প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্টভাবে বলেছেন, বাংলাদেশ এখনই ব্রিকসের সদস্য হওয়ার চেষ্টা করেনি বরং ব্রিকস রাষ্ট্রগুলোর প্রতিষ্ঠিত বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংক নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘প্রথমবারের মতো ব্রিকসের শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়ে আমরা সদস্যপদ পাব এমন কোনো চিন্তা আমাদের ছিল না। আমরা এমন কোনো চেষ্টা করিনি, এমনকি কাউকে বলিওনি (ব্রিকসের সদস্যপদ পাওয়ার জন্য)।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের ফলাফল নিয়ে গণমাধ্যমকে অবহিত করতে আজ বিকেলে গণভবনে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী গত রোববার ১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানের পর দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গ থেকে দেশে ফিরেছেন। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাপোসার আমন্ত্রণে ২২-২৪ আগস্ট জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেন।
এখনই ব্রিকস-এর সদস্যপদ পেতে হবে এমন কোনও চিন্তা বাংলাদেশের ছিল না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, এখনই সদস্য পদ পেতে হবে সেই ধরনের কোনও চিন্তা আমাদের মাথায়ও ছিল না। সেই ধরনের চেষ্টাও আমরা করিনি। চাইলে পাবো না সেই অবস্থাটা এখন আর বাংলাদেশ নেই। আমরা কাউকে বলতে যাইনি আমাকে এখনই সদস্য করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকটা কাজের একটা নিয়ম থাকে। আমরা সেই নিয়ম মেনেই চলি। আমার সঙ্গে যখন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টের সাক্ষাত হলো, আমাকে আমন্ত্রণ জানালেন ব্রিকস সম্মেলন করবেন। আমাকে আসতে বললেন। তখন আমাকে এও জানালেন তারা কিছু সদস্যপদ বাড়াবেনও। সেই বিষয়ে আমার মতামতও জানতে চাইলেন। আমি বললাম এটা খুবই ভালো হবে। ব্রিকস যখন প্রতিষ্ঠিত হয় তখন এই পাঁচটি দেশের সরকার প্রধানের সঙ্গে আমার ভালো যোগাযোগ সব সময় ছিল এবং এখনও আছে। সেই সময় এটা নিয়ে আলোচনা হলো পর্যন্ত।
ব্রিকসের নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে যোগদানের বিষয়ে বাংলাদেশ আগে থেকেই আগ্রহী ছিল উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, আমরা যখন শুনলাম নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক হবে, আমাদের ওটার ওপর বেশি আগ্রহটা ছিল। যখন থেকে তৈরি হয়, তখন থেকেই এই আগ্রহটা ছিল এর সঙ্গে যুক্ত হবো। ব্রিকসের সদস্য পদের ক্ষেত্রে তখন প্রেসিডেন্ট আমাকে বললেন ধাপে ধাপে নেবেন। ভৌগোলিক অবস্থানটা বিবেচনা করে নেবেন। পর্যায়ক্রমে ধাপে ধাপে তারা সদস্য সংখ্যা বাড়াবেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের নিলে আমরা খুব খুশি। তবে ব্রিকসের এখনই সদস্যপদ পাবো, প্রথমবারেই যেয়েই সদস্য পদ পাবো, সেই ধরনের কোনও চিন্তা আমাদের মাথায় ছিলও না। সেই ধরনের চেষ্টাও আমরা করিনি। সেইভাবে কাউকে বলিওনি। সেখানে তো আমার সব রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধানের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট, ভারতের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সবার সঙ্গে। আমরা কাউকে বলতে যাইনি আমাকে এখনই সদস্য করেন। তখন থেকে আমরা জানি যে প্রথমে কয়েকজনকে নেবে। লাঞ্চের সময় ব্রাজিল ও সাউথ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট এবং নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও জাতিসংঘের মহাসচিবের সঙ্গে আলোচনা হয় যে তারা এই কয়জন নেবে। এরপর ধাপে ধাপে তারা সদস্য পদ বাড়াবে।
