প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বান্দরবানে বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে যাবেন বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান।
বুধবার (৯ আগস্ট) সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি এ কথা বলেন৷
দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) প্রতিনিধিরা আসবেন৷ তারা আমাদের সঙ্গে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলাপ করবেন৷ সে কারণে আমরা শুক্রবার (১১ আগস্ট) সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে প্রথমে চট্রগ্রামের সাতকানিয়া, লোহাগড়া, এরপর কক্সবাজারের চকোরিয়া পেকুয়ায় পরিদর্শনে যাব। পরিস্থিতি ও যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হলে বান্দরবানের রুমা উপজেলা পরিদর্শনে যাব৷ সে অনুযায়ী পরিকল্পনা করা হয়েছে৷’
তিনি বলেন, ‘এ পরিদর্শন টিমে আমি, আমার সংসদীয় কমিটির সভাপতি ও মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক যাবেন। এছাড়া মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবসহ আরও কর্মকর্তারা যাবেন৷ গতকাল (মঙ্গলবার) থেকে পানি কমে যাচ্ছে৷ সেহেতু নতুন করে ঝুঁকির কিছুই নাই৷ এ পর্যন্ত কক্সবাজারের দুটি উপজেলা, বান্দরবানের দুটি উপজেলা ও খাগড়াছড়ির শহরতলীর কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে৷’
তিনি আরও বলেন, ‘মাঠ পর্যায়ে আমাদের জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে৷ ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী ও নৌ বাহিনীর সঙ্গেও যোগাযোগ হচ্ছে৷ পুলিশ সদস্যরা মাঠ পর্যায়ে থেকে সার্বক্ষণিক কাজ করছেন৷ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছি৷ আপনারা আসার কিছুক্ষণ আগেও প্রধানমন্ত্রী কল করেছিলেন৷ তিনি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি ও বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শনের নির্দেশ দিয়েছেন৷’
‘আপনারা জানেন, টানা পাঁচদিন ভারী বর্ষণে পাহাড়ি ঢলের সৃষ্টি হয়৷ সেই ঢলের ফলে চট্রগ্রামের সাতকানিয়া ও লোহাগড়া উপজেলা, কক্সবাজারের চকোরিয়া উপজেলা, বান্দরবানের রামু উপজেলাসহ রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ির কয়েকটি উপজেলা প্রবলভাবে প্লাবিত হয়৷ হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে৷ সেখানে আমাদের মাঠ প্রশাসন, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন এবং ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা উদ্ধার কাজ এবং মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু করে৷ একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সেখানে সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী মোতায়েন করা হয়৷ তারা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দুর্গত এলাকার জনগণকে উদ্ধার করে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে গেছেন। সেখানে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম চলমান রয়েছে৷’
‘সোমবার (৭ আগস্ট) আমরা চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার, বান্দরবন ও রাঙামাটিতে ১০ লাখ টাকা, ১০০ মেট্রিক টন চাল এবং ৩ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার পাঠান৷ আজকে জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় সংসদ সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করেছি৷ চট্টগ্রামের পেকুয়া ও সাতকানিয়া লোহাগড়ায় পানি কমে গেলেও অনেক ক্ষতি হওয়ায় তারা আরও মানবিক সাহায্যের আবেদন করে৷ এ পর্যন্ত আমরা মোট ৭০ লাখ টাকা, ২১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার এবং ৭০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি৷ একইসঙ্গে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট এবং বিশুদ্ধ পানিও পাঠিয়েছি৷ জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তারা যেন নগদ অর্থে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করেন৷’
এনামুর রহমান বলেন, ‘পাহাড় ধসে ২০১৭ সালে ১৫০ জনের বেশি লোক মারা গিয়েছিল৷ এরপর পাহাড় ধস হলেও কেউ মারা যায়নি৷ এবার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুজন মা এবং তার কন্যা সন্তান মৃত্যুবরণ করেছে। পেকুয়া উপজেলায় মাটির ঘর ধসে তিনজন মৃত্যুবরণ করেছে৷ এটার জন্য পার্বত্য অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ আইন এবং জেলা প্রশাসকদের কাছে আমাদের নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে যেন পাহাড়ের ঢালে কেউ বসতি গড়তে না পারে৷ তারপরেও অবৈধভাবে অনেকেই বসবাস করে৷ সরকারিভাবে তাদের উচ্ছেদ করা হয়৷
‘এ বছর বৃষ্টিপাত দেখে পাহাড়ি অঞ্চলের অনেককে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে৷ যার ফলে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে পাহাড় ধস হলেও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি৷ রাঙামাটিতে ২৩৫টি জায়গায় পাহাড় ধস হলেও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি৷ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যেটা হয়েছে সে কারণে আমরা অত্যন্ত দুঃখিত৷ সেখানেও ক্রমান্বয়ে পাহাড়কে শক্তিশালী করতে এবং ধস যাতে না হয় সেজন্য গাইড ওয়াল তৈরি করা হচ্ছে৷ যতটা সম্ভব পাহাড় থেকে সরিয়ে নিচে ভূমিতে ঘরবাড়ি করে দেওয়া হচ্ছে৷’
‘যে বন্যা হয়েছে সেটাকে আমরা ফ্ল্যাশ ফ্লাড বলি৷ এটা আসলে মানুষের নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা নেই৷ এটা প্রাকৃতিক দুর্যোগের একটা অংশ৷ অতিবৃষ্টির ফলে পাহাড়ি ঢল নেমে যাওয়ার নদীর যে ধারণক্ষমতা সেটা অনুযায়ী পানি বেশি ছিল৷ সে কারণে দুই কূল প্লাবিত হয়ে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে৷ এর একমাত্র উপায় নদী ড্রেজিং করে নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি করা৷ ক্ষয়-ক্ষতির হিসাবটা পাওয়ার পর আমরা আন্তঃমন্ত্রণালয় একটি সভা ডাকব৷ সেখানে আমরা পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কাছে সুপারিশ রাখব মাতামহুরি, সাঙ্গু ও হালদা নদী খনন করার৷’
ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্প করার চিন্তা-ভাবনা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আজকেও প্রধানমন্ত্রী ২২ হাজার ঘর দিয়েছেন৷ যারা ভূমিহীন ও ঘরহীন রয়েছেন তাদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে৷ এছাড়া যারা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাস করছে এবং প্রতিবন্ধী, বেদে সম্প্রদায় ও হিজড়া সম্প্রদায়ের জন্যও ঘর করে দেবেন৷ এছাড়া যারা বস্তিতে বাস করছে তাদের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণের কাজ অব্যাহত থাকবে।’
বাংলাদেশ সময়: ১৮:০১:০৭ ১৬১ বার পঠিত