শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিষয়ে বিবৃতি-সংক্রান্ত বক্তব্য দেয়ায় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহমেদ ভূঁইয়াকে অব্যাহতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সলিসিটর অনুবিভাগের সলিসিটর রুনা নাহিদ আকতার স্বাকরিত প্রজ্ঞাপনে তাকে এ অব্যাহতি দেয়া হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘The Bangladesh Law Officers order, 1972 (PO No. 6 of 1972) এর ৪ (১) অনুচ্ছেদ অনুসারে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জনাব এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া’র নিয়োগাদেশ জনস্বার্থে বাতিলক্রমে তাকে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হলো। ইহা অবিলম্বে কার্যকর হবে।’
এর আগে সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) আদালত প্রাঙ্গণে দেয়া এক বক্তব্যে ড. ইউনূস বিচারিক হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে জানান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহমেদ ভূঁইয়া।
তিনি বলেন, ‘ড. ইউনূসের পক্ষে ১৬০ জন বিদেশি ব্যক্তি বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিদাতাদের মধ্যে বারাক ওবামা, হিলারি ক্লিনটনও রয়েছেন। ওই বিবৃতির বিরুদ্ধে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় থেকে প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দেয়ার কথা রয়েছে। সেখানে নোটিশ করা হয়েছে যে, অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের সবাইকে স্বাক্ষর করার জন্য। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমি ড. ইউনূসের বিপক্ষে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করব না। ড. ইউনূসের পক্ষে ১৬০ জন বিদেশি ব্যক্তি যে বিবৃতি দিয়েছেন, আমি তাদের সঙ্গে একমত।’
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস একজন সম্মানিত ব্যক্তি, তিনি বিচারিক হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে আমি মনে করি।
শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত করা এবং বাংলাদেশের আগামী সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গত মাসে খোলা চিঠি দেন ১৭৫ জন বিশ্বনেতা। চিঠিতে বলা হয়, ‘সম্প্রতি তাকে (ড. ইউনূস) লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করায় আমরা উদ্বিগ্ন এবং এটি তাকে বিচারিকভাবে হেনস্তা করার একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া বলে আমাদের বিশ্বাস।’
এর প্রতিবাদ জানিয়ে গত শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বাংলাদেশের ১৭১ জন বিশিষ্ট নাগরিক, বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবী নেতা এক বিবৃতিতে বলেন, ওই খোলা চিঠির বক্তব্য বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীন বিচার বিভাগের ওপর স্পষ্ট হুমকি হিসেবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। দেশের বিবেকবান নাগরিক হিসেবে আমরা বাংলাদেশের বিচার প্রক্রিয়ার ওপর এ ধরনের অযাচিত হস্তক্ষেপের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।
বিদেশিদের লেখা ওই খোলা চিঠির প্রতিবাদ জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, দেশের ৫০টি জাতীয় দৈনিকের সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন নীল দল, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ ও ১৩টি জাতীয়ভিত্তিক সাংস্কৃতিক ফেডারেশন। এছাড়া সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিও প্রতিবাদ জানিয়েছে।
এর আগে চলতি বছরের মার্চে প্রথমবারের মতো ড. ইউনূসের ‘নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি লেখেন ৪০ জন বিশ্বনেতা। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টে বিজ্ঞাপন আকারে ছাপা হয়েছিল চিঠিটি। প্রায় ৮০ লাখ টাকা খরচ করে খোলা চিঠির নামে বিজ্ঞাপন ছাপানো হয়েছিল।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:০২:১৩ ১৫৫ বার পঠিত