ব্রিকস নিয়ে বিরোধী দলের বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জানি যে এই প্রশ্নটা আসবে। আমাদের অপজিশন (বিরোধী পক্ষ) থেকে হা-হুতাশ করা হচ্ছে যে আমরা সদস্যপদ পাইনি। বাংলাদেশ কিছু চেয়ে পাবে না এটা কিন্তু ঠিক নয়। অন্ততঃ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমরা দেশের মার্যাদাটা তুলে ধরেছি। সেখানে আমাদের সেই সুযোগটা আছে। তারা (বিরোধী পক্ষ) বলতে পারে কারণ বিএনপির আমলে ওটাই ছিল। তাদের সময় বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের কোনও অবস্থানই ছিল না। বাংলাদেশ মানে ছিল দুর্ভিক্ষের দেশ, ঝড়ের দেশ, ভিক্ষার দেশ। হাত পেতে চলার দেশ। এখন সবাই জানে বাংলাদেশ ভিক্ষা চাওয়ার দেশ নয়। সারাবিশ্বে বাংলাদেশ এখন মাথা উঁচু করে চলে।
সংবাদ সম্মেলনে ড. ইউনুসের বিরুদ্ধে চলমান মামলার বিষয়ে আন্তর্জাতিক মহলের বিবৃতি, অংশগ্রহণ মুলক নির্বাচন, বাজার সিন্ডিকেটসহ সাম্প্রতিক নানা বিষয় নিয়ে খোলামেলা সকল প্রশ্নের উত্তর দেন প্রধানমন্ত্রী
সংবাদ সম্মেলনের মঞ্চে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য এবং জাতীয় সংসদের উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী ও শেখ ফজলুল করিম সেলিম এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম উপস্থিত ছিলেন।
নোবেল বিজয়ী ড. মুহম্মদ ইউনুসের বিরুদ্ধে পরিচালিত চলমান বিচার বন্ধের কথা না বলে বিবৃতিদাতা বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে বাংলাদেশে এক্সপার্ট (বিশেষজ্ঞ) পাঠানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিবৃতি না দিয়ে তারা এক্সপার্ট পাঠাক। যদি এতই দরদ থাকে তারা ল-ইয়ার (আইনজীবী) পাঠাক। মামলার সমস্ত দলিল দস্তাবেজ খতিয়ে দেখুন। তারাই দেখে বিচার করে যাক এখানে কোন অপরাধ আছে কী না। তবে, আইন তার নিজস্ব গতিতেই চলবে।”
যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের কতিপয় বিশিষ্ট নাগরিকদের খোলা চিঠির মাধ্যমে বিবৃতি প্রদান করে ড. ইউনুসের বিচার স্থগিত করার দাবি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার খুব অবাক লাগছে। ভদ্রলোকের যদি এতই আত্মবিশ^াস থাকতো যে তিনি কোন অপরাধ করেননি, তাহলে ঐ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিবৃতি ভিক্ষা করে বেড়াতেন না।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। তাছাড়া সবকিছু একটা আইনমত চলে। কেউ যদি ট্যাক্স না দেয় আর শ্রমিকের অর্থ আত্মস্যাৎ করে এবং সেক্ষেত্রে শ্রমিকদের পক্ষে যদি লেবার কোর্টে মামলা হয় তাহলে আমাদের কি সেই হাত আছে আমরা মামলা বন্ধ করে দেব। আর চলমান মামলা নিয়ে আমরাতো আমাদের দেশে আলোচনাও করি না, কারণ এটা সাবজুডিস (আদালত অবমাননা)। সেখানে বাইরে থেকে বিবৃতি এনে দাবি করা হচ্ছে মামলা প্রত্যাহার করার? এখানে আমার কোন অধিকারটা আছে আপনারাই বলেন, সে পাওয়ারটা দিয়েছেন আমাকে? জুডিশিয়ারিতো সম্পূর্ণ স্বাধীন।
