মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৩

বর্ণাঢ্য আয়োজনে রনবীর আশিতম জন্মবার্ষিকী উদযাপিত

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » বর্ণাঢ্য আয়োজনে রনবীর আশিতম জন্মবার্ষিকী উদযাপিত
মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৩



বর্ণাঢ্য আয়োজনে রনবীর আশিতম জন্মবার্ষিকী উদযাপিত

আশিতে পৌঁছার পর আর পেছনে ফেরার সুযোগ নেই। ঝড়-ঝঞ্ঝা নিয়ে সমুদ্র পার হওয়ার পর আবার ফিরে নতুন করে সবকিছু শুরুর সময় পাওয়া যায় না। তবে জীবনে থেমে থাকা যাবে না। সৃষ্টি করে এগিয়ে চলতে হবে।

নিজের আশিতম জন্মবার্ষিকীতে এসব কথাই উচ্চারিত হলো ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুন নবীর কণ্ঠে। নিজের সৃষ্ট কার্টুনচরিত্র ‘টোকাই’-এর কারণে যিনি রনবী নামে সমধিক খ্যাতিমান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় আয়োজিত জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে দেশবরেণ্য এই শিল্পী বলেন, ‘মনে হচ্ছে, একটা মহাসমুদ্র পার হলাম। একটা সমুদ্রে অনেক কিছুই থাকে।
ঝড়-ঝঞ্ঝা থাকে, দ্বীপ থাকে, সেই দ্বীপে উত্তরণ ও নামার ব্যাপার থাকে। এই যাত্রা একেবারে সহজ-সরল ছিল না। আমরা এমন একটা দেশে থাকি যেখানে অনেক কিছু নিয়ে ভাবতে হয়। অনেক কিছু নিয়ে লড়াই করতে হয়।
রাজনীতি থেকে সমাজ, সমাজ থেকে সংস্কৃতি কোথাও সহজে এগিয়ে যাওয়ার ব্যাপার নেই। এসবের মাঝে থেকেই কাজ করতে হয়। এসব থেকেই আমার কার্টুন ও অন্যান্য শিল্পের সৃষ্টি।’

চারুকলা অনুষদের সবুজ আঙিনায় রফিকুন নবীর ছয় দশকের পথচলা। প্রথমে অধ্যয়ন, তারপর অধ্যাপনা।
সৃষ্টিশীল জীবনের বহু ঘটনার সাক্ষী এই প্রাঙ্গণ। মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) সেখানেই তাঁকে মধ্যমণি করে জড়ো হলেন দেশের শিল্প-সংস্কৃতি জগতের মানুষেরা। সহকর্মী, সহযোদ্ধা, বন্ধু, ছাত্র, ভক্ত-অনুরাগীদের ফুল ও উপহারে উদযাপিত হলো তাঁর আশিতম জন্মবার্ষিকী। কবি ও আবৃত্তিকাররা কবিতায়, সংগীত ও নৃত্যশিল্পীরা নাচেগানে মাতিয়ে রাখলেন বকুলতলা। বিকেল ৩টায় শুরু হওয়া আয়োজন গড়াল রাত অবধি।

এই আয়োজন শুরু হয় বিকেল ৩টায় জয়নুল গ্যালারিতে রফিকুন নবীর শিল্পকর্মের সপ্তাহব্যাপী বিশেষ প্রদর্শনীর উদ্বোধন দিয়ে। এই প্রদর্শনীটি তাঁর জীবনব্যাপী সম্পাদিত বিচিত্র ধরনের সৃজনকর্মের নিদর্শন নিয়ে। এতে রয়েছে টোকাইসহ অন্যান্য কার্টুন, পোস্টার, পত্রিকা, বইয়ের প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণ ইত্যাদি। প্রদর্শনীটি চলবে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

রফিকুন নবীর ৮০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে চলতি মাসে এই নিয়ে মোট তিনটি প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হলো। তার মধ্যে দুটির উদ্বোধন করা হয় গত ৫ নভেম্বর। একটি জাতীয় জাদুঘরে অনুষ্ঠিত তাঁর জীবনভর আঁকা চিত্রের প্রদর্শনী; অন্যটি ধানমণ্ডির গ্যালারি চিত্রকে অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিককালে আঁকা চিত্রের প্রদর্শনী। এই দুটি প্রদর্শনী ছিল বিভিন্ন মাধ্যমে আঁকা তাঁর চিত্রকর্ম নিয়ে। জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারির প্রদর্শনীটি চলবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। অন্যদিকে চিত্রকের প্রদর্শনীটি ডিসেম্বরের ৪ তারিখ পর্যন্ত চলবে।

