আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন তিন হাজার ৩৬২ জন। এরই মধ্যে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের প্রার্থীদের চূড়ান্ত করেছে ক্ষমতাসীনরা। প্রতিটি আসনে নৌকা প্রতীকের একক প্রার্থী দেবে দলটি। কিন্তু প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনে না আসায় অনেক আসনেই আওয়ামী লীগ নেতাদের বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। দলীয় প্রার্থী ঘোষণার পরই মনোনয়নবঞ্চিতরা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেবেন। তবে, এখনই বিদ্রোহীদের নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দলটি।
এ প্রসঙ্গে প্রতিবেদক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে প্রশ্ন রাখলে তিনি বলেন, “আগে আমরা দেখি কারা বিদ্রোহ করে, তারপর সিদ্ধান্ত নেব।”
ইতোমধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সব প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ। দলীয় প্রার্থী নিশ্চিত করতে মনোনয়ন ফরম বিক্রির কাজও শেষ। এখন চলছে সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড সভা। সেই সভা শেষে একযোগে ৩০০ আসনে নৌকার মাঝিদের নাম ঘোষণা করা হবে। শুধু মনোনয়ন চূড়ান্তেই সীমাবদ্ধ নয়, এরই মধ্যে ১৫টি নির্বাচনী উপ-কমিটি গঠন করেছে দলটি। নির্বাচনী ইশতেহার কমিটিও রয়েছে এর মধ্যে। নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ক্ষমতাসীনদের মধ্যে নির্বাচনী আমেজ ততই বাড়ছে।
শুধু কেন্দ্রে নয়, তৃণমূল পর্যায়েও একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে সব জায়গায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
যে কারণে আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকদের দায়িত্ব পরিবর্তন আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়
একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেও তৃণমূলের ক্ষমতা ছিল মুষ্টিমেয় কয়েকজনের হাতে। তারাই নৌকার সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছেন। বঞ্চিত হয়েছেন তৃণমূলের অধিকাংশ নেতা। একই ব্যক্তি বারবার এমপি কিংবা জনপ্রতিনিধি হওয়ায় ক্ষমতা ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে।
কেউ কেউ আবার বলছেন, দীর্ঘদিন যারা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তাদের কাছে জনগণের অনেক প্রত্যাশা থাকে। সেই প্রত্যাশাগুলো পূরণ করার জন্য হলেও জনপ্রতিনিধি হওয়া প্রয়োজন। জনগণের প্রয়োজনে অনেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেবেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ১৮ থেকে ২১ নভেম্বর বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছে আওয়ামী লীগ। এই চার দিনে মোট তিন হাজার ৩৬২টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে অনলাইনে ১২১ জন ফরম কিনেছেন। ফরম বিক্রি করে ১৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা আয় হয়েছে দলটির।
ঢাকা বিভাগে বিক্রি হয়েছে ৭৩০টি ফরম। চট্টগ্রাম বিভাগে ৬৫৯টি, সিলেট বিভাগে ১৭২টি, ময়মনসিংহ বিভাগে ২৯৫টি, বরিশাল বিভাগে ২৫৮টি, খুলনা বিভাগে ৪১৬টি, রংপুর বিভাগে ৩০২টি এবং রাজশাহী বিভাগে ৪০৯টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে। কয়েকটি বাদে প্রতিটি আসনে নৌকার মাঝি হতে লড়ছেন ১১ জন।
অনলাইনেও পাওয়া যাবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম নির্বাচন কমিশন ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের লোগো দলীয়ভাবে এখনো বিদ্রোহীদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়নি। আমাদের নেত্রী দলীয় প্রার্থীকে পাস করিয়ে আনতে বলেছেন। এ ক্ষেত্রে দল থেকে যাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে তার পক্ষেই সবাই একযোগে কাজ করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য
জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য ঢাকা পোস্টকে বলেন, “আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয়ভাবে ৩০০ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হবে। আমরা একটি আসনে একজনকেই চূড়ান্ত করব। দীর্ঘদিন যারা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তারাই তো মনোনয়ন চাচ্ছেন। সবাইকে তো আর মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব না। সেক্ষেত্রে অনেকেই ‘বিদ্রোহী’ বলি বা ‘স্বতন্ত্র’ বলি— নির্বাচনে অংশ নেবেন। তবে, দলীয়ভাবে এখনো বিদ্রোহীদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়নি। আমাদের নেত্রী দলীয় প্রার্থীকে পাস করিয়ে আনতে বলেছেন। এ ক্ষেত্রে দল থেকে যাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে তার পক্ষেই সবাই একযোগে কাজ করবেন।”
“আগামী নির্বাচনে তেমন শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় দলের নেতাদের মধ্যেও একটা প্রতিযোগিতা হতে পারে। বিএনপি নির্বাচনে না এলেও তৃণমূল বিএনপি ও জাতীয় পার্টি তো আসছে। সে কারণে নির্বাচন উৎসবমুখর হবে। তবে, বিভিন্ন সময়ে দল বিদ্রোহীদের ক্ষমা করে দিয়েছে, তাদের বড় কোনো শাস্তির মুখে পড়তে হয়নি। সে কারণ অনেকেই সাহস দেখাবে বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে।”
তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, নৌকার টিকিট না পেলেও ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন অনেক আওয়ামী লীগ নেতা। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিলে এবার দলও বসে যাওয়ার জন্য চাপ দেবে না। বিএনপি ভোটে আসবে না, এটি ধরে নিয়েই ক্ষমতাসীনরা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন দেখাতে চাইছেন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যাতে কেউ জিততে না পারেন, এমন বার্তাও দেওয়া হয়েছে শীর্ষপর্যায় থেকে। এর সঙ্গে রয়েছে ভোটারের বেশি উপস্থিতির প্রত্যাশাও
প্রতিবেদকের এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “বিগত সময়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যেভাবে নির্বাচিত হয়েছেন, এবার তা হবে না। এবার সেই সুযোগ নেই।”
যদিও বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে এখন পর্যন্ত নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের মুখে একটি শব্দও শোনা যায়নি। একাধিক নেতা বলছেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফাঁদ তৈরি করতেই বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ, তারা (বিএনপি) দেশে-বিদেশে নেতিবাচক বার্তা দিতে চায়। সেই বার্তা যেন দিতে না পারে সেজন্য নির্বাচনকে প্রতিযোগিতামূলক করতে চাচ্ছে ক্ষমতাসীনরা।
তবে, এবার তৃণমূল বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সঙ্গে লড়তে হবে নৌকার প্রার্থীদের। বিএনপিবিহীন নির্বাচনী মাঠে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ হবে কি না— তা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দলটির পক্ষে কারা ভোটের মাঠে নামবেন, তা জানা যাবে আগামীকাল শনিবার (২৫ নভেম্বর)।
বাংলাদেশ সময়: ১৮:১৪:২৮ ১১৯ বার পঠিত #নির্বাচন ২০২৪