ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানার কমিশনিং কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শিল্প মন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন এ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।
২০১৮ সালের অক্টোবরে নরসিংদী জেলায় ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানার কার্যক্রম শুরু হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘদিন পর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি গত ২১ এপ্রিল, ২০২২ তারিখে এ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। এর বার্ষিক সার উৎপাদন ক্ষমতা ধরা হয়েছে ৯.২৪ লাখ মেট্রিক টন। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে দেশের অভ্যন্তরীন ইউরিয়া সারের চাহিদা মিটাতে এবং সুলভমূল্যে কৃষকদের নিকট সার সরবরাহ নিশ্চিত করতে এটি ভূমিকা রাখবে।
আগামী অক্টোবর মাসের শেষ নাগাদ পুরোদমে চালু হবে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানার উদ্বোধন করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
আজ শিল্প মন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন প্রধান অতিথি হিসেবে নরসিংদীর পলাশে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানার কমিশনিং কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এ সময় শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এমপি, স্থানীয় এমপি ড: আনোয়ারুল আশরাফ খান, শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা, বিসিআইসি’র চেয়ারম্যান মো: সাইদুর রহমান এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এসএম আলম উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া, প্রকল্প পরিচালক রাজিউর রহমান মল্লিক এবং ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেছেন, বিদেশি কোম্পানিকে বেঁধে দেওয়া নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ হচ্ছে ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানার সার্বিক কাজ। ইতোমধ্যেই ৯৫ থেকে ৯৮ ভাগ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। চলতি মাসেই পরীক্ষামূলক উৎপাদনে যাবে পরিবেশ বান্ধব এই সার কারখানাটি। তিনি বলেন, নিরবচ্ছিন্ন সার সরবরাহ নিশ্চিত করে শিল্প মন্ত্রণালয় কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখতে সচেষ্ট রয়েছে। সার কারখানা পর্যায়ে উৎপাদন যাতে কোনো অবস্থায় ব্যাহত না হয়, সে লক্ষ্যে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। সার কারখানার উৎপাদন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেয়ার লক্ষ্যে ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের প্রশাসনিক ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে। একই সাথে কারখানাগুলোর উৎপাদনশীলতা বাড়াতে কারিগরি জনবলের প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজন অনুযায়ী নতুন জনবল নিয়োগ করা হবে বলে তিনি জানান।
শিল্পমন্ত্রী আরও বলেন, “ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রকল্প” নামক প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের মধ্যে সর্ববৃহৎ সার কারখানা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে যাচ্ছে যা বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় বিরাট ভূমিকা রাখবে। নতুন সার কারখানাটি স্থাপিত হলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের পাশাপাশি সার আমদানির উপর নির্ভরতা হ্রাস পাবে, কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা বৃদ্ধি পাবে এবং দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
উল্লেখ্য, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন কাজ সম্পন্ন হলে দৈনিক ২৮০০ মে:টন (বার্ষিক ৯,২৪,০০০ মে:টস) গ্রানুলার ইউরিয়া সার উৎপাদন হবে। সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন, শক্তি সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব গ্রানুলার ইউরিয়া উৎপাদনে সক্ষম এই সার কারখানা দেশে ইউরিয়া সারের স্বল্পতা ও ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে গুরু্ত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কারখানাটি দেশের কৃষি উৎপাদন, কৃষি অর্থনীতি, ব্যবসা বাণিজ্য সর্বোপরি দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে। “ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রকল্প” এর ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। প্রকল্পের বিভিন্ন প্ল্যান্টের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের অ্যামোনিয়া প্ল্যান্ট, ইউরিয়া প্ল্যান্ট এবং ইউটিলিটি দৃশ্যমান। এছাড়া, পিডিবি হতে পাওয়ার রিসিভিং, ইমাজেন্সি ডিজেল জেনারেটরের লোড টেন্ট সম্পন্ন হয়েছে, কুলিং ওয়াটার সিস্টেমে ওয়াটার ফ্ল্যাশিং ও কেমিক্যাল ক্লিনিং, নাইট্রোজেন ইউনিটের Instrument Air Compressor এর প্রি-কমিশনিং এবং কমিশনিং শেষ হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮:১৪:৫০ ২০২ বার পঠিত