কিয়ামত সত্য। কিয়ামতের দিন হাশরের ময়দানে সবাই একত্রিত হবে। হাশরের দিন আল্লাহর আরশের ছায়া ছাড়া অন্য কোন ছায়া থাকবে না। সেদিন মানুষ ছোটাছুটি করবে। মা তার সন্তানকে চিনবে না। সন্তান তার বাবা-মাকে চিনবে না। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘সেদিন মানুষ নিজের সন্তানকে রেখে পালিয়ে যাবে। তাদের মধ্যে প্রত্যেক ব্যক্তির ওপর সেদিন এমন বিপদ নেমে আসবে যে, তখন নিজেকে ছাড়া আর কারও দিকে তাকানোর মতো অবস্থা থাকবে না’। (সুরা: আবাসা ৩৪-৩৭)
হজরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন ‘মহানবী সা. কে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন মানুষ উলঙ্গ হয়ে খতনাহীন অবস্থায় কবর থেকে হাশরের ময়দানে এসে দাঁড়াবে। এ কথা শুনে আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল সা. নারী-পুরুষ সবাই কি উলঙ্গ থাকবে? এমন হলে তো খুবই লজ্জার ব্যাপার। উত্তরে রাসুল সা. সা. বললেন, হে আয়েশা! সে দিনের পরিস্থিতি এত ভয়ঙ্কর হবে, কেউ কারও দিকে তাকানোর কথা কল্পনাও করতে পারবে না।’ (বুখারি ও মুসলিম)
সেদিন আল্লাহ তাআলা তিন ধরেণের লোকের সাথে কথা বলবেন না, তাকাবেন না। হজরত আবু যর রা. বলেন, রাসুল সা. বলেন, ‘কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তিন ব্যক্তির সাথে কথা তো বলবেনই না বরং তাদের দিকে তাকিয়েও দেখবেন না। এমনকি তিনি তাদের গুনাহ থেকে পবিত্র করবেন না বরং তাদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, তারা কারা? তবে এরা তো ধ্বংস, তাদের বাঁচার কোন রাস্তা নাই। রাসুল সা. এ কথা তিনবার বলেছেন। তিন ধরণের লোকদের মধ্যে ১. যে ব্যক্তি টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে কাপড় পরে। ২. যে ব্যক্তি মিথ্যা কসম খেয়ে ব্যাবসার পণ্য বিক্রি করে। ৩. যে ব্যক্তি কারো উপকার করে আবার খোঁটা দেয়। (মুসলিম, তিরমিজি, আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ)।
টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান কবিরা গুনাহ
টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করা অনেক গুনাহের। রাসুল সা. হাদিসে এ বিষয়ে সতর্ক করেছেন। হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সা. বলেন, ‘লুঙ্গির যে অংশ টাখনুর নিচে থাকবে তা আগুনে প্রজ্জলিত হবে।’ (বুখারি)
অন্য হাদিস থেকে জানা যায়, হজরত জাবের ইবনে সুলাইম রা. হতে বর্ণিত, রাসুল সা. বলেন, ‘টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে কাপড় পড়ার ব্যাপারে সাবধান হও। কারণ, তা অহংকারের অন্তর্ভুক্ত। আর আল্লাহ অহংকার করাকে পছন্দ করেন না।’ (আবু দাউদ)।
মিথ্যা কথা বলে পণ্য বিক্রি হারাম
যে ব্যক্তি মিথ্যা কসম খেয়ে ব্যবসার পণ্য বিক্রি করে তার দিকেও আল্লাহ তাকাবেন না। রাসুল সা. বলেছেন, তোমরা ক্রয়-বিক্রয় করার সময় শপথ করা থেকে বিরত থাক। কেননা মিথ্যা শপথের ফলে পণ্য বিক্রয় হলেও তার বরকত নষ্ট হয়ে যায়। (ইবনে মাজাহ ২২০৯, মুসলিম ১৬০৭, নাসাঈ ৪৪৬০)
এক ব্যক্তি আসরের পর তার পণ্য সম্পর্কে কসম খেয়ে বলে, তাকে পণ্যটি এত এত মূল্যে দেওয়া হয়েছে। তার কথা ক্রেতা বিশ্বাস করল, অথচ সে মিথ্যুক। এ ধরনের ব্যবসায়ীর জন্য উল্লিখিত হাদিসে অত্যন্ত কঠিন ও বেদনাদায়ক শাস্তির কথা বর্ণনা করা হয়েছে। (আবু দাউদ ৩৪৭৪, নাসায়ি ৪৪৬২)
মহাগ্রন্থ আল কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘যারা আল্লাহর প্রতিশ্রুতি ও নিজের শপথ স্বল্প মূল্যে বিক্রয় করে, পরকালে তাদের কোনো অংশ নেই। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না, তাদের দিকে (দয়ার দৃষ্টিতে) চেয়ে দেখবেন না, তাদের পরিশুদ্ধ করবেন না। তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।’ (সুরা: আল ইমরান ৭৭, বুখারি ও মুসলিম)
খোঁটা দেয়া কবিরা গুনাহ
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, যারা স্বীয় ধন সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে, ব্যয় করার পর সে অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে না। কষ্টও দেয় না, তাদেরই জন্যে তাদের পালনকর্তার কাছে রয়েছে পুরস্কার। তাদের কোনো আশঙ্কা নেই, তারা চিন্তিতও হবে না। (সুরা: বাকারা ২৬২)
আল্লাহ তাআলা আরো ইরশাদ করেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরা অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে। কষ্ট দিয়ে নিজেদের দান-বদান্যতা বরবাদ করো না সে ব্যক্তির মতো, যে নিজের ধন-সম্পদ লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ব্যয় করে। আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে না। (সুরা: বাকারা ২৬৪)
বাংলাদেশ সময়: ১১:৪২:২১ ১২৩ বার পঠিত