ঢাকা-কক্সবাজার রুটে কক্সবাজার এক্সপ্রেসের পর চালু হয়েছে দ্বিতীয় ট্রেন ‘পর্যটক এক্সপ্রেস’। এবার এই দুটি ট্রেন তাল মিলিয়ে যাত্রীদের চাহিদা বিবেচনা করে ফেব্রুয়ারি মাসে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটেও চালু হচ্ছে কমিউটার ট্রেন। নব-নির্মিত এই রেলপথে প্রতিদিনই দুটি কমিউটার ট্রেন চলাচল করবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন নব-নির্মিত দোহাজারি-কক্সবাজার রেলপথ ও আইকনিক রেলস্টেশন। এরপর পহেলা ডিসেম্বর ঢাকা-কক্সবাজার রুটে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রা করে প্রথম ট্রেন ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’। কক্সবাজার পর্যটন নগরী হওয়ায় ঢাকা-কক্সবাজার রুটে যাত্রীদের চাহিদা বাড়ে কয়েকগুণে। তাই একমাস পরই ১০ জানুয়ারি এই রুটে যুক্ত হয়েছে আরেকটি ট্রেন ‘পর্যটক এক্সপ্রেস’।
কক্সবাজার আইকনিক স্টেশনের মাস্টার মো. গোলাম রব্বানী বলেন, পর্যটক এক্সপ্রেস ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে সকাল সোয়া ৬টায় ছাড়ে। আর ট্রেনটি বেলা ৩টা ২৫ মিনিটে কক্সবাজার এসে পৌঁছায়। যাত্রী চাহিদার কথা বিবেচনা করে ‘পর্যটক এক্সপ্রেস’ ও কক্সবাজার এখন থেকে দুটি বাণিজ্যিক ট্রেন ঢাকা-কক্সবাজার পথে নিয়মিত চলবে।
পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনটিতে যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ৭৮৫ জন। এতে খাবারের বগিসহ বগির সংখ্যা ১৬টি। রাত সাড়ে ৮টায় একই সংখ্যক যাত্রী নিয়ে কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবে ট্রেনটি। আর ট্রেনটি প্রতি রোববার চলাচল বন্ধ থাকবে।
মো. গোলাম রব্বানী বলেন, নতুন চালু হওয়া ‘পর্যটক এক্সপ্রেস’ এর যাত্রীদের জন্য ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ এর মতই। এতে ঢাকা থেকে কক্সবাজারের নন-এসি শ্রেণির ‘শোভন চেয়ার’ আসনের ভাড়া ৬৯৫ টাকা এবং এসি শ্রেণির ‘স্নিগ্ধা’ আসনের ভ্যাটসহ ভাড়া এক হাজার ৩২৫ টাকা। ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশন থেকেও একই ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে।
সপ্তাহে ৬দিন, সকাল ও রাতে কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছে কক্সবাজার এক্সপ্রেস ও পর্যটক এক্সপ্রেস। আর সকাল ও বিকেলে পুনরায় যাত্রী নিয়ে ট্রেন দুটি ফিরছে কক্সবাজার। তবে, ট্রেন দুটি সেবা নিয়ে সন্তুষ্টির শেষ নেই যাত্রীদের। তারা বলছেন, ট্রেনই মিলছে বিমানের সেবা।
ঢাকা থেকে আসা যাত্রী রোকেয়া বেগম বলেন, এসি শ্রেণির স্নিগ্ধা আসনে করে ঢাকা থেকে কক্সবাজারে এসেছি। ট্রেনটিতে যে সুযোগ-সুবিধা পেয়েছি তাতে মনে হয়েছে বিমানেও একই সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়।
ঢাকার আরেক যাত্রী রিয়াজুল করিম বলেন, আমরা তো ঢাকা শহরে থাকি। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য সবসময় দেখতে পায় না। কিন্তু পর্যটক এক্সপ্রেসে চড়ে দু’পাশের অপরূপ প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করেছি। মনে হচ্ছিল, রাস্তা যেন শেষই না হয়। সত্যিই অনেক ভাল লেগেছে এই ট্রেন চড়ে।
আরেক যাত্রী সিফাত হায়দার বলেন, ঢাকা থেকে কক্সবাজার আসতে বাসে করে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা লেগে যায়। পথে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। কিন্তু ট্রেনে সেই দুর্ভোগ পোহাতে হয়নি, মাত্র ৮ ঘণ্টায় কক্সবাজার পৌঁছে গেছি। আর ট্রেন ভেতরে সুযোগ-সুবিধা আমার কাছে বিশ^মানের মনে হয়েছে।
চট্টগ্রামের দোহাজারি থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নির্মিত হয়েছে ১০১ কিলোমিটার রেলপথ। যা গেল বছরের ১১ নভেম্বর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পহেলা ডিসেম্বর ঢাকা-কক্সবাজার রুটে সরাসরি ট্রেন চালু হলেও এখনো চালু হয়নি কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটে ট্রেন চলাচল। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটেও ট্রেন চালু করার দাবি কক্সবাজারবাসীর।
আরাফাতুল ইসলাম বলেন, দোহাজারি-কক্সবাজার নতুন রেলপথ হয়েছে কিন্তু এই এলাকার মানুষের জন্য কোন উপকারে আসেনি এখনো। আমাদের দাবি, কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটে চলাচলের জন্য নতুন একটি ট্রেন দেয়।
হুয়ামুন সিকদার বলেন, অপেক্ষায় আছি, কখন কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হবে। আর এই রেলপথে ট্রেন চালু হলে ভাড়া কম হবে।
তবে যাত্রীদের চাহিদা বিবেচনা করে আগামী মাস থেকে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটেও কমিউটার ট্রেন চালু হচ্ছে বলে জানিয়েছে আইকনিক রেলস্টেশন মাস্টার মো. গোলাম রব্বানী।
তিনি বলেন, স্থানীয়দের চাহিদা রয়েছে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটে যেন ট্রেন চলাচল শুরু হয়। সেক্ষেত্রে রেল কর্তৃপক্ষ আগামী মাসেই এই রুটে কমিউটার ট্রেন চালু করার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে স্থানীয় যাত্রীদের চাহিদা পূরণ হবে। কক্সবাজার থেকে রামু, ঈদগাঁও, ডুলহাজারা, চকরিয়া, হারবাং, দোহাজারিসহ বিভিন্ন স্টেশনে হয়ে চট্টগ্রাম যেতে পারবে আর কক্সবাজার আসতে পারবে। কমিউটার ট্রেনটি প্রতিদিনই দু’বার করে যাতায়াত করবে।
প্রসঙ্গত, ঢাকা-কক্সবাজার রুটে এখন প্রতিদিন দুটি ট্রেন করে যাতায়াত করছেন ৩ হাজার ১৩০ জন যাত্রী।
বাংলাদেশ সময়: ১৪:৪৫:০৯ ১০৩ বার পঠিত