অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী তাদের আক্রমণ আরো জোরদার করার পর মঙ্গলবার সৈন্যরা দক্ষিণ গাজা উপত্যকায় হামাস যোদ্ধাদের সাথে লড়াই করেছে।
ইসরায়েলি বাহিনীর সতর্কতা জারি, ‘ধ্বংসস্তুপে আটকে পড়া বেসামরিক নাগরিকদের জন্য আরো বেশি নারকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।’
ইসরায়েল প্রাথমিকভাবে ভূখন্ডের উত্তরে তাদের আক্রমণকে কেন্দ্রীভূত করেছিল। কিন্তু সেনাবাহিনী এখন দক্ষিণের কিছু অংশে লিফলেটও ফেলছে। সেখানকার বেসামরিক নাগরিকদের অন্যত্র পালিয়ে যেতে বলছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা এএফপি’কে জানিয়েছেন, ইসরায়েলি ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া যান এবং বুলডোজার সোমবার বেসামরিক লোকে পরিপূর্ণ দক্ষিণ গাজায় খান ইউনিস শহরের কাছে দেখা গেছে। যেখানে যুদ্ধের শুরুতে উত্তর গাজা থেকে বেসামরিক লোকেরা তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছিল।
সেনাবাহিনী সোমবার বলেছে, তারা খান ইউনিসে ‘হামাস এবং অন্যান্য সংগঠনের’ বিরুদ্ধে ‘আক্রমনাত্মক’ পদক্ষেপ নিচ্ছে। তারা সতর্ক করে বলেছে, শহরের উত্তর ও পূর্বের প্রধান সড়ক ‘একটি যুদ্ধক্ষেত্র’।
হামাস টেলিগ্রামের মাধ্যমে দাবি করেছে, তাদের যোদ্ধারা খান ইউনিসের কাছে সেনা বহনকারী দু’টি যান এবং একটি ট্যাঙ্ককে টার্গেট করে হামলা চালিয়েছে।
গাজা থেকে ইসরায়েলি ভূখন্ডের দিকে আবারও রকেট সালভো নিক্ষেপ করা হয়।
যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো সতর্ক করেছে ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে বেসামরিক লোকজন পালিয়ে যাওয়ার জন্য জায়গা ছেড়ে চলে যাচ্ছে।
ফিলিস্তিনি ভূখন্ডের জন্য জাতিসংঘের মানবিক সমন্বয়কারী লিন হেস্টিংস বলেছেন। ‘গাজায় কোথাও নিরাপদ নয় এবং কোথাও যাওয়ার বাকি নেই।’
হেস্টিংস এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘সম্ভবত আরও একটি নারকীয় দৃশ্য উদ্ঘাটন হতে চলেছে, যেখানে মানবিক সহযোগিতা কার্যক্রম চালানোর সক্ষমতা থাকবে না।’
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ বলেছে, হামাসের হামলার প্রতিশোধ হিসেবে ইসরায়েল হামাসকে নির্মূল করার এবং গাজায় আটক সকল জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, যুদ্ধে ওই অঞ্চলে প্রায় ১৫,৯০০ লোক নিহত হয়েছে, যাদের প্রায় ৭০ শতাংশ নারী ও শিশু।
মিশরীয় সীমান্তের কাছে রাফাহ শহরের বাসিন্দা আবু জাহার আল-হাজ বলেছেন, তার বাড়ির কাছে একটি বিমান হামলা ‘ভূমিকম্পের মতো’ অনুভূত হয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘কংক্রিটের টুকরো আমাদের উপর পড়তে শুরু করেছে।’
আরও উত্তরে দেইর আল-বালাহতে ওয়ালা আবু লিবদা একটি হাসপাতালে আশ্রয় পেয়েছিলেন। তিনি বলেন, তার চার বছর বয়সী মেয়ে ধ্বংসস্তুপের নিচে আটকে আছে।
জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুসারে গাজার জনসংখ্যার প্রায় তিন-চতুর্থাংশ আনুমানিক ১৮ লাখ লোক বাস্তুচ্যুত। তাদের একজন আবু লিবদা বলেন, ‘আমি জানি না সে মারা গেছে নাকি বেঁচে আছে।’ ইসরায়েলি সেনাবাহিনী মঙ্গলবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে দক্ষিণ গাজায় একটি ত্রাণ গুদাম খালি করতে ২৪ ঘন্টার মধ্যে এই অঞ্চলে স্থল অভিযানের অযোগ্য করে দেওয়ার আগে অস্বীকার করেছে।
সোমবার, ডব্লিউএইচও প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রিয়াসিস এক্স-এ লিখেছেন, তার সংস্থা সেনাবাহিনীর কাছ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি পেয়েছে। সেখানে ‘আমাদের ২৪ ঘন্টার মধ্যে দক্ষিণ গাজার আমাদের চিকিৎসা গুদাম থেকে সরবরাহ সরিয়ে নিতে বলেছে।’
ইসরায়েল সোমবার বলেছে, তারা ফিলিস্তিনি বেসামরিকদের স্থায়ীভাবে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে যেতে বাধ্য করতে চাইছে না, বরং এটি আল-মাওয়াসি নামে গাজার একটি ক্ষুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে অবকাঠামো উন্নত করার জন্য দাতা গোষ্ঠীর সমর্থন চাইছে।
ইসরায়েলের সামরিক মুখপাত্র জোনাথন কনরিকাস বলেছেন, ‘আমরা বেসামরিক লোকদের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সরে যেতে বলেছি এবং আমরা গাজা উপত্যকার অভ্যন্তরে একটি মনোনীত মানবিক অঞ্চল প্রদান করেছি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসরায়েলের সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন, গাজা উপত্যকায় প্রতিটি মৃত হামাস যোদ্ধার জন্য প্রায় দুইজন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে।
একজন কর্মকর্তা বলেন, যুদ্ধের আসন্ন পর্বে, ‘আশা করি এটা (অনুপাত) অনেক কম হবে।’
কর্মকর্তারা বলেছেন, সেই লক্ষে সেনাবাহিনী গাজা উপত্যকার অভ্যন্তরে জনসংখ্যার গতিবিধি ট্র্যাক করতে এবং সরিয়ে নেওয়ার আদেশ জারি করতে উচ্চ প্রযুক্তির ম্যাপিং সফ্টওয়্যার ব্যবহার করছে।
এই সিস্টেমটি মোবাইল ফোন এবং অন্যান্য সংকেত, আকাশ থেকে নজরদারি এবং স্থানীয় উৎস থেকে শব্দ, সেই সাথে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে সমগ্র অঞ্চল জুড়ে জনসংখ্যার ঘনত্ব দেখানো একটি ক্রমাগত আপডেট হওয়া মানচিত্র বজায় রাখার জন্য অন্তর্ভুক্ত করেছে।
কিন্তু জাতিসংঘের মানবিক কার্যালয় ওসিএইচএ এমন একটি এলাকায় যেখানে টেলিকমিউনিকেশন এবং বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন সেখানে এই ধরনের একটি টুলের উপযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
ফিলিস্তিনি টেলিকমিউনিকেশন ফার্ম প্যাল্টেল জানিয়েছে, সোমবার, ‘ইসরায়েলি দিক থেকে প্রধান ফাইবার রুট বন্ধ করার কারণে’ গাজা জুড়ে সমস্ত মোবাইল এবং টেলিফোন পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
মঙ্গলবার, গ্লোবাল নেটওয়ার্ক মনিটর নেটব্লকস নিশ্চিত করেছে, গাজার বাসিন্দাদের ‘যোগাযোগ নেটওয়ার্ক সম্পূর্ণ ক্ষতির’ সম্মুখীন হচ্ছে।
কাতারের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি গত শুক্রবার ভেঙ্গে যাওয়ার পর সর্বশেষ এই লড়াইটি শুরু হয়। ফিলিস্তিনি বন্দীদের বিনিময়ে ইসরায়েলি এবং অন্যান্য জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মতে, গাজায় এখনও অন্তত ১৩৭ জন জিম্মি আটক রয়েছে। তবে স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে সম্মত না হওয়াা পর্যন্ত হামাস আরও মুক্তির কথা অস্বীকার করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:০১:০৫ ৭৬ বার পঠিত