রোববার এ্যানফিল্ডে লিভারপুলের সাফল্য রুখে দিয়েছে ধুকতে থাকা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। গতকাল ইউনাইটেডের সাথে গোলশুন্য ড্র করে পয়েন্ট হারানোর পাশাপাশি লিগের শীর্ষস্থানও হারিয়েছে লিভারপুল। এদিকে ব্রাইটনকে ২-০ গোলে হারিয়ে প্রিমিয়ার লিগে লিভারপুলকে হটিয়ে টেবিলের শীর্ষে উঠে এসেছে আর্সেনাল।
জিটেক কমিউনিটি স্টেডিয়ামে আগের দুই ম্যাচের জায়ান্ট কিলার এ্যাস্টন ভিলা ২-১ গোলে স্বাগতিক ব্রেন্টফোর্ডকে পরাজিত করেছে। ম্যানচেস্টার সিটি, আর্সেনালের পর এবার পিছিয়ে পড়েও উত্তেজনাকর ম্যাচটিতে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ভিলা। উল্ফসকে ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত করে জয়ের ধারায় ফিরেছে ওয়েস্ট হ্যাম।
চির প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে জার্গেন ক্লপের দল সুস্পষ্ট ফেবারিট হিসেবেই কাল মাঠে নেমেছিল। বিশেষ করে এবারের মৌসুমে সব ধরনের প্রতিযোগিতায় ঘরের মাঠে ১১ ম্যাচে ১১ জয়ের রেকর্ডটি লিভারপুলের সামনে ছিল। লিভারপুল আধিপত্য দেখিয়েছে। ৭০ শতাংশ পজিশন তাদের দখলেই ছিল, ইউনাইটেডের ছয়টি শটের বিপরীতে তারা টার্গেটে নিয়েছে ৩৪টি শট। কিন্তু তারপরও ইউনাইটেডের ইস্পাত কঠিন রক্ষনভাগকে ভাঙ্গতে পারেনি।
এই ড্রয়ে আর্সেনালের থেকে এক পয়েন্ট পিছিয়ে টেবিলের দ্বিতীয় স্থান নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে অল রেডসদের।
এটি ছিল ইউনাইটেড ম্যানেজার এরিক টেন হাগের একটি মানসিক বিজয়। গত মৌসুমে এই এ্যানফিল্ডে তার দল ৭-০ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছিল। একইসাথে এই মৌসুমে ২৪ ম্যাচে ১২ পরাজয় সঙ্গী করে লিভারপুলের মুখোমুখি হয়েছিল টেন হাগের দল। অধিনায়ক ব্রুনো ফার্নান্দেস নিষেধাজ্ঞার কারনে খেলতে পারেননি। ফর্মহীনতায় থাকা মার্কাস রাশফোর্ড আরো একবার ছিলেন বদলী বেঞ্চে। গত সপ্তাহে বোর্নমাউথের কাছে ঘরের মাঠে বড় ব্যবধানে পরাজয়ের পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে বিদায়, এসবই ইউনাইটেডের আত্মবিশ^াসে ফাটল ধরিয়েছিল। ইউনাইটেড গোলরক্ষক আন্দ্রে ওনানা পোস্টের খুব কাছে থেকে ভার্জিল ফন ডিকের হেড রুখে দেন। রাসমাস হোলান্ডের শট এরপর রুখে দেন লিভারপুল গোলরক্ষক এ্যালিসন বেকার। ফন ডিক বলেছেন লিভারপুল এই ফলাফলে খুবই হতাশ। তার বিশ^াস সবদিক থেকে আজকের ম্যাচে লিভারপুলই এগিয়ে ছিল, ‘সবাই যদি আজকের ম্যাচের দিকে তাকায় তবে সবকিছু স্পষ্ট হয়ে যাবে। বলের পজিশন আমাদের কাছে বেশী ছিল, যে কারনে সুযোগও তৈরী হয়েছে। অবশ্যই আমরা প্রতিটি ম্যাচে জয়ের লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নামি। আমাদের কিছু সঠিক সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রে ভুল ছিল।’
