমতায় আসার পরই কেবল আওয়ামী লীগ সরকারই তা নিশ্চিত করেছে।
তিনি আরো বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ তার আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়েছে এবং তারা সারা বিশ্বে দেশকে হেয় প্রতিপন্ন করেছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে জয় লাভ করে ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণ করে এ পর্যন্ত টানা ক্ষমতায় রয়েছে এবং ‘আজ আমি বলতে পারি গত সাড়ে ১৪ বছরে বাংলাদেশ বদলে গেছে’।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:৫৭:০০ ১৪০ বার পঠিত