এক দফা আন্দোলনের অংশ হিসেবে ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশে সংঘটিত সহিংসতাকে কেন্দ্র করে ২৯ অক্টোবর থেকে শুরু হয় দফায় দফায় হরতাল-অবরোধ। এতে ভুক্তভোগী হচ্ছেন স্বল্প আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। দৈনিক আয়ের ওপর যারা জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন, তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে বেজায় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। তাছাড়া, এরই মধ্যে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে দেশের অর্থনীতিতে।
লাগাতার হরতাল-অবরোধে বাস-ট্রাকসহ গণপরিবহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। সময়মতো বন্দরে পণ্য পৌঁছাতে না পারায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের রফতানি বাণিজ্য। এফবিসিসিআই সভাপতির দেয়া হিসাব অনুযায়ী, হরতাল-অবরোধে প্রতিদিন ক্ষতি হচ্ছে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে হরতাল-অবরোধের মতো নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের প্রভাবে দেশের পোশাক খাতসহ রফতানিমুখী খাতগুলো মুখ থবড়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ধ্বংসাত্মক রাজনৈতিক কর্মসূচি পরিহারের আহ্বান জানাচ্ছেন ব্যবসায়ী-অর্থনীতিবিদসহ সর্বস্তরের মানুষ।
হরতাল-অবরোধ মানেই যেন অগ্নিসংযোগের মহোৎসব
বিএনপির সমাবেশ ভণ্ডুল হওয়ার পর, গত ২৯ অক্টোবর থেকে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত বিএনপির ডাকা অবরোধ-হরতালে সারা দেশে ২৯০টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগের কথা জানিয়েছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) পুলিশ সদর দফতরের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ২২ নভেম্বর পর্যন্ত ৩৭৬টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ১৭টি স্থাপনায়ও আগুন দেয়া হয়।
এসব নাশকতার জন্য বিএনপিকে দায়ী করে পুলিশ বলছে, “গত ২৮ অক্টোবর বিএনপি মহাসমাবেশ-পরবর্তী হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে। ইচ্ছার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে এসব কর্মসূচি পালনে বাধ্য করতে তারা নাশকতা ও হিংসাত্মক কার্যক্রম চালায়। সাধারণ মানুষের ওপর তারা পৈশাচিক ও ঘৃণ্য কার্যকলাপে লিপ্ত হয়। এ সময় এক পুলিশ সদস্যসহ মোট ছয়জনের প্রাণহানি হয়।
অগ্নিসংযোগের বাইরে এ সময় ২৭৫টি যানবাহন, ২৪টি স্থাপনাসহ ৩১০টি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পাশাপাশি রেলওয়েতে ২৪টি নাশকতার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে টাঙ্গাইল, জামালপুর ও সিলেটে তিনটি ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ছয়টি ট্রেনে পাথর ছুড়ে মারা হয়েছে। রেললাইনে ৯টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
এছাড়া, সিলেট, ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জে রেললাইন কেটে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। গাইবান্ধায় রেললাইনের ফিশপ্লেট খোলার চেষ্টাও করা হয়েছে। পাবনায় ট্রেনে পেট্রোল ও ডিজেলভর্তি বোতল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। নারায়ণগঞ্জে রেললাইনের ওপর অতিরিক্ত ৩ ফুট লম্বা ৩ ইঞ্চি চওড়া পাত সংযোজন করে নাশকতার চেষ্টা করা হয়েছে।
পরিবহন খাতে ক্ষতি ১২ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা
ফায়ার সার্ভিসের দেয়া তথ্যমতে, দফায় দফায় বিএনপির ডাকে হরতাল-অবরোধ চলাকালে নাশকতার আগুনে পুড়েছে যেসব যানবাহন, তার অধিকাংশই বাস। এছাড়া ২৬টি ট্রাক, ১৩টি কাভার্ড ভ্যান, ৮টি মোটরসাইকেল, ২টি প্রাইভেট কার, ৩টি মাইক্রোবাস, ৩টি পিকআপ, ৩টি অটোরিকশা, ২টি ট্রেন, ১টি নছিমন, ৩টি লেগুনা, ফায়ার সার্ভিসের ১টি গাড়ি, পুলিশের ১টি গাড়ি ও ১টি অ্যাম্বুলেন্সও পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে এ সময়।