গত মৌসুমে লিগ রানার্স-আপ মিকেল আর্তেতার আর্সেনাল এমিরেটস স্টেডিয়ামে পুরোপুরি আধিপত্য দেখিয়ে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে। শুরুতেই বেশ কিছু সুযোগ নষ্ট করলেও শেষ পর্যন্ত পয়েন্ট হারায়নি গানার্সরা। ৫৩ মিনিটে ব্রাইটন ডিফেন্ডার জন পল ফন হেকে কর্ণার থেকে একটি বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে হেড দেন। কিন্তু সেই বল গাব্রিয়েল জেসুসকে গোলের পথ করে দেয়। ফাঁকা নেটে হেডের সাহায্যে বল জালে জড়ান জেসুস। ম্যাচের একেবাওে শেষভাগে কেই হাভার্টজ গানার্সদের ব্যবধান দ্বিগুন করার পাশাপাশি দলের জয় নিশ্চিত করেন। এডি এনকেইটার পাসে গোলরকষক বার্ট ভারব্রাগেনকে পরাস্ত করতে ভুল করেননি হাভার্টজ।
ম্যাচ শেষে বিবিসিকে আর্তেতা বলেছেন, ‘অসাধারণ পারফরমেন্স। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা বেশ উপভোগ্য ছিল। দারুন একটি দলের বিপক্ষে এই ধরনের পারফরমেন্স সত্যিকার অর্থেই আত্মবিশ^াস যোগাবে। এমনকি হাফটাইমেও স্কোরলাইন দেখে বোঝা যায়নি কি হতে যাচ্ছে। এই ম্যাচে জয়টা আমাদের প্রাপ্য ছিল।’
লন্ডনের আরেক প্রান্তে উনাই এমেরির ভিলা বিরতির সময় কিন লুইস পটারের গোলে পিছিয়ে পড়ার পর শেষ পর্যন্ত কোন অঘটন ঘটতে দেয়নি। ৭১ মিনিটে ব্রেন্টফোর্ডে বেন মি লাল কার্ড দেখে মাঠত্যাগ করলে ১০ জন নিয়ে প্রতিরোধ করতে হয়েছে সফরকারীদের। ৬ মিনিট পর লিও বেইলির ক্রসে এ্যালেক্স মোরেনো ভিলার হয়ে সমতা ফেরান। ম্যাচ শেষের পাঁচ মিনিট আগে কর্ণার থেকে বুবাকার কামারার ফ্লিকে ওলি ওয়াটকিন্স ভিলাকে জয়সূচক গোল উপহার দেন। ইনজুরি টাইমে কামারা লাল কার্ড দেখে মাঠ ত্যাগ করেন।
এনিয়ে ১৭ ম্যাচে ৩৮ পয়েন্ট সংগ্রহ করেছে ভিলা।
লন্ডন স্টেডিয়ামে মোহাম্মদ কুডুসের জোড়া গোলে উল্ফসেক ৩-০ গোলে পরাজিত করেছে ওয়েস্ট হ্যাম। ম্যাচে তিনটি এ্যাসিস্টই করেছেন লুকাস পাকুয়েটা। ঘানার এই ফরোয়ার্ড ২২ মিনিটে কাউন্টার এ্যাটাক থেকে জোড়ালো শটে হ্যামার্সদের এগিয়ে দেন। ৩২ মিনিটে আবারো পাকুয়েটার এ্যাসিস্টে ব্যবধান দ্বিগুন করেন কুডুস। ৭৪ মিনিটে জার্ড বোয়েন দলের হয়ে তৃতীয় গোল করেন। এর আগে বোয়েনের একটি শট পোস্টে লেগে ফেরত আসে। পাবলো সারাবিয়া উল্ফসের হয়ে এক গোল পরিশোধ করেছিলেন। কিন্তু অল্পের জন্য অফসাইডের কারনে গোলটি বাতিল হয়ে যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:০৯:২৯ ৯৫ বার পঠিত