জামালপুর প্রতিনিধি : বাংলাদেশে মিষ্টি আলু একটি অবহেলিত ফসল হলেও জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে প্রতিবছরই চাষ করা হচ্ছে মিষ্টি আলু। এবারো মিষ্টি আলুর বাম্পার ফলন হওয়ায় এবং পাশাপাশি বাজার দর ভালো পাওয়ায় কৃষকেরা দারুণ খুশি।
বুধবার(২৪ জানুয়ারি) সকালে উপজেলার কামরাবাদ ও ভাটারা ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে মিষ্টি আলু সবুজ পাতায় ছেয়ে আছে ফসলের মাঠ।পুরুষেরা কোদাল দিয়ে মাটি কুপিয়ে আগলা করছে আর নারী ও শিশুরা আলু কুড়িয়ে এক জায়গায় স্তুপ করছে। দিনের শেষান্তে মিষ্টি আলু ক্ষেতে বসেই মেপে বস্তাবন্দি করছে কৃষকরা। কেউ আবার আলুর লতা গবাদি পশুর জন্য যত্ন করে ঘোড়ার গাড়ি করে নিয়ে যাচ্ছে বাড়ী। সবমিলিয়ে কৃষকদের এই অক্লান্ত পরিশ্রম যেন উৎসবে পরিণত হয়েছে।
এছাড়াও দেখা গেছে, বিভিন্ন এলাকা হতে আগত বেপারী ক্ষেত থেকেই কিনে নিয়ে যাচ্ছে মিষ্টি আলু। বেপারী জানায়, স্থানীয় বাজার গুলোর পাশাপাশি এসব মিষ্টি আলু ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাচ্ছে। মিষ্টি আলু এখন অন্যান্য ফসলের মতোই একটি অর্থকরী ফসল। এটি স্বল্প খরচে সবচেয়ে বেশি লাভজনক একটি ফসল বলে কৃষকেরা জানান।
মিষ্টি আলু চাষ সম্পর্কে কৃষক আব্দুল কাদের বলেন,অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে চারা রোপন শুরু হয় এবং ফাল্গুন মাসের তৃতীয় সপ্তাহে থেকে মিষ্টি আলু মাটির নিচে পরিপক্ক হয়ে উঠে এবং উপশী জাতের মিষ্টি আলু ৯০ দিনেই তোলা যায়। আর স্থানীয় উন্নত জাতের মিষ্টি আলু পরিপক্ক হতে প্রায় ৪ মাস সময় লাগে। আর এ আলু তোলা হয় চৈত্র ও বৈশাখ মাসে। যারা মিষ্টি আলু তুলে বোরো ধান রোপণ করতে চান, তারা বারী-৮ জাতের মিষ্টি আলু চাষ করেন। আর যারা স্থানীয় উন্নত জাতের মিষ্টি আলু চাষ করেন। তারা আলু তুলে পাট চাষ করতে পারেন বলে জানান তিনি।
এছাড়াও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জামালপুরে সরিষাবাড়ী উপজেলায় মিষ্টি আলুর রাজ্য হিসেবে পরিচিত কামরাবাদ ইউনিয়নের বড়বাড়ীয়া, কৈজুরী, ধারাবর্ষা, জাফরাবাদ, কান্দারপাড়া, সৈয়দপুর, বয়সিংহ ও ভাটারা ইউনিয়নের ভাটারা, মোহনগঞ্জ, কাশারীপাড়া, পাখাডুবী, ফুলবাড়িয়া, পারপাড়া, গোপীনাথপুর, কৃষ্ণপুর, চর হরিপুর সহ কলারছড়া এলাকা।
ধারাবর্ষা এলাকার মিষ্টি আলু চাষী সোনাহার বলেন এবারের মৌসুমে ৫২ শতাংশের ১বিঘা জমিতে মিষ্টি আলু চাষ করেছি। প্রতি শতাংশে ২ মণের বেশি মিষ্টি আলুর ফলন হয়েছে। ১ বিঘা জমিতে মিষ্টি আলু পেয়েছি একশো মণের উপরে। প্রতি মণ মিষ্টি আলু পাইকারি বিক্রি করছি ১০০০ টাকা দরে। ১বিঘা জমি চাষ করতে খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। বিক্রি করেছি ১ লাখ ২ হাজার টাকা। খরচ বাদে তার লাভ হয় ৭৭ হাজার টাকা। যা কিনা অন্য কোন ফসল করে এতো লাভ করা সম্ভব না।
কৃষক সুজা মিয়া বলেন, আমি ৩২ শতাংশ জমিতে মিষ্টি আলু চাষ করেছি। আমার খরচ হয়েছে ১২ হাজার টাকা। আজ সেই আলু ক্ষেত বিক্রি করলাম ৬৩ হাজার টাকা। আমার কোন খরচ নেই। যারা আলু কিনেছেন তারাই ক্ষেত থেকে তুলে নিয়ে যাবেন। তিনি আনন্দের সহিত আরো বলেন, মিষ্টি আলু বিক্রি নিয়ে তাদের কোনো চিন্তা ও পরিশ্রম করতে হয় না। জেলার বিভিন্ন এলাকা হতে পাইকাররা এসে জমি থেকেই মিষ্টি আলু কিনে নিয়ে যাচ্ছে। এতে করে তাদের সময় ও অর্থ দুটোই বেঁচে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
স্থানীয় এক মিষ্টি আলুর বেপারী সাইফুল্লাহ ইসলাম জানান, সরিষাবাড়ীর মিষ্টি আলুর চাহিদা ঢাকাতে অনেক বেশি। কারণ এই মিষ্টি আলু বেলে দোআঁশ মাটিতে হওয়ায় খুবই মিষ্টি হয়। তাই এলাকা থেকে ১ হাজার হতে ১১০০ টাকা মণ কিনে ঢাকায় ১৬০০ হতে ২ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি করছি। গতবারের চেয়ে এবার আলুর দাম একটু বেশি। তবুও এই মিষ্টি আলুর চাহিদা ব্যাপক। বৈশাখ মাস পর্যন্ত এ অঞ্চলে আলু পাওয়া যায়। এরপর আর পাওয়া যাবে না।
সরিষাবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ অনুপ সিংহ কালবেলা কে বলেন, এ বছর মিষ্টি আলু উৎপাদন ভালো হয়েছে। গতবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ১৫০ হেক্টর জমিতে মিষ্টি আলু বেশি চাষ হয়েছে। সরিষাবাড়ী উপজেলায় এবার মিষ্টি আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৬০ হেক্টর। কিন্তু চাষ হয়েছে ৭১০ হেক্টর। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ১৫০ হেক্টর বেশি হয়েছে। এছাড়াও বারী- ৮ জাতের মিষ্টি আলুর পাশাপাশি মুরাসাকি জাতের মিষ্টি আলু চাষ করতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
তিনি আরও বলেন, মাঠ পর্যায়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের পর্যবেক্ষণ ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মিষ্টি আলুর এ বাম্পার ফলন হয়েছে। পাশাপাশি বাজারে দাম ভালো থাকায় কৃষকেরাও অনেক খুশি। আগামী ১৫ দিনের মধ্যেই বোরো মৌসুম শুরু হবে। তাই কৃষকরা দ্রুত এই আলু তুলে ফেলছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১২:০২:৫০ ১৮৩ বার পঠিত