প্রদর্শনী উদ্বোধনের পর বিকেল ৪টায় শুরু হয় আনুষ্ঠানিক আলোচনাপর্ব ও শুভেচ্ছা জ্ঞাপন। আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে শিল্প-সংস্কৃতি অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তি, সংগঠন, ভক্তরা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। কেউ কেউ অন্যান্য উপহারও শিল্পীর হাতে তুলে দেন। এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন এমিরেটাস অধ্যাপক শিল্পী হাশেম খান, এমিরেটাস অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান, এমিরেটাস অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সংস্কৃতিজন আসাদুজ্জামান নূর, রফিকুন নবীর স্ত্রী নাজমা বেগম। তাঁদের সঙ্গে পরে এসে যোগ দেন নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার।

অনুষ্ঠানে ‘উনসত্তুরে ছড়া’ নামে একটি বইয়ের নতুন সংস্করণ প্রকাশিত হয়। ১৯৬৯ সালে বর্তমান চারুকলা অনুষদ ছিল সরকারি চারু ও কারু মহাবিদ্যালয়। এর ছাত্র সংসদের নামে বেরিয়েছিল গ্রন্থটি। এটির পরিকল্পনা ও অলঙ্করণ করেছিলেন রফিকুন নবী। বর্তমান সংস্করণে তাঁর একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার সংযুক্ত করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে জার্নিম্যান বুকসের অধিকারী কবি তারিক সুজাত ‘রশিদুন নবী: শিল্পেই যার আনন্দ’ শীর্ষক একটি বই রনবীর হাতে তুলে দিয়ে তাঁকে চমকে দেন। এই বইটি রনবীর বাবা রশিদুন নবীর ওপর লেখা। দুটি গ্রন্থেরই মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিরা।

আলোচনাপর্বে শিল্পী রফিকুন নবী বলেন, জয়নুল-কামরুলদের মতো বাংলাদেশের পথিকৃৎ শিল্পীরা শুধু চিত্রসৃষ্টির মধ্যেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখেননি। বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সৌন্দর্যগত রুচির উন্নতি ঘটাতে নিজেদের সচেষ্ট রেখেছেন আজীবন।

সাধারণ মানুষের শিল্পরুচিবোধ তৈরির কাজটি তাঁকেও করতে হয়েছে জানিয়ে এ সময় তিনি বলেন, শিল্পসৃষ্টির পাশাপাশি মানুষকেও সচেতন করতে হয়েছে। এ কাজটি তারা করেছেন শিল্পের প্রতি মানুষের ভালোবাসা তৈরি করতে। শিল্পীরা যা করেন তা যেন মানুষ পছন্দ করে। সেই রুচিটা যেন তাদের হয়।

অনুষ্ঠানে অন্যান্য বক্তারা বলেন, শিল্পে নতুনতর গণভাষা দিয়েছেন রফিকুন নবী। অবিস্মরণীয় কার্টুন চরিত্র ‘টোকাই’-এর স্রষ্টা রনবী অনন্য প্রতিভায় দেশের শিল্পকলাকে ছাপিয়ে সংস্কৃতিকে ঋদ্ধ করে করেছেন। শিল্পের প্রতি এদেশের মানুষের বোধ তৈরি করেছেন। শতবছর তিনি সক্রিয় থাকবেন বলে প্রত্যাশা করেন তারা।

অনুষ্ঠানটিকে আরো বর্ণাঢ্য করে তোলা হয় সাংস্কৃতিক পর্বের মাধ্যমে। এই পর্বে বিভিন্ন পরিবেশনা নিয়ে ছিলেন ছায়ানট, উদীচী, পঞ্চভাস্কর, জলের গানের শিল্পীরা। এছাড়া অনুষ্ঠানে ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় আবৃত্তি করেন জীবনানন্দ দাশের ‘আট বছর আগের একদিন’ কবিতাটি। আশীফ এন্তাজ রবির একটি হাস্যরসাত্মক লেখা আবৃত্তি করেন শিমুল মোস্তফা। প্রজ্ঞা লাবণী আবৃত্তি করেন ভবানীপ্রসাদ মজুমদারের একটি কবিতা। রফিকুন নবীকে নিয়ে লেখা একটি ছড়া পাঠ করেন জাহিদ মোস্তফা।

১৯৪৩ সালের ২৮ নভেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জে রফিকুন নবীর জন্ম। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি একুশে পদকসহ বিভিন্ন পুরস্কার অর্জন করেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ২৩:৩৮:০৬   ১৪৬ বার পঠিত