আরও পড়ুন: হরতাল-অবরোধে পণ্য পরিবহন ভাড়া দ্বিগুণ, বিপাকে গার্মেন্টস মালিকরা
এতে ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত হরতাল-অবরোধে গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে পরিবহন খাতে ৩৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ। এ সময় দেশের পরিবহন খাতে যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হওয়ায় পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা আনুমানিক ১২ হাজার ৩৩৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছেন বলেও সময় সংবাদকে জানান তিনি।
হরতাল-অবরোধের শিকার স্বল্প আয়ের মানুষ
মহাখালী টার্মিনাল সংলগ্ন ফুটপাতে খাবার বিক্রি করেন কামাল (ছদ্মনাম)। জানান, ২৯ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া হরতাল-অবরোধের কারণে রাজধানীতে বিভিন্ন প্রয়োজনে আসা মানুষের সংখ্যা কমে গেছে। পাশাপাশি অবরোধে দূরপাল্লার বাস ঠিকভাবে না চলায় অলস সময় পার করছেন এসব বাসের ড্রাইভার-হেলপারসহ পরিবহন শ্রমিকরা। তার খাবারের দোকানের অধিকাংশ খরিদ্দারই পরিবহন শ্রমিক ও মহাখালী বাস টার্মিনাল ব্যবহারকারী যাত্রীরা। অবরোধের কারণে যাত্রীরা না আসায় তার দোকানের বেচাকেনা কমে গেছে অর্ধেকেরও বেশি। পাশাপাশি ট্রিপ না থাকায় পরিবহন শ্রমিকদের হাতেও টাকা নেই। এ অবস্থায় তার দোকানে বাকি খাচ্ছেন অনেক পরিবহন শ্রমিক। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে দোকান বন্ধ করে দিতে হবে বলে জানান কামাল।
কারওয়ানবাজার মোড়ে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন উবারের চুক্তিবদ্ধ মোটরসাইকেল চালক সোহেল। জানান, দু-তিন ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও যাত্রী পাওয়া যায় না। হরতাল-অবরোধের কারণে রাজধানীতে বাইরের জেলার মানুষের না আসাকে দায়ী করেন তিনি। এ অবস্থায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি।
সায়দাবাদ থেকে উত্তরবঙ্গগামী একটি যাত্রীবাহী বাসের সুপারভাইজার বাতেন মিয়া জানান, হরতাল-অবরোধের মধ্যে সুযোগ বুঝে ঝুঁকি নিয়ে হলেও গাড়ি চালাচ্ছেন তারা। তার গাড়ির অধিকাংশ যাত্রীই উত্তরবঙ্গ থেকে রাজধানীতে কাজের খোঁজে আসা শ্রমজীবী মানুষ। গাড়িতে আগুন ও ভাঙচুরের খবরে বাসে চড়তে ভয় পাচ্ছেন তারা। যাত্রীর সংখ্যা কম হওয়ায় তেলের খরচ, রাস্তার খরচ ও অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে বাসের স্টাফদের হাতে কিছুই থাকছে না। দিনের পর দিন লোকসান টানছেন মহাজন। তার ওপর রয়েছে যখন-তখন অগ্নিসংযোগের ভয়। এ পরিস্থিতিতে তাদের মহাজন বাস বিক্রি করে দেয়ার কথা ভাবছেন বলে জানান বাতেন।
ধ্বংসের মুখে অর্থনীতি
টানা ধ্বংসাত্মক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ক্ষতির মুখে পড়েছে দেশের অর্থনীতি। হরতাল-অবরোধের কারণে অভ্যন্তরীণ পণ্য পরিবহন সংকটের প্রভাব পড়ছে দেশের রফতানিমুখী খাতে। এতে সময়মতো পণ্য জাহাজীকরণ করতে পারছেন না রফতানিকারকরা। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে নানা নেতিবাচক খবর ছড়িয়ে পড়ায় রফতানি আদেশ কমিয়ে দিয়েছেন অনেক ক্রেতা। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের অর্থনীতির মূল ভিত্তি পোশাক খাত। এ অবস্থায় দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি পরিহারের আহ্বান জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)।
