অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে ছয় জনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন রেজাউল করিম, সৈকত রহমান, সাদিকুল ইসলাম, নাজমুল আহসান, তৌহিদ হোসেন এবং জাকির হোসেন। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ১৭টি বিভিন্ন ব্রান্ডের মোবাইল ফোন, ২১টি সিম, ৪টি ল্যাপটপ, ৭টি ডেস্কটপ কম্পিউটার, ২টি ট্যাব, এবং নগদ প্রায় ৪ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।
সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের নিয়মিত মনিটরিংয়ে অনলাইন প্লাটফর্ম Mel Bet, 1x Bet এবং Bet winner নামের বেটিং সাইটগুলো নজরে আসে।
দেখা যায় এসব সাইটে বাংলাদেশের প্রচুর গ্রাহক বেটিং বা জুয়া খেলায় অংশগ্রহণ করছে। পরবর্তীতে সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়ার নির্দেশে উল্লিখিত সাইগুলোর বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করে সিআইডি সাইবার ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট-এর একটি টিম গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, বনশ্রী ও আগারগাঁও এবং সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে।
সিআইডি জানায়, রাশিয়া থেকে এই সমস্ত অনলাইন জুয়ার ওয়েবসাইট নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বিভিন্ন দেশে স্থানীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য এসব সাইটের জন্য ম্যানেজার নিয়োগ করা হয়।
ম্যানেজার বাংলাদেশে জুয়ার এজেন্ট হিসাবে বিশ্বস্তদের নিয়োগ দেয়। জুয়ার এজেন্টগণ এ সমস্ত অ্যাপস পরিচালনা করতে পারে টেকনিক্যালি দক্ষ এমন লোক রাখেন।
গ্রেপ্তারকৃত রেজাউল তার বাসায় ৭টি কম্পিউটার ও ৪টি ল্যাপটপ নিয়ে টেকনিক্যালি দক্ষ কয়েকজনকে সাথে নিয়ে আইটি ল্যাব তৈরি করে এই জুয়ার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলো। জুয়ার টাকা লেনদেনের জন্য তাদের সাথে যুক্ত হন গ্রেপ্তারকৃত সাদিকুল ও জাকিরের মতো এমএফএস এজেন্ট।
গ্রেপ্তারকৃত নাজমুল, তৌহিদদের মতো এমএফএস ডিস্ট্রিবিউশন হাউসের কিছু অসাধু কর্মচারীর সহযোগিতায় এই চক্র এজেন্ট সিম সংগ্রহ করে অনলাইন জুয়ার কাজসমূহ নির্বিঘ্নে করতে পারে। আটককৃত চক্রটি ঢাকার বিভিন্ন এলাকা এবং দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল সমূহে এই জুয়ার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, শরীয়তপুরের বাসিন্দা মতিউর রহমান যিনি রাশিয়ার মস্কোতে অবস্থান করছেন তিনি মূলত এই সাইটসমূহের বাংলাদেশের দায়িত্বে রয়েছেন। তার সহযোগী হিসেবে রয়েছেন যশোরের আশিকুর রহমান। এই দুইজন এবং গ্রেপ্তারকৃত সৈকত ও রেজাউল এই চারজনের সমন্বয়ে বাংলাদেশে এ তিনটি ওয়েবসাইটের নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
তাদের মাধ্যমে জুয়ার এজেন্টরা ওয়েবসাইটে ব্যবহৃত এমএফএস (এজেন্ট সিম) ব্যবহার করে সারা বাংলাদেশ থেকে জুয়াড়িদের টাকা সংগ্রহ করে প্রতিমাসে এই চক্রটি এমএফএস এবং বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা লেনদেন করে। কমিশন বাবদ তারা টাকার একটা ক্ষুদ্র অংশ পেয়ে জুয়ারিদের কাছ থেকে সংগৃহীত পুরো টাকা অ্যাপস পরিচালনাকারীদের কাছে হুন্ডি কিংবা ক্রিপ্টোকারেন্সিতে কনভার্ট করে রাশিয়াতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২২:১৬:২৩ ১৩৯ বার পঠিত