তিনি বলেন, যারা এই বিবৃতি দিয়েছেন তাদেরকে আমি আহ্বান করি-এক্সপার্ট পাঠান, লইয়ার পাঠান, এতই যদি দরদ থাকেতো এবং যার বিরুদ্ধে মামলা তার সমস্ত দলিল, দস্তাবেজ খতিয়ে দেখুন- সেখানে কোন অন্যায় আছে কি না, বা কি কি অসামঞ্জস্যতা আছে। নয়তো আমাদের দেশে আইন আছে, আদালত আছে, লেবার ল আছে, লেবার কোর্ট আছে এবং আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।
লেবার ল নিয়েতো বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিশেষ করে আইএলওতে অনেক কথা শুনতে হয়, বিভিন্ন নালিশের প্রেক্ষিতে- সেকথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদেশের কোম্পানী আইনে আছে লভ্যাংশের ৫ শতাংশ শ্রমিকদের কল্যাণে ব্যয় করতে হবে এখন সেটা যদি কেউ না দেয় এবং এজন্য তারা যদি মামলা করে এবং মামলা করার ফলে তাদের যদি চাকরীচ্যুত করা হয় এবং তারজন্য তারা যদি আবার মামলা করে তাহলে সেই দায় দায়িত্বতো আমাদের নয়। আবার এই মামলা যাতে না হয় সেজন্য ঘুষ দেওয়া।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় স্মরণ করিয়ে দেন মামলা দায়ের করার ব্যাপারে তাঁদের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই বরং মামলা রুজু করেছে শ্রমিকেরা এবং এনবিআর। ট্যাক্সেও বিষয়টা সম্পূর্ন এনবিআর এর এখতিয়ার। আর ট্যাক্স ফাঁকি দেয়া হলে অর্থতো তাদের আদায় করতে হবে। কেননা ট্যাক্স দেয়াতো সকল নাগরিকের দায়িত্ব। আর যারা বিবৃতি দিয়েছেন এমন ইউরোপ, আমেরিকা বা যুক্তরাজ্যে ট্যাক্স ফাঁকিদাতাদের সঙ্গে কি করা হয়-সে প্রশ্নও তোলেন তিনি।
বিশে^র বিভিন্ন দেশে নোবেল বিজয়ীরা ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে ধরা পড়ায় মামলার শিকার এমন উদাহারণও টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এমন বহু নোবেল লরিয়েট রয়েছেন যারা কারাগারে বন্দি আছেন পরবর্তীতে অপরাধমূলক কাজের জন্য।”
সংবিধিবদ্ধ সরকারি প্রতিষ্ঠান- গ্রামীন ব্যাংকের এমিডি, তুলতেন সরকারি হারে বেতন,’ উল্লেখ করে সাবেক এমডি ড. ইউনুসকে উদ্দেশ্য করে সরকার প্রধান বলেন, “সরকারি বেতনভুক একজন ব্যাংকের এমডি বিদেশে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার কিভাবে ইনভেস্টমেন্ট করে আর বাণিজ্য করে?”
এ ব্যাপারে সাংবাদিকেরাও কোন খোঁজ খবর করে সংবাদ পরিবেশন করেননি যা একজন রাজনীতিবিদের বেলায় করা হোত হলেও তিনি উস্মা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, দুর্নীতি খুঁজে বেড়াচ্ছেন সবাই, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান করতে বলছেন, আর দুর্নীতিবাজ ধরা পড়লে পছন্দের হলে তার কোন দোষ নাই।
৪৬০ কোটি ক্ষতিপূরণ পেলেও ১২শ’ কোটির ওপর যে পাওনা সেটার বিষয়ে দেশি-বিদেশি প্রভাবশালীদের প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টায় আদালত স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে কি না এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন প্রধানমন্ত্রী, কেন পারবে না?
আদালত স্বাধীনভাবেই কাজ করবে, কে বিবৃতি দিলো না দিলো সেটা আদালতের দেখার দরকারটা কি এবং আদালত এতে প্রভাবিত হবে কেন? আদালত ন্যায় বিচার করবে। আওয়ামী লীগ সবসময় শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষায় কাজ করে, যোগ করেন তিনি।
আগামী নির্বাচনে খুনিদের নয়, জনগণের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণ থাকবে উল্লেখ করে ‘অংশগ্রহণমুলক নির্বাচন’ এবং আসন্ন সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশে নানা মুনীর নানা মত বিষয়ক একাধিক প্রশ্নের উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, দেশ কিভাবে চলবে জনগণকেই সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণটা কার? ভোট চোরদের, ভোট ডাকাতদের, খুনি, জাতির পিতার হত্যাকারী, ২১ আগস্টের হামলাকারীদের? এদেরকে মানুষ চায়?
তিনি বলেন, এদের প্রতি তো মানুষের ঘৃণা আছে, ২০০৮ সালে প্রমাণ হয়েছে। আমার কাছে অংশগ্রহণ বলতে, জনগণের অংশগ্রহণ। সেটা থাকবে। জনগণ এরই মধ্যে সব নির্বাচনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছে। আর দেশ কীভাবে চলবে, তার সিদ্ধান্ত জনগণকেই নিতে হবে। জনগণের কল্যাণে, তাদের স্বার্থে কাজ করেছি। এখন জনগণ চাইলে আমাদের ভোট দেবে, না চাইলে দেবে না। এই সিদ্ধান্ত জনগণকেই নিতে হবে। জনগণকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কী চায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কেবল মেগা প্রকল্প উদ্বোধন করছি না, খাদ্য উৎপাদনেও তো দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছি। মাছ, সবজি কোনটার অভাব আছে? ঘরে ঘরে বিদ্যুত, রাস্তাঘাট, পুল-ব্রীজ এগুলো কাদের জন্য? জনগণই তো এগুলোর সুফল ভোগ করে। আগে যেখানে দুই-তিন ঘণ্টা বসে থাকতে হতো, মেট্রোরেলের কল্যাণে এখন সেই পথ ১০ মিনিটে পাড়ি দেওয়া যাচ্ছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন করা হবে। এগুলো কার কাজে লাগে? জনগণের স্বার্থেই তো সবকিছু করা।
তিনি বলেন, দেশে কিছু লোক থাকবেই যাদের কিছুই ভালো লাগে না। আপনারা আশা করেন কীভাবে যে সবাই একরকম হবে এবং একসঙ্গে পথ চলবে? একটি দল আছে, তারা দেশ চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। তাদের জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের তো মনোবেদনা থাকবেই। তাদের কাছে তো সবকিছুই খারাপ লাগবে। তাদের নিয়ে তো কিছু বলার নেই।
আওয়ামী লীগ টানা দেড় দশক ক্ষমতায় থাকাকালে দেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে উল্লেখ করে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জনগণের জন্য কাজ করি। ১৫ বছর আগে দেশের অবস্থান কোথায় ছিল আর আজ কোথায় আছে? এত দ্রুততম সময়ে এত পরিবর্তন আনা কি সহজ কাজ? আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই এই পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে। কারণ, আমাদের আদর্শ আছে, নীতিমালা আছে, কর্মপরিকল্পনা আছে। এখন কী করব তাই শুধু নয়, সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা আছে আমাদের।
সর্বজনীন পেনশন নিয়ে অপপ্রচারকারীদের ‘অর্বাচীন’ আখ্যায়িত করে তাদের অপপ্রচারে কান না দেওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যারা পরশ্রীকাতরতায় ভোগে, যারা সবসময় হতাশায় ভোগে, যারা নিজেরা কিছু করতে পারে না, যারা সম্পূর্ণ অর্বাচীন, এই অর্বাচীনদের এই ধরনের কথায় জনগণ যেন কান না দেয়। আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের কল্যাণে কাজ করতে এসেছে, সে ভরসাটা দেশবাসীর থাকতে হবে।
তিনি বলেন, এই টাকা নিয়ে ইলেকশন ফান্ড করতে হবে, আওয়ামী লীগের তো ওইরকম দৈন্যতা হয়নি। আওয়ামী লীগ হচ্ছে নিজের খেয়ে নৌকা। জনগণ নিজের খেয়েই কিন্তু নৌকায় ভোট দেয় এবং আওয়ামী লীগের জন্য কাজ করে। এটিই হলো বাস্তবতা।
তিনি বলেন, সরকারি অফিসাররা পেনশন পায় কিন্তু সাধারণ জনগণ কোনো পেনশন ব্যবস্থায় নেই। বৃদ্ধ বয়সে তাদের নিশ্চয়তা দেওয়ার জন্যই এই সর্বজনীন পেনশনের কথাটা আমরা বলেছি। আমাদের নির্বাচনি ইশতেহারে এটা ঘোষণা ছিল, যা এখন কার্যকর করেছি।
দেশবাসীর উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা নেতিবাচক কথায় কান না দিয়ে নিজের স্বার্থ রক্ষার জন্য কাজ করুন। তিনি বলেন, যারা আজকে নেতিবাচক কথা বলছে, তারাই পেনশনে যোগ হবে সেটিও বলে দিতে পারি। আজকে আপনি টাকা জমা রাখবেন একটা নির্দিষ্ট বয়সে যেয়ে সেটা আপনি প্রতি মাসে তুলতে পারবেন। যে টাকা দিয়ে আপনি আপনার নিজের জীবন-জীবিকা চিকিৎসা অনেক কাজ কাজ করতে পারবেন। এই যে সুযোগটা সৃষ্টি করে দিলাম, জনগণের জন্য এটি সব থেকে কল্যাণমুখী একটি পদক্ষেপ। আওয়ামী লীগ সরকার এই পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নেতিবাচক কথা শুনে কেউ যেন বিভ্রান্ত না হয়, সেই আহ্বান থাকবে জাতির কাছে। যারা নেতিবাচক কথাগুলো বলে, এ পর্যন্ত যে কয়টা কথা বলেছে সব মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারার রাজনীতি, মেগা প্রকল্পগুলো নিয়ে বিভিন্ন অপপ্রচার, দুর্নীতি, অর্থপাচার, গ্রেনেড হামলা করে মানুষ হত্যার মত বিএনপি’র রাজনীতির বিভিন্ন অন্ধকার অধ্যায়ের উল্লেখ করেন।
বাজার সিন্ডিকেট করে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সিন্ডিকেট ভাঙ্গা যাবে না এটা কোনো কথা না। কে কত বড় শক্তিশালী আমি তা দেখবো।
‘সিন্ডিকেট ভাঙ্গা যাবে না’ এমন কিছু কোন মন্ত্রী বললে সে বিষয়টাও তিনি দেখবেন বলে জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের একটি চক্র আছে যারা সুযোগ পেলেই কারসাজি করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির চেষ্টা চালায়। এসব খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা কিন্তু ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। সরকার থেকে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে তারা দ্রব্যমূল্য কমাতে বাধ্য হয়।
তিনি বলেন, সবাই যদি কিছু উৎপাদন করি, কোন জায়গা পতিত না রেখে কিছু না কিছু উৎপাদন করলে আমাদের কোন সমস্যা হবে না। উৎপাদন বাড়িয়ে এবং বিকল্প ব্যবস্থা করে আমরা সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিচ্ছি, আগামীতেও দেব।
নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্বের দক্ষিণের দেশগুলো কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তা ব্রিকস সম্মেলনে বাংলাদেশ তুলে ধরেছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। প্রথমে লিখিত সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এবারের ব্রিকস সম্মেলন বাংলাদেশের জন্য ‘অত্যন্ত ফলপ্রসূ ছিল’ বলেও উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১:২৪:৫৯ ১৫৫ বার পঠিত