হরতাল-অবরোধের প্রভাবে দিনে গড়ে অর্থনীতিতে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে বলে সম্প্রতি সাংবাদিকদের জানান এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম। তিনি বলেন, এ ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড মহাসড়কে সহিংসতা সৃষ্টি করছে, যা বিদেশি ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীদের কাছে ভুল বার্তা দিচ্ছে। হরতাল-অবরোধের কারণে কাঁচামাল সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় শিল্প খাতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি বলেন, হরতাল-অবরোধের কারণে ট্রাকভাড়া বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। আগে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের ট্রাকভাড়া ছিল ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ৩২ থেকে ৩৪ হাজার টাকা। এই খরচের বোঝা চাপছে কারখানা উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের কাঁধে।
বাতিল হচ্ছে রফতানি অর্ডার
অবরোধ পরিস্থিতির কারণে তৈরি পোশাকের অর্ডার না পাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে জানান পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। সময় সংবাদকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ইউরোপ-আমেরিকার আগামী গ্রীষ্মকালের পোশাক অর্ডারের সময় মূলত নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর। বর্তমানে এই অর্ডারে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। আমরা ভয় পাচ্ছি এই অর্ডার অন্য কোনো দেশে চলে যাচ্ছে কি না।
তিনি বলেন, গত জানুয়ারি থেকেই অর্ডার দিন দিন কমছিল মূলত ইউক্রেন যুদ্ধসহ বিশ্বের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে। এ সময় অর্ডার প্রায় ৩০ শতাংশ কমে গিয়েছিল। আমরা আশা করেছিলাম নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে অবস্থার উন্নতি ঘটবে, অর্ডার বাড়বে। তবে অর্ডার তো বাড়েইনি, বরং আশঙ্কাজনকভাবে দিন দিন কমছে। মূলত হরতাল-অবরোধের প্রভাবে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ইউরোপ ও আমেরিকার বায়াররা আগ্রহ হারাচ্ছেন। যদি এ অবস্থা চলতে থাকে তবে রফতানি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না। সামনে কী হবে তা কেউ বলতে পারছে না। সব মিলিয়ে রফতানিকারকরা আতঙ্কে রয়েছেন।
হরতাল-অবরোধের কারণে রফতানির জন্য প্রস্তুত করা পোশাক জাহাজীকরণে অনিশ্চয়তার তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, কখন কোন গাড়িতে আগুন লাগে, এ ব্যাপারে ভীতিকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। আতঙ্কিত পরিবহন মালিকরা কারখানায় শ্রমিকদের বহনের জন্য গাড়ি ভাড়া দিতে চান না। এ কারণে শ্রমিকদের কারখানায় আসতে সমস্যা হয়। এতে কারখানায় উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বন্দর থেকে আমদানি করা কাঁচামাল আনতে ও রফতানির পণ্য বন্দরে পৌঁছাতে গাড়ি পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও অনেক ভাড়া দিতে হয়।
বন্ধ হওয়ার হুমকিতে পোশাক কারখানা
প্রতি মাসেই রফতানি অর্ডার কমছে উল্লেখ করে হরতাল-অবরোধ চলতে থাকলে আগামী ছয় মাসের মধ্যে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার হুমকিতে রয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।
আরও পড়ুন: হরতালে ট্রেনসহ ১৯ যানবাহনে আগুন: ফায়ার সার্ভিস
তিনি সময় সংবাদকে বলেন, এভাবে দেশে রাজনৈতিক সহিংসতা চলতে থাকলে রফতানি কমবে। রফতানি কমলে দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরবে না। বিশেষ করে পোশাক খাত ক্ষতিগ্রস্ত হলে দেশের অর্থনীতির চাকা মুখ থুবড়ে পড়বে। এখন অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে মাস শেষে কর্মীদের বেতনের টাকা দেয়া যায় না। ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ছয় মাসের মধ্যে বহু কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে।
হরতাল অবরোধের কারণে রফতানি স্বাভাবিক সময়ের থেকে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমেছে বলেও জানান মোহাম্মদ হাতেম। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত পণ্যবাহী কনটেইনার পৌঁছাতে গুনতে হচ্ছে বেশি অর্থ। আগে যে ট্রাকভাড়া ছিল ১০ হাজার এখন তা ২০ হাজার টাকা। সময়মতো পণ্য জাহাজীকরণ না হওয়ায় ব্যাংকের টাকা পরিশোধের শিডিউল বজায় রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। রফতানিকারক ও কারখানার মালিকরা। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন বজায় রাখতে পারবেন না তারা। ফলে এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে রফতানি। বর্তমানে যে পরিস্থিতি তাতে রফতানি কমে গেছে স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় ৪০ শতাংশ।’ এ পরিস্থিতিতে দেশের পোশাক খাতকে বাঁচানোর জন্য রাজনৈতিক সহিংসতা পরিহার করতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
অশনিসংকেত দেখছেন অর্থনীতিবিদরা
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) গবেষণা পরিচালক ড. মাহফুজ কবীর সময় সংবাদকে বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি তৈরি পোশাক খাত। মাঝখানে মজুরি নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষ হলেও তা কিন্তু থেমে গেছে। কিন্তু এখন মাথাব্যথা হিসেবে দাঁড়িয়েছে পণ্য পরিবহন। হরতাল-অবরোধের কারণে রফতানিমুখী পণ্য বন্দরে পাঠানো এবং বন্দর থেকে আমদানিকৃত কাঁচামাল দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত কারখানাগুলোতে পৌঁছাতে পারছে না। একদিকে সময়মতো রফতানিপণ্য বন্দরে পৌঁছাতে পারছে না, আরেক দিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নেতিবাচক প্রচারণা। মূলত এই দুই বিষয়ের প্রভাব পড়ছে দেশের রফতানি বাণিজ্যে।’
তিনি বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির শিকার হওয়ার পরও সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিল। কিন্তু এই রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে এই প্রচেষ্টা ব্যাহত হচ্ছে। বাংলাদেশের মূল শক্তি হলো রফতানি, সেখানে যদি চাপ আসে সেই চাপ নেয়ার মতো পরিস্থিতি এ মুহূর্তে বাংলাদেশের নেই। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন বিদেশি ক্রেতারাও। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে তারা মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে বাংলাদেশ থেকে। এ কারণে যতটুকু অর্ডার হওয়ার কথা ছিল ততখানি অর্ডার আসছে না।
বিদেশি ক্রেতাদের মুখ ফিরিয়ে নেয়ার প্রধান কারণ হিসেবে দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দায়ী করে ড. মাহফুজ কবীর বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। যার প্রভাব পড়ছে বায়ারদের ওপর। তারা বিষয়গুলোকে নেতিবাচক হিসেবে নিচ্ছে। তারা বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। আর একবার যদি তারা বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে সেই পরিস্থিতি পুনরুদ্ধার করা কিন্তু খুবই কঠিন হবে। সব মিলিয়ে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বাংলাদেশকে একটি মারাত্মক পরিণতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, গবেষণা সংস্থা সানেমের নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান সময় সংবাদকে বলেন, যদি বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা চলতে থাকে, তবে দেশের অর্থনীতিতে অবশ্যই এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আমাদের রফতানির সর্বশেষ মাসের প্রবৃদ্ধি কিন্তু নেতিবাচক। পোশাক রফতানি খাতেও পরিস্থিতি ভালো না। এ পরিস্থিতিতে সামনের মাসগুলোতেও যদি রাজনৈতিক অস্থিরতা চলতে থাকে, তাহলে কোনোভাবেই তা দেশের অর্থনীতির জন্য সুখবর নয়।
বাংলাদেশ সময়: ১০:২৪:৪৯ ৯৩ বার পঠিত