মঙ্গলবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৩

৭১ সালে চার কোম্পানির সমন্বয়ে হানাদার মুক্ত হয় সরিষাবাড়ী

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » ৭১ সালে চার কোম্পানির সমন্বয়ে হানাদার মুক্ত হয় সরিষাবাড়ী
মঙ্গলবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৩



৭১ সালে চার কোম্পানির সমন্বয়ে হানাদার মুক্ত হয় সরিষাবাড়ী

জামালপুর প্রতিনিধি : মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মিত্রবাহিনীর সহায়তায় বীর মুক্তিযোদ্ধারা ১২ই ডিসেম্বর এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাত থেকে তৎকালীন জামালপুর মহকুমা সরিষাবাড়ী উপজেলা শত্রুমুক্ত করে ছিলেন। সেই হতে এই দিনটি হানাদার মুক্ত দিবস হিসেবে পালিত হয়। যার ব্যতিক্রম এবারও ঘটেনি। যথাযোগ্য মর্যাদায় জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে হানাদার মুক্ত দিবস পালিত হয়েছে।

মঙ্গলবার(১২ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আয়োজনে বাউসী মুক্তিযোদ্ধা স্মরণিতে এবং উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ প্রাঙ্গনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এরপর রেলি শেষে উপজেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এতে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার এবং অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রতিনিধি বীর মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমান লুলু।

এসময় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাবেক স্বাস্থ্য ও তথ্য প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব ডা. মুরাদ হাসান এমপি এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা গিয়াস উদ্দিন পাঠান, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক আব্দুল আজিজ প্রমুখ।

এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ ও সন্তান কমান্ডের নেতৃবৃন্দ সহ নানা পেশাজীবী মানুষ এসময় উপস্থিত ছিলেন।

সরিষাবাড়ী হানাদার মুক্ত দিবস সম্পর্কে বক্তারা স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ১১নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন কর্নেল তাহের এবং সাব সেক্টর ও সেক্টর হেড কোয়াটার ক্লোজ করার পর সেকেন্ড সেক্টর কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার এম.হামিদুল্লাহ খান কমান্ডারের অধীনে সুবেদার নূরুল ইসলামকে সরিষাবাড়ী ঘাঁটি তৈরির নির্দেশ দেন।

সেই নির্দেশনা মোতাবেক নূরুল কোম্পানি ও নাজিম কোম্পানির মুক্তিযোদ্ধারা সন্ধ্যায় বর্তমান সাতপোয়া ইউনিয়নের চর জামিরা গ্রামে এসে ঘাঁটি তৈরি করেন। এর পরের দিন পূর্ব হতে অবস্থানরত রশিদ কোম্পা‍নি,লুৎফর রহমান লোদা কোম্পানি, ফজলুর রহমান কোম্পানির যোদ্ধ‍ারা একত্রিত হয়ে পার্শ্ববর্তী এলাকার রাজাকার ও আলবদরদের অস্ত্রসহ আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

এরপর ৮ ডিসেম্বর যুদ্ধকালীন কমান্ডার নূরুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধু পার্লামেন্টের এমপি মুক্তিযোদ্ধের অন্যতম সংগঠক আ.মালেক, ইউপি চেয়ারম্যান আ.মজিদের নেতৃত্বে সরিষাবাড়ীতে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।

এরপর ১১ ডিসেম্বর রাতে নাজিম কোম্পানি, রশিদ কোম্পানি,নূরুল কোম্পানি,আনিস কোম্পানি, লুৎফর কোম্পানি ও ফজলু কোম্পানির মুক্তিযোদ্ধারা মিত্রবাহিনীর সহায়তায় আওনা ইউনিয়নের জগন্নাথগঞ্জ ঘাটে যৌথ অভিযান চালায়।

সারারাত অভিযান ও সম্মুখযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা পাকসেনাদের কাবু করে ফেললে ১২ ডিসেম্বর ভোরে মিত্রবাহিনীর কাছে পাকসেনারা আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণ করে।

পরে এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সহায়তায় মুক্তিযোদ্ধারা ঐতিহাসিক গণময়দানে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মরহুম অ্যাডভোকেট মতিয়র রহমান এর পরামর্শক্রমে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক।

এ সময় সরিষাবাড়ীর আকাশ-বাতাসে ধ্বনিত হয় বিজয়ের গান ও মুক্তিকামী মানুষের জয় উল্লাস। সেই হতেই ১২ই ডিসেম্বর পালিত হয়ে আসছে সরিষাবাড়ীতে হানাদার মুক্ত দিবস।

বাংলাদেশ সময়: ২১:২৮:১১   ১৭৩ বার